বিদেশি বন্ধুরা পাবেন নতুন ক্রেস্ট, জানেন না মন্ত্রী

মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদানের জন্য ৩৩৮ জন বিদেশি বন্ধুকে দেয়া সম্মাননা স্মারক হিসেবে সোনার ক্রেস্ট আবারো স্ব স্ব দেশের রাষ্ট্রদূতদের মাধ্যমে দেয়ার দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। ক্রেস্টের সোনায় ভেজাল দেয়ার লজ্জাজনক অভিযোগ ওঠার পর অবশেষে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হলো।

এ সংক্রান্ত রিটের জবাব দিয়ে সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী মনজিল মোরসেদের কাছে পাঠানো জবাবে এ তথ্য জানিয়েছে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়।

অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ এই জবাব পাওয়ার কথা নিশ্চিত করেছেন। তবে নতুন করে ক্রেস্ট দেয়ার বিষয়টি অস্বীকার করছেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। মন্ত্রণালয়ের সহাকারী সচিব মো. রফিকুল ইসলাম ওই চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন বলে মনজিল মোরসেদ জানাচ্ছেন। কিন্তু রফিকুলও বিষয়টি অস্বীকার করছেন।

মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত কয়েক দফা চেষ্টা করে মন্ত্রী আ ক মোজাম্মেল হক, চিঠি প্রেরণকারী সহকারী সচিব মো. রফিকুল ইসমাল এবং সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী মনজিল মোরশেদের সঙ্গে আলাপ করে এসব জানা যায়।

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, ‘এখন পর্যন্ত মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে রাষ্ট্রদূতদের মাধ্যমে নতুন করে সম্মাননা ক্রেস্ট দেয়ার বিষয়ে কোনো ধরণের সিদ্ধান্ত হয়নি। কোন সচিব চিঠির উত্তর দিয়েছে তা আগামীকাল (বুধবার) সচিবালয়ে গিয়ে তলব করে জানবো।’

বিষয়টি এখনো তদন্তনাধীন রয়েছে। এ বিষয়ে মন্ত্রীর অনুমতি ছাড়া একজন সহকারী সচিব কীভাবে সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবীর চিঠির উত্তর দেয়, সেটিও খতিয়ে দেখার কথা বলেন মন্ত্রী।

এদিকে, মন্ত্রীর কথার সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে সহকারী সচিব রফিকুল ইসলাম জানান, ‘আমি একটি চিঠির মাধ্যমে মনজিল মোরশেদের রিটের জবাব দিয়েছি। কিন্তু সেখানে বিদেশি বন্ধুদের রাষ্ট্রদূতদের মাধ্যমে নতুন ক্রেস্ট দেয়ার বিষয়টি উল্লেখ নেই।’

তিনি আরো বলেন, ‘আমি তো ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশেই তা করেছি। আর বাকি কিছু জানার থাকলে মনজিল মোরসেদের কাছ থেকে জেনে নিন।’ তবে তিনি বলেন, ‘চিঠিতে স্বর্ণ কেলেঙ্কারির বিষয়ে গঠিত তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করা হবে কি না এমন উত্তর সুপ্রিমকোর্টের পক্ষ থেকে জানতে চাওয়া হয়। এ বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করা হবে বলে জানানো হয়।’ এর বেশি কিছু বলতে রাজি হননি রফিকুল ইসলাম।

এদিকে সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বলেন, ‘চিঠিতে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ রয়েছে যে, বিদেশি বন্ধুদের নতুন করে ক্রেস্ট দিতে রাজি হয়েছে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়।’ চিঠিটি তার কাছে রয়েছে বলেও দাবি করেন তিনি।

‘ক্রেস্টে দুর্নীতি’ নিয়ে সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী মনজিল মোরসেদের আইনি নোটিশের জবাবে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে পাঠানো ওই চিঠিতে বলা হয়, ‘বিষয়টি সংসদীয় উপ-কমিটির তদন্তাধীন। তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর সরবরাহকারী কোম্পানিকে পরিশোধিত বিল পুনরুদ্ধার এবং নতুন ক্রেস্ট তৈরি করে বিদেশে বাংলাদেশের হাইকমিশন/রাষ্ট্রদূতের মাধ্যমে বিদেশি বন্ধুদেরকে প্রদান করা ইত্যাদি বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে।’

মন্ত্রণালয়ের সহকারী সচিব মো. রফিকুল ইসলাম স্বাক্ষরিত ওই চিঠি গতকাল সোমবার মনজিল মোরসেদের চেম্বারে পৌঁছে। তবে নোটিশের জবাব না পাওয়ায় গত ১৯ মে এই আইনজীবী হাইকোর্টে এ বিষয়ে রিট করেন।

উল্লেখ্য, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে সরকার স্বাধীনতার চার দশক পূর্তি উপলক্ষে সাত পর্বে বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু স্বনামধন্য ৩৩৮ বিদেশি ব্যক্তিত্ব ও সংগঠনকে অন্যান্য উপহারসামগ্রীর সঙ্গে একটি করে ক্রেস্ট দেয়। পরে সেসব ক্রেস্টে নির্ধিারিত পরিমাণের চেয়ে কম সোনা দেয়ার বিষয়টি ধরা পড়ে।



মন্তব্য চালু নেই