‘বিচারপতিদের অসম্মানজক বিদায় বন্ধ হবে’

বাংলাদেশ ‍সুপ্রিম কোর্ট বিচারক (তদন্ত) আইন চূড়ান্ত হলে বিচারপতিদের অসম্মানজক বিদায় বন্ধ হবে বলে মন্তব্য করেছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।

সোমবার সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘এ আইন প্রণয়নে কোনো রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নেই। এতে বিচার বিভাগ ও সংসদ মুখোমুখি হওয়ারও কোনো সুযোগ নেই। বরং আইনের মাধ্যমে বিচারপতিদের অসম্মানজক অপসারণ বন্ধ হবে।’

এ ধরনের আইন অনেক আগে করা উচিত ছিল বলেও মন্তব্য করেন আনিসুল হক।

আইনমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের ১৯৭২ সালের সংবিধানে যখন ৯৬ অনুচ্ছেদ ছিল, ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত কোনো সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিকে রিমুভ করা হয় নাই। কিন্তু ১৯৭৬ সালের পর থেকে (জুডিশিয়াল কাউন্সিলের কাছে যখন ক্ষমতা দেওয়া হয়) অন্ততপক্ষে আট থেকে নয়জন বিচারপতিকে রিমুভ করা হয়েছে। তাদের মধ্যে আছেন- বিচারপতি কে এম সোবহান, বিচারপতি আবদুর রহমান চৌধুরী ও বিচারপতি এস এম হোসেন। এ তিনজনকে বলা হলো- আজ থেকে আপনারা তিনজন বিচারপতি নন। হয় পদত্যাগ করুন, নইলে চাকরি খাব- এ হুমকি তাদেরকে দেওয়া হয়েছিল।’

প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি কামাল উদ্দিন হোসেনের প্রসঙ্গ তুলে ধরে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘বিচারপতি কামাল উদ্দিন হোসেন বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি ছিলেন। সকালে তার এজলাসে মামলা চলছে। আইনজীবীরা যেখানে দাঁড়ান, রেজিস্ট্রার সাহেব সেখানে গেলে তাকে একটা ফোন করা হলো কোথা থেকে- মাননীয় প্রধান বিচারপতিকে জিজ্ঞাসা করেন যে, আজকের পত্রিকা তিনি পড়েছেন কি না, যদি পড়ে থাকেন, উনি কি আছেন? তখন রেজিস্ট্রার প্রধান বিচারপতিকে গিয়ে বললেন, আপনি আজকে একটু এডজর্ন করুন। তিনি বুঝতে পেরেছেন। কারণ, রেজিস্ট্রার এসে জিজ্ঞাসা করছেন। এরপর কোর্ট এডজর্ন করে তার খাস কামরায় গেলে তাকে (প্রধান বিচারপতি) পত্রিকাটা দেওয়া হলো। মার্শাল ল’র যে আইনটা আজকে করা হয়েছে, এটা পড়ে আপনি একটু দেখুন, আপনি আছেন কি না? সেটা পড়ে দেখা গেল- তিনি নাই।’

সে দিনের স্মৃতিচারণ করে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘আমারও সৌভাগ্য বা দুর্ভাগ্য- আমার বাবা তখন সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি। তাকে খবর দিয়ে দ্রুত অ্যারেঞ্জমেন্ট করে প্রধান বিচারপতিকে বিদায় সংবর্ধনা দেওয়া হলো। এটা হচ্ছে, কোনো ধরনের আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে অসম্মান করে বিদায় করা।’

আইনমন্ত্রী আরো বলেন, ‘মাননীয় বিচারপতিদের এভাবে আর অসম্মান করতে দেওয়া যেতে পারে না। তাদের অধিকার সুরক্ষার দায়িত্ব আমাদের। আইনে বিচারপতিদের সুরক্ষা দেওয়া হয়েছে।’

আইনটিতে প্রধান বিচারপতির মতামত নেওয়া বাধ্যতামূলক কি না, জানতে চাইলে আনিসুল হক বলেন, ‘এ রকম আইনে তাদের (বিচারপতিদের) মতামত নেওয়ার বাধ্যবাধকতা আইনে নেই। কিন্তু এটা যেহেতু তাদের ব্যাপার, তারাই একমাত্র স্টেকহোল্ডার, তারা (বিচারপতিরা) পাবলিকলি এটা নিয়ে আলাপ-আলোচনা করতে পারেন না। সেহেতু আমি মনে করি, তাদের অভিমত নেওয়াটা বাঞ্ছনীয়।’

‘মন্ত্রিসভা আইনের খসড়াটি নীতিগত অনুমোদন দেওয়া মানে এই না, ওনারা (বিচারপতি) কোনো পরিবর্তন চাইলে তা হবে না। যুক্তিসঙ্গত পরামর্শে পরিবর্তনের সুযোগ থাকবে। মূলত আইনটাই করা হচ্ছে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের ব্যাপারে, তাই তাদের সঙ্গেই আমরা আলাপ-আলোচনা করব। তারা যে সাজেশন দেন, তা নিশ্চয়ই আইন প্রণয়নের সময় বিবেচনা করব’, বলেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।

মন্ত্রী বলেন, ‘গত ২ মার্চ আইন কমিশনের এ খসড়াটি প্রধান বিচারপতির কাছে আমি নিজ হাতে তুলে দিয়েছি এবং আনুষ্ঠানিকভাবেও পাঠিয়েছি। ওখান থেকে কোনো মতামত না আসায় একটা রিমাইন্ডার দিয়েছিলাম। তার জবাবে তারা বলেছেন, এ ব্যাপারে একটি মামলা হয়েছে। যেহেতু এ মামলা এখনো চলছে এবং আগামী ৫ মে রায় হবে, সেহেতু এ আইনের ব্যাপারে আমরা অভিমত দিতে পারি না। বিচারপতিদের এই মতকে আমরা সম্মান করি। আজ মন্ত্রিসভা থেকে এ আইনের নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। খসড়াটিতে তারা কোনো মতামত না দিলেও চূড়ান্ত হওয়ার আগে আমরা অবশ্যই তাদের মতামতের জন্য অপেক্ষা করব।’

আইনি প্রক্রিয়ার কথা তুলে ধরে মন্ত্রী বলেন, ‘এ আইনের খসড়ায় অভিসংশনের কথা বলা হচ্ছে না। প্রমাণিত অসমর্থতা আর অসদাচরণের ক্ষেত্রে তাদেরকে বিদায় করার কথা বলা আছে।’

আনিসুল হক জানান, বাংলাদেশের যেকোনো নাগরিক বিচারপতির বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করতে পারবেন। সেক্ষেত্রে তার নাম উল্লেখ এবং ঘটনার সত্যতার দায়িত্ব নিয়ে অভিযোগ করতে হবে। কোনো কারণে অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণিত হলে অভিযোগকারীকে শাস্তি পেতে হবে। সরকারের পক্ষ থেকেও যদি কেউ অভিযোগ করেন, তার ক্ষেত্রেও একই বিধান প্রযোজ্য।

মিথ্যা অভিযোগের বিষয়ে আনিসুল হক বলেন, ‘যদি কেউ অভিযোগ করেন এবং সেটা মিথ্যা প্রমাণিত হয়, তাহলে তারও শাস্তির বিধান আছে। দুই বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড হতে পারে।’



মন্তব্য চালু নেই