বিজয় ৭১ হলে তাণ্ডবে দায়ী দুই ছাত্রলীগ নেতা : তদন্ত প্রতিবেদন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজয় ৭১ হলে সাংবাদিককে পিটুনি, হলের সিট দখল ও কক্ষ ভাঙচুরের ঘটনার প্রতিবেদন জমা দিয়েছে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি। প্রতিবেদনে এই ঘটনার জন্য হল ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে দায়ী করা হয়েছে। বলা হয়েছে, এক সপ্তাহের পরিকল্পনায় এসব ঘটনা ঘটানো হয়েছে।

গত ১৩ মার্চ রাতে হলের কক্ষ দখল, ভাঙচুর ও বিশৃঙ্খলার ঘটনা ঘটে। এ সময় মারধর করা হয় এক সাংবাদিককে। এরপর ঘটনা তদন্তে হলের আবাসিক শিক্ষক আসিফ হোসেন খানকে প্রধান করে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করে। রবিবার উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকের কাছে প্রতিবেদন জমা দেয় এই কমিটি।

তদন্ত কমিটি হলের ক্লোজসার্কিট ক্যামেরায় ধারণ করা ফুটেজ দেখে ও বিভিন্ন সংবাদপত্রে ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে যেসব ছাত্রের নাম এসেছে তাদের বক্তব্য নিয়ে ও পরে অন্য ছাত্রদের বক্তব্য নিয়েছে। তারা মোট ২২ জনের সাক্ষাৎকার নেয়।

প্রতিবেদনের একটি কপি আমাদের হাতে এসেছে । এতে বলা হয়, হল শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি ফকির রাসেল আহমেদ ও সাধারণ সম্পাদক নয়ন হাওলাদারের নির্দেশে প্রাধ্যক্ষের কক্ষ ভাঙচুর করে ইসলামিক শিক্ষা বিভাগের দ্বিতীয়বর্ষের ছাত্র মোবাশ্বির হোসাইন খান ও দর্শন বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্র মো. জর্জ। এরা দুজনই হলের অনাবাসিক ছাত্র।

তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভাঙচুরের ঘটনায় উসকানি দেওয়া ও তাদের পালিয়ে যেতে সহায়তা করেছেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের রাইব আহমেদ রিজয়, ইসলামিক শিক্ষা বিভাগের আবু ইউনুস, পালি ও বুডঢিস্ট স্টাডিজ বিভাগের আবু বকর সিদ্দিক, ট্যুরিজম বিভাগের রায়হান ইসলাম ইমন ও ভাষাবিজ্ঞানের কাজী তানভীর আহম্মেদ।

প্রতিবেদন অনুযায়ী সংবাদ সংস্থা ইউএনবির বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক ইমরান হোসেনের ওপর হামলার ঘটনায় অংশ নেয় সাতজন। তারা হলেন, ইসলামের ইতিহাসের শিপন মিয়া, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার দেওয়ান সাবাব, ইসলামিক শিক্ষার মোশারফ হোসেন, উর্দু বিভাগের সাইদুর রহমান, দর্শন বিভাগের জিহাদ, রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ইমরান ও সমাজবিজ্ঞানের শামীম।

তদন্ত প্রতিবেদনে উঠে আসে, ওইদিন রাতে হলের আসন দখলের উদ্দেশে বিজয় একাত্তর হলে ২০-২৫ জনের একটি দল বিশৃঙ্খল পরিবেশ সৃষ্টি করে। তাদের লক্ষ্য ছিল হলটির কর্তৃত্ব সম্পূর্ণ নিজের হাতে নিয়ে হলের নিয়ন্ত্রণ করা। একই সঙ্গে শান্তিপূর্ণ ও পূর্ণভাবে একাডেমিক কার্যক্রম চলতে থাকা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অপ্রীতিকর পরিবেশ তৈরি করা।

তদন্ত কর্মকর্তা ক্রিমিনোলজি বিভাগের প্রভাষক সৈয়দ মাহফুজুল হক মারজান বলেন, ‘ঘটনার সঙ্গে ছাত্রলীগের বেশ কিছু নেতা-কর্মীর সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে। হল দখলকে কেন্দ্র করেই এই ধরনের ঘটনা ঘটনো হয়েছে।’

এই প্রতিবেদনের আলোকে দায়ীদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেয়া হবে-জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, ‘প্রতিবেদন দেখে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অপরাধী যেই হোক ছাড় দেয়া হবে না।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বশেষ নির্মিত বিজয় একাত্তর হলে নিজেদের ইচ্ছেমতো ছাত্র তুলতে রাতভর তাণ্ডব চালিয়েছে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। গত সোমবার রাতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ক্ষমতাসীন দলের সহযোগী ছাত্র সংগঠনটি এই কাজ করে।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আবিদ আল হাসান বলেন,‘আমরা সংগঠনের পক্ষ থেকেও একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছি। এর প্রতিবেদন এখনও পাইনি। পেলে এর আলোকে আমরা সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেব।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের বিষয়ে জানতে এই ছাত্রলীগ নেতা বলেন, ‘এই তদন্ত কমিটির আলোকে আমরা সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিতে পারি না। এই প্রতিবেদনের আলোকে ব্যবস্থা নেবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।’ এক প্রশ্নের জবাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি বলেন, প্রাথমিক যে তথ্য পাওয়া গেছে, তার আলোকে তারা পাঁচ জনকে সাময়িক বহিষ্কার করেছেন।খবর ঢাকাটাইমসের।



মন্তব্য চালু নেই