বিদ্যুৎ উন্নয়নে পাশে থাকছে চীন

বিদ্যুৎ খাতের উন্নয়নে বাংলাদেশের পাশে থাকছে চীন। এ খাতের ৬৫টি প্রকল্পের জন্য ৩২ দশমিক ৭২ মিলিয়ন ডলার ঋণ দিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত বিনিয়োগকারি প্রতিষ্ঠান এক্সিম ব্যাংক।

তবে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের মাধ্যমে ধাপে ধাপে এ ঋণ দেওয়ার কথা বলা হলেও সুদের হারসহ অন্যান্য শর্ত এখনো নির্ধারণ হয়নি বলে বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে।

বিদ্যুৎ খাতে সরকারের মহাপরিকল্পনা অনুযায়ী ২০৩০ সাল নাগাদ দেশে ৩৬ হাজার ৩৪ মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদন হবে। এরমধ্যে প্রতিবেশী বিভিন্ন দেশ থেকে আসবে ৩৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। আর বাকিটা কয়লা, গ্যাস, ফার্নেস ওয়েল, ডিজেল ও পানি থেকে উৎপাদন হবে। এছাড়া সঞ্চালন ব্যবস্থা উন্নতকরণ, প্রি-পেমেন্ট মিটারিং ব্যবস্থার মতো প্রকল্পও রয়েছে সরকারের হাতে।

বিদ্যুৎ বিভাগের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, সরকারের মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য প্রায় ৪৮ দশমিক ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার প্রয়োজন। এ লক্ষে বিদেশি দাতা সংস্থা এবং বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাংকের কাছে বিনিয়োগ প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করেছে সরকার। এরমধ্যে চীনের এক্সিম ব্যাংক বিনিয়োগে আগ্রহ দেখিয়েছে। ইতিমধ্যে ওই ব্যাংকের প্রতিনিধিদল বাংলাদেশে এসে বিদ্যুৎ জ্বালানি এবং খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের ঊধ্বর্তন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকও করেছে। তারা বিনিয়োগ প্রস্তাব এবং প্রকল্পগুলো নিয়েও বিস্তারিত আলোচনা করেছে।

চীনের এক্সিম ব্যাংক থেকে এ বিনিয়োগ পাওয়া গেলে তা দেশের ইতিহাসে এককভাবে সর্বোচ্চ অর্থ সহায়তা হবে বলে জানান ওই কর্মকর্তা।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) সচিব মো. আজিজুল ইসলাম বলেন, চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক এক্সিম ব্যাংক আমাদের বিদ্যুৎ খাতে ৩২ দশমিক ৭২ মিলিয়ন ডলার ঋণ দিতে আগ্রহ প্রকাশ করছে। এ বিষয়ে তাদের সঙ্গে একাধিক আলোচনাও হয়েছে। এ ঋণের ব্যাপারে আমরা আশাবাদী।

জানা গেছে, চীনের এক্সিম ব্যাংকের কাছে সরকার যে প্রস্তাব দিয়েছে তাতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) ১৪ টি প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য তিন হাজার ৬৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার প্রয়োজন হবে। এছাড়া নর্থ ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানির চার প্রকল্প বাস্তবায়নে এক হাজার ৭০০ মিলিয়ন ডলার, ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (ডিপিডিসি) একটি প্রকল্পে এক হাজার ৯৯৯ মিলিয়ন ডলার, পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের তিন প্রকল্পে নয় হাজার ২৬৫ মিলিয়ন ডলার, ইলেক্ট্রিসিটি জেনারেশন কোম্পানির (ইজিসিবি) চার প্রকল্পে সাত হাজার ৯৪ মিলিয়ন ডলার, পাওয়ার গ্রিড কোম্পানির (পিজিসিবি) ২২ প্রকল্পে তিন হাজার ৮৬৯ মিলিয়ন ডলার, ওয়েস্টজোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (ওজোপাডিকো) একটি প্রকল্পে ১৩০ মিলিয়ন ডলার, আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন কোম্পানির (এপিএসসিএল) চার প্রকল্পে চার হাজার ৭০ মিলিয়ন ডলার, রুরাল পাওয়ার কোম্পানির (আরপিসিএল) চার প্রকল্পে এক হাজার ৩১০ মিলিয়ন ডলার এবং ঢাকা ইলেক্ট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানির (ডেসকো) আট প্রকল্পে ২১৯ মিলিয়ন ডলার প্রয়োজন হবে।

এদিকে পটুয়াখালীর পায়রা বন্দরের কাছে এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতার কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করবে নর্থ ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি এবং চায়না ন্যাশনাল মেশিনারি ইমপোর্ট এ্যান্ড এক্সপোর্ট কর্পোরেশন (সিএমসি)। প্রায় দেড় বিলিয়ন ডলারের এ প্রকল্পটিতে যৌথভাবে বিনিয়োগ করবে বাংলাদেশ এবং চীন ।

এ প্রসঙ্গে নর্থ ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক খোরশেদ আলম বুধবার বলেন, ` পটুয়াখালীর পায়রা বন্দরের কাছে এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতার কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের অর্থায়নের বিষয়ে আমরা সরকারের মাধ্যমে চীনের এক্সিম ব্যাংকের কাছে প্রস্তাব পাঠিয়েছি। তারা বিষয়টি গুরত্বের সঙ্গে দেখছে। তবে এখনও ঋণের বিষয়টি চূড়ান্ত হয়নি।’

ঋণের সুদের হার অবশ্যই শতকরা দুই ভাগের নিচে থাকবে উল্লেখ করে খোরশেদ আলম বলেন, বিদ্যুৎ খাতের অন্য প্রকল্পগুলোতেও তাদের আগ্রহ রয়েছে। তারা এসব প্রকল্পে ধাপে ধাপে ঋণ দেবে।



মন্তব্য চালু নেই