বিজিএমইএ ভবন ভাঙতে রাজউক চেয়ারম্যানকে নোটিশ
হাতীরঝিলের মধ্যে বিজিএমইএ ভবন ভাঙতে আদালতের নির্দেশনা অমান্য করায় রাজউক চেয়ারম্যানকে আদালত অবমাননার নোটিশ পাঠানো হয়েছে। রিটকারী আইনজীবী মনজিল মোরসেদ আজ বৃহস্পতিবার (০৯ মার্চ) এ নোটিশ পাঠান।
নোটিশে বলা হয়, আপনাকে এই মর্মে নোটিশ প্রদান করা যাচ্চে যে, পত্রিকায় প্রকাশিত একটি রিপোর্টের প্রেক্ষিতে মহামান্য হাইকোর্ট স্বপ্রণোদিত হয়ে রুল জারি করে নোটিশ পাঠানোর পরে চূড়ান্তভাবে রুল শুনানি করে আদালত বিজিএমইএ ভবন ৯০ দিনের মধ্যে ভেঙ্গে ফেলার নির্দেশ প্রদান করেন।
রায়ে উল্লেখ করা হয়, বিজিএমইএ ভবন যে ভূমির উপর নির্মাণ করা হয়েছে তার মালিকানা স্বত্ব সঠিকভাবে তারা অর্জন করেনি এবং আইন অমান্য করে জলাধার ভরাট করায় অনুমতিপ্রাপ্ত হয়ে ভবন নির্মাণ করেছেন। উক্ত আদেশের বিরুদ্ধে বিজিএমইএ এর আপীল দায়ের করা হলে ২০১৬ সালের ২ জুন আপিল বিভাগ তাদের আপিল খারিজ করে নির্দেশনা দেয় যে, রায় পাওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে বিজিএমইএ কর্তৃপক্ষ নিজেরাই ভবন ভেঙ্গে ফেলবেন, তা না করলে রাজউককে নির্দেশনা দেয়া হয় ভেঙ্গে ফেলার পদক্ষেপ নিতে। আপনি উক্ত রায়ের কপি পাওয়ার পরে ৯০ দিনের সময়সীমা ২০১৭ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি শেষ হওয়া স্বত্বেও বিজিএমইএ ভবন ভেঙ্গে ফেলার জন্য কোন কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি। আপনার উক্ত কার্যক্রম আদালতের রায়ের প্রতি অশ্রদ্ধা ও অমান্য করার শামিল, যা আদালত অবমাননার পর্যায়ে পারে।
এমতাবস্থায় আপনাকে অত্র নোটিশ প্রদান পূর্বক ৭ দিনের সময় প্রদান করা যাচ্ছে যে, আপনি ৭ দিনের মধ্যে বিজিএমইএ ভবন ভাঙ্গার জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করে আমাকে অবহিত করবেন। নতুবা আপনার বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার মামলা দায়ের করা হবে।
উল্লেখ্য, বিজিএমইএ ভবন ভাঙতে সমিতিটির পক্ষ থেকে তিন বছর সময় চেয়ে ৮ মার্চ একটি আবেদন করা হয়েছে। যেই আবেদনের উপর শুনানির জন্য আগামী রবিবার দিন নির্ধারণ করেছেন আপিল বিভাগ। প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আপিল বেঞ্চ বৃহস্পতিবার এ আদেশ দেন।
বিজিএমইএ’র এর পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী কামরুল হক সিদ্দিকী। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। রিটকারীদের পক্ষে ছিলেন মনজিল মোরসেদ।
বিজিএমইএ ভবন ভেঙ্গে ফেলতে আপিল বিভাগের দেয়া রায়ের বিরুদ্ধে সমিটির করা পুনঃবির্বেচনার (রিভিউ)আবেদনটি গত ৫ মার্চ খারিজ করে দেয় আপিল বিভাগ। এ রায়ের ফলে ভবনটি ভেঙ্গে ফেলতেই হবে। তবে কত দিনের মধ্যে ভবনটি ভাঙতে হবে সেই বিষয়ে বিজিএমইএ এর পক্ষ থেকে একটি আবেদন করতে বলে আপিল বিভাগ। ভবন ভাঙতে তিন বছর সময় চেয়ে গতকাল ৮ মার্চ একটি আবেদন করে তৈরি পোশাক মালিক সমিতিটি।
গত বছরের ৮ ডিসেম্বর রিভিউ আবেদন দায়ের করেন বিজিএমইএ। আবেদনে আপিল বিভাগের রায় স্থগিত করে বহুতল ভবনটি ভেঙ্গে ফেলার জন্য তিন বছরের সময় চাওয়া হয়।
এর আগে গত বছরের ৮ নভেম্বর বিজিএমইএ ভবন ভাঙ্গার বিষয়ে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ পায়। গত বছরের ২ জুন বিজিএমইএর কতৃপক্ষের করা আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন (লিভ টু আপিল) খারিজ করে হাইকোর্টের রায় বহাল রাখেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন চার সদস্যের বেঞ্চ। হাইকোর্টের রায়ে ৯০ দিনের মধ্যে ভবনটি ভেঙ্গে ফেলার কথা বলা হয়।
জমির মালিকানা না থাকা ও জলাধার আইন লঙ্ঘন করে হাতিরঝিলে বিজিএমইএ ভবন নির্মাণ করার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ২০১১ সালের ৩ এপ্রিল ভবনটি ভেঙে ফেলতে রায় দেন হাইকোর্ট। ২০১৩ সালের ১৯ মার্চ ভবনটি ভেঙে ফেলতে হাইকোর্টের দেওয়া ৬৯ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়। এরপর ওই বছর ২১ মে বিজিএমইএ কর্তৃপক্ষ সুপ্রিম কোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় লিভ টু আপিল করে।
হাই কোর্টের রায়ে বলা হয়, বিজিএমইএ যাদের কাছে ওই ভবনের ফ্ল্যাট বা অংশ বিক্রি করেছে, দাবি পাওয়ার এক বছরের মধ্যে তাদের টাকা ফেরত দিতে হবে।
‘বিজিএমইএ কতৃপক্ষ ক্রেতাদের সঙ্গে যে চুক্তি করেছে তা ছিল বেআইনি। ওই জায়গায় ভবন নির্মাণ বা কোনো অংশ কারও কাছে বিক্রির কোনো অধিকার বিজিএমইএর ছিল না। তবে ক্রেতারা যেহেতু নিজেরাও জানত বা তাদের জানা উচিৎ ছিল যে, এ জমির উপর বিজিএমইএর কোনো মালিকানা নেই এবং ভবনটি বেআইনিভাবে নির্মাণ করা হয়েছে। সুতরাং তারা কোনো ইন্টারেস্ট পাওয়ার দাবিদার নয়।’
‘আর্থিক পেশিশক্তির অধিকারী বলে, শক্তিশালী একটি মহলকে আইনের ঊর্ধ্বে রাখতে হবে এমন যুক্তি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। একটি গুরুত্বপূর্ণ সংস্থা হিসেবে বিজিএমইএর আইনের প্রতি আরও বেশি শ্রদ্ধাশীল হওয়া বাঞ্ছনীয় ছিল। তারা তা না করে আইনকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করেছে।
‘রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ, অর্থাৎ যাদের প্রয়োজনে জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছিল, তারাই মোট ৬ দশমিক ২১ একর জমি অপ্রয়োজনীয় বিবেচনায় ছেড়ে দেয় একই বছরে, অর্থাৎ ১৯৬০ সালে। পরে ১৯৯৮ সালে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো ওই জমি একটি স্মারকের মাধ্যমে বিজিএমইএকে এর নিজস্ব ভবন তৈরির জন্য বেআইনিভাবে প্রদান করে। অথচ রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো ২০০৬ সালের আগ পর্যন্ত আদৌ ওই জমির মালিক ছিল না।’
আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাকালে ১৯৯৮ সালে সোনারগাঁও হোটেলের পাশে বেগুনবাড়ী খালপাড়ের পোশাক শ্রমিকদের সংগঠন বিজিএমইএ- এর প্রধান কার্যালয় ভবন নির্মাণ করে। ২০১০ সালের ২ অক্টোবর ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টারে প্রকাশিত সংবাদে বলা হয়, রাজউকের অনুমতি ছাড়া বিজিএমইএ ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। ওই প্রতিবেদনটি আদালতের দৃষ্টিতে আনেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ডি এইচ এম মুনিরউদ্দিন। ওই বছরের ৩ অক্টোবর আদালত স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে রুল জারি করেন। পরে এই মামলার জন্য হাইকোর্ট কয়েকজন অ্যামিকাস কিউরি নিযুক্ত করেন। আদালত তাদের বক্তব্য দেন।
মন্তব্য চালু নেই