‘বিজিবি প্রধানের বক্তব্য মানবাধিকার লঙ্ঘন নয়’
বিজিবি প্রধানের বক্তব্য মানবাধিকার লঙ্ঘন নয় বলে জানিয়েছেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, ‘আত্মরক্ষার জন্য শক্তিপ্রয়োগ সব আইনেই বৈধ।’
শনিবার বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবের কনফারেন্স লাউঞ্জে ‘নারীর ক্ষমতায়নে সচেতনাতামূলক প্রচারাভিযান ও সিডো সনদের প্রাসঙ্গিকতা’ শীর্ষক সেমিনারে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ মন্তব্য করেন। জাতীয় মানবাধিকার কমিশন এ সেমিনারের আয়োজন করে।
মিজানুর রহমান বলেন, ‘বিজিবি প্রধান মানুষ হত্যার ঘোষণা দেয়নি। তিনি বলেছেন, জ্বালাও–পোড়াও, সহিংসতার মধ্যে মানুষের জান-মাল রক্ষার্থে প্রয়োজনে গুলি চালানো হবে। আত্মরক্ষার জন্য প্রয়োজনবোধে গুলি অবশ্যই মানবাধিকার লঙ্ঘন নয়। একজন গাড়িতে পেট্রোল বোমা মেরে জ্বালিয়ে দিবে আর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী চুপচাপ দেখবেন তা হতে পারে না। সেক্ষেত্রে আত্মরক্ষা যেকোনো আইনেই বৈধ।’
সরকারের প্রতি বিএনপির সংলাপের আহ্বান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘গণতন্ত্রকে যারা ধারণ করে তাদের সঙ্গে সংলাপ হতে পারে। কিন্তু গণতন্ত্রকে যারা ত্যাগ করে, নাশকতার পথ বেছে নেয় তাদের সঙ্গে আবার কিসের সংলাপ? সন্ত্রাস ও পাশবিকতাকারীদের সঙ্গে কোনো সংলাপ হতে পারে না।’
এসময় সুশীল সমাজের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘দিনের পর দিন রাস্তায় পুড়ে মানুষ মারা যাচ্ছে আর কিছু মানুষ গণতন্ত্রের কথা বলে সংলাপের কথা বলছে। কিন্তু যারা দগ্ধ হয়ে মারা যাচ্ছে বা হাসপাতালে পড়ে আছে তাদের কথা কজন বলছে?’
যে অর্থনীতিতে নারীকে পণ্য হিসেবে ব্যবহার করে সে সমাজে নারীর উন্নয়ন সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করে মিজানুর রহমান বলেন ‘নারীকে আমরা কোনো অবস্থানে রেখেছি, তা-ই বলে দেবে আমাদের দেশে কোনো স্তরের সভ্যতা বিরাজ করছে।’
তিনি বলেন, ‘নারীর ক্ষমতায়ন মূল্যায়ন করতে হলে অর্থনৈতিক ব্যবস্থার পরিবর্তন করতে হবে। অর্থনৈতিকভাবে নারীদের মূল্যায়ন না করলে অর্থাৎ তাদের কাজের মূল্য না দিলে নারী ক্ষমতায়ন সম্ভব নয়। তাই নারী ক্ষমতায়নে সেদিকে দৃষ্টি দিতে হবে।’
বৈষম্য দূর না হলে নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিত হবে না জানিয়ে গণস্বাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের সমাজের প্রায় সব ক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ বেড়েছে। তবে নারীর ক্ষমতায়ন মানে শুধু অংশগ্রহণ নয়। অংশগ্রহণের মধ্যে যদি অংশীদারিত্ব না থাকে তবে ক্ষমতায়ন ব্যর্থ।’
তিনি বলেন, ‘নারীর জন্য নিরাপদ মাতৃত্বের কথা শোনা গেলেও এখনও নারীদের নিরাপদে পথচলা, নিরাপদ কর্মস্থল ও শিক্ষাঙ্গণ নিরাপদ করা যায়নি।’
রাশেদা কে চৌধুরী আরো বলেন, ‘নারীর অধিকারগুলোকে মানবাধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার মূল কথাগুলোকে ধারণ করে সিডো সনদের প্রাণ হিসেবে পরিচিত ২ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে, ‘বৈষম্য বিলোপ করে নারী-পুরুষের মধ্যে সমতা স্থাপনের নীতিমালা ও উদ্যোগ গ্রহণ।’ তাই এ ধারার ওপর আরোপিত সংরক্ষণ তুলে না নিলে সিডোর সফল বাস্তবায়ন সম্ভব নয়।’
প্রসঙ্গত, নারীর প্রতি সব বৈষম্য দূর করা এবং সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সবক্ষেত্রে নারী পুরুষের সমান অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে জাতিসংঘের একটি চুক্তি হলো ‘সিডো’। ১৯৮৪ সালে ৬ নভেম্বর বাংলাদেশ সরকার এ চুক্তিতে স্বাক্ষর করার মধ্য দিয়ে সিডো সনদ মেনে চলতে অঙ্গীকারাবদ্ধ হয়।
মন্তব্য চালু নেই