বিদেশে নারীকর্মী পরিবারসহ পাঠানোর চিন্তাভাবনা
বিদেশে নারীকর্মীর ক্ষেত্রে এবার পরিবারসহ পাঠানোর চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। বিদেশে নারীকর্মীদের ওপর নানা নিগ্রহ ও নির্যাতনের শিকার হওয়ার অভিযোগ রয়েছে। বহু নারী নির্যাতিত হয়ে দেশে ফিরে আসতে বাধ্য হয়েছে। এসব ঘটনা রোধ করার দাবি তুলেছে বেশ কয়েকটি মানবাধিকার সংগঠন। এই দাবির প্রেক্ষিতে কোন নারীকর্মী যাতে নির্যাতনের শিকার না হন সে জন্য নানা উদ্যোগ নিয়েছে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়।
তবে এটা কতটা সফল হবে তা নিয়ে খোদ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের মধ্যেই ভিন্নমত রয়েছে। যেসব দেশ বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিয়োগ করে সেসব দেশ যদি এ প্রস্তাবে রাজি থাকে তাহলেই কেবল এ উদ্যোগ সফল হবে। তা না হলে উদ্যোগটি আলোচনার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থেকে যাবে বলে মনে করছেন কর্মকর্তারা।
সূত্র জানায়, বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশে গৃহকর্মী হিসেবে মহিলাদের নিয়োগ দেয়ার চুক্তি হয়েছে। সৌদি আরব প্রতিবছর এক লাখ ২০ হাজার গৃহকর্মী নিয়োগ করবে। এর মধ্যে নারীকর্মীর সংখ্যাই বেশি থাকবে। মধ্যপ্রাচ্যের বেশ কয়েকটি দেশে নারীকর্মীদের নিগ্রহ হওয়ার অনেক নজির রয়েছে। এটা যাতে না ঘটে তার জন্য সঙ্গে যদি স্বামী থাকেন তাহলে মহিলাকর্মীরা অনেকাংশে নিরাপদ হবেন। তাদের সন্তান থাকলেও সেখানে নিয়ে যেতে পারবেন। এমন একটি প্রস্তাব তৈরি করতে যাচ্ছে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। এখন জনশক্তি আমদানিকারক দেশগুলো এ প্রস্তাব মানবে কী মানবে না, সেটা অনিশ্চিত। তবু নারীকর্মীদের নিরাপদ রাখার জন্য এ উদ্যোগ হাতে নেয়া হয়েছে।
বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনের দাবির প্রেক্ষিতে মন্ত্রণালয় নারীকর্মীদের নিরাপত্তার বিষয়টি চিন্তা করছে। শুধু গৃহকর্মী হিসেবে নয়, নার্স হিসেবেও বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নারীরা নিয়োগ পাচ্ছেন। তাদের বেলায়ও একই রকম প্রস্তাব রাখবে বলে মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন।
মন্ত্রণালয় সূত্রমতে, মালয়েশিয়ায় সরকারীভাবে কর্মী নিয়োগ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে হংকং, সিঙ্গাপুর, মরিশাস, জর্দান, সৌদি আরবসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নারীকর্মী পাঠানোর রেজিস্ট্রেশন বা নাম নিবন্ধন চলছে। বিদেশে চাকরির ক্ষেত্রে নার্সিং ডিপ্লোমা ডিগ্রীধারীদের অগ্রাধিকার রয়েছে।
জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি) জানিয়েছে, অনলাইনে হংকং, সিঙ্গাপুর, জর্দানসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে গৃহকর্মী, নার্স, কেয়ার গিভার (বাচ্চা ও অসুস্থ মানুষকে দেখাশোনার কাজ), গার্মেন্টকর্মী, বিক্রয়কর্মী, কৃষিকর্মীসহ বিভিন্ন পদে কর্মী পাঠানোর সুযোগ রয়েছে। সৌদি আরবসহ অন্যান্য দেশে চাকরি করতে ইচ্ছুক নারীকর্মীদের নিবন্ধন প্রতিদিন সকাল নয়টায় শুরু হয়ে শেষ হবে বিকেল পাঁচটায়। ঢাকা বিভাগের নারীকর্মীদের নাম নিবন্ধন হয়েছে। এরপর বিভিন্ন বিভাগে ভিন্ন ভিন্ন সময়সীমা বেঁধে দেয়া হয়েছে। এ সময়ের মধ্যে নিবন্ধন করতে হবে। এরপর আর কোন সময় বাড়ানো হবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে বিএমইটি। সৌদিতে কর্মী নিয়োগের চুক্তি হওয়ার পর নিবন্ধন নিয়ে সারাদেশে হট্টগোল হওয়ার কারণে এ সময়সীমা বেঁধে দেয়া হয়।
সূত্রমতে, ৫ থেকে ১১ মার্চ পর্যন্ত ঢাকা বিভাগে নিবন্ধনের কাজ হয়েছে। এবার নিবন্ধনের সময়সীমা বেঁধে দেয়ায় নিবন্ধন নিয়ে কোন প্রকার প্রশ্ন তুলতে পারেনি কেউ। নিবন্ধনের জন্য খরচ ধরা হয়েছে ৩শ’ টাকা। এই টাকার মধ্যে সরকারী ফি ২শ’ টাকা এবং নিবন্ধন ফরম পূরণ বাবদ ১শ’ টাকা। নিবন্ধন করতে লাগবে মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট অথবা জাতীয় পরিচয়পত্র। পাসপোর্ট ও জাতীয় পরিচয়পত্র না থাকলে জন্মনিবন্ধন সনদ লাগবে। জন্মনিবন্ধনে যে নাম-ঠিকানা ব্যবহার করা হয়েছে পাসপোর্টেও থাকতে হবে হুবহু সেই নাম-ঠিকানা। শিক্ষাগত যোগ্যতার একসেট ফটোকপি সনদপত্র (যদি থাকে), প্রশিক্ষণের সনদ (যদি থাকে), অভিজ্ঞতার সনদ (যদি থাকে) লাগবে।
এছাড়া সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, পৌর মেয়র অথবা সিটি কর্পোরেশনের ওয়ার্ড কাউন্সিলরের দেয়া কর্মীর চারিত্রিক সনদপত্র জমা দিতে হবে। প্রতিদিন সকাল নয়টা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত এই নিবন্ধন চলবে। রাজশাহী ও রংপুর বিভাগে নিবন্ধন হয়েছে গত ১২ থেকে ১৬ মার্চ। ১৭ থেকে ২৩ মার্চ চট্টগ্রাম ও সিলেট এবং ২৪ থেকে ২৮ মার্চ খুলনা ও বরিশাল বিভাগে নিবন্ধন হবে।
এছাড়াও ঢাকার বাইরে স্থানীয় সরকার বিভাগ ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের একসেস টু ইনফর্মেশন (এটুআই) প্রকল্পের যৌথ উদ্যোগে স্থাপিত দেশের প্রতিটি ইউনিয়ন, পৌরসভা ও সিটি কর্পোরেশনের নগর ডিজিটাল সেন্টার এবং জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি কার্যালয়ে নিবন্ধন করা যাবে।
প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, সৌদি আরব গমনেচ্ছু কর্মীদের নাম নিবন্ধন নিয়ে ঘুষ নেয়ার অভিযোগ ছিল। প্রবাসী কল্যাণ ভবন থেকে শুরু করে ইউনিয়ন পর্যায়ে এ ব্যবসা ছড়িয়ে পড়ে। প্রত্যেক কর্মীর নাম নিবন্ধনে এক থেকে দেড় শ’ টাকা বেশি নিয়েছে নিবন্ধন কর্মকর্তা কর্মচারী ও দালাল চক্র। এই চক্র এতটাই শক্তিশালী হয়ে উঠেছিল যে, তাদের বাড়তি টাকা না দিলে নাম নিবন্ধন করতে পারতেন না কোন কর্মী। পরে বিষয়টি কর্তৃপক্ষের নজরে এলে টাকার পরিমাণ উল্লেখ করে দেয়া হয়েছে। সৌদিতে যাওয়ার জন্য নিবন্ধন শুরু হয়েছিল গত ৯ ফেব্রুয়ারি থেকে। ইতোমধ্যে কয়েক লাখ নারী-পুরুষ নাম নিবন্ধন করেছেন। প্রত্যেক কর্মীকেই বাড়তি টাকা দিয়ে অনলাইনে নাম নিবন্ধন করতে হয়েছে।
এদিকে নারীকর্মীদের নিরাপদ রাখার জন্য বেশ কয়েকটি মানবাধিকার সংগঠন দাবি তুলেছে। তারা বলেছে, বিদেশে নারীকর্মীরা অনেক ক্ষেত্রে নির্যাতনের শিকার হন। নারীকর্মীরা যাতে নির্যাতনের শিকার না হন সে জন্য কর্মী আমদানিকারক দেশগুলোর সঙ্গে নিরাপত্তার বিষয়টি আগে নিশ্চিত করতে হবে। এটা করতে না পারলে বহু নারীকর্মী তাদের সর্বস্ব হারিয়ে দেশে ফিরবেন। সংগঠনগুলো মন্ত্রণালয়কে একটি পরামর্শও দিয়েছে। যদি কোন নারীকর্মী বিদেশ যান সঙ্গে তাঁর স্বামীকেও কর্মী হিসেবে পাঠানো যেতে পারে। যার স্বামী নেই এমন কর্মীর ক্ষেত্রে মোবাইল ফোন রাখার ব্যবস্থা করতে হবে, যাতে কোন অসুবিধায় দূতাবাসসহ দেশে আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে কথা বলতে পারেন। বিষয়টি প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছে।
মন্তব্য চালু নেই