সংসদে প্রধানমন্ত্রী :

‘বিএনপি নেত্রীর অবস্থা ‘না ঘরকা না ঘটকা’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমরা বিএনপির অন্তর্জালা জানি। বিএনপি নেত্রী ইলেকশনে আসেন নাই, এখন সংসদে নাই। খালেদা জিয়ার অবস্থা এখন না ঘরকা, না ঘটকা। এটাই হচ্ছে ওনার জ্বালা।

তিনি বলেন, ‘বিএনপি নেত্রী নির্বাচনে না আসায় একদিকে মন্দের ভালো। জাতি বেঁচে গেছে। কারণ সেসময় সংসদে যে ভাষা ব্যবহার করা হতো আমরা জীবনেও শুনি নাই। হাত উঠিয়ে কি না করেছে, খিস্তি-খেউর করেছে, আজে বাজে ভাষা, নোংরামি করে সংসদকে অপবিত্র করেছে।

রোববার দশম জাতীয় সংসদের চতুর্থ অধিবেশনের সমাপনী বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিএনপি নেত্রী সংসদে নেই, এটা একদিক থেকে মন্দের ভালো। সংসদের এখন যে পরিবেশ, তারা থাকতে তা ছিলো না। তারা সংসদে কী না করেছে। পবিত্র জায়গাকে অপবিত্র করেছে।

নভেম্বর পর্যন্ত এ সংসদ নষ্ট হয়নি। স্কুল কলেজের ছাত্র ছাত্রীদের সংসদে আনা যেতো না। খিস্তি খেউড়, ফাইল ছোঁড়াছুড়ি, তারা কী না করেছে। সেদিক থেকে জাতি বেঁচে গেছে। আজকে বিরোধীদল সঠিক গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে।’

শনিবার কুমিল্লার জনসভায় খালেদা জিয়ার বক্তব্যের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘খালেদা জিয়া বলেছেন-আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধের দল না। তাহলে মুক্তিযুদ্ধ করেছে কে? সে সময় কি বিএনপির জন্ম হয়েছে? তিনি হয়তো একদিন বলতে পারেন, নিজামী কামারুজ্জামানরা মুক্তিযুদ্ধ করেছে। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বেই তো সারা বাংলাদেশের মুক্তিকামী মানুষ অস্ত্র নিয়ে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছে। তাহলে কী রাজাকাররা মুক্তিযুদ্ধের দল। এর বিচার জনগণই করবে। অসত্য কথা বলে মানুষকে বিভ্রান্ত করা কার স্বার্থে? পাকিস্তানিরাও এখন এ কথা বলেন না। তিনি কার স্বার্থে এসব বলে যান।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তাদের আন্দোলন নাকি ভোটেরও ও ভাতের অধিকার আদায়ের লক্ষে? তাদের অর্থমন্ত্রী বলেছিলেন, দেশ খাদ্যে স্বয়ং সম্পূর্ণ হওয়া ভালো না। তাহলে বিদেশী সাহায্য পাওয়া যায় না। আমি তখন বলেছিলাম, তাহলে বাংলাদেশকে ভিক্ষুকের রাষ্ট্রে পরিণত করতে চান? কয়েকশ মানুষ হত্যা করে এখন তিনি ভোটের ও ভাতের অধিকারের কথা বলেন। দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা নাকি খুব খারাপ? তিনি তো এতিমের অর্থ মেরে খেয়েছেন। এখন সে মামলায় হাজিরা দিতেও ভয় পান। চোরের মনে পুলিশ পুলিশ। কেস মোকাবেলা করতে ভয় পান কেন? তিনি বলেছেন, কর্মসংস্থান নাকি ১৯ শতাংশ কমে গেছে। তাকে এই শতাংশ কে শিখিয়েছে? এককোটির ওপর মানুষকে চাকরি দিয়েছি, সেখানে কর্মসংস্থান কমে কীভাবে?

‘তিনি এখন র‌্যাবের বাতিল চান’ এ প্রসঙ্গ তুলে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এ র‌্যাবকে দিয়ে কতো মানুষ তিনি হত্যা করেছেন। ২০০৪ সালে বিএনপির নেত্রী বলেছিলেন, ‘পুলিশ ও র‌্যাব মিলে কী সুন্দর কাজ করছে। তিনি ক্ষমতায় থাকলে র‌্যাব খুব ভালো কাজ করে। ক্ষমতায় না থাকলে খারাপ কাজ করে। তার স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘ক্রস ফায়ার কন্টিনিউয়াস প্রসেস, এটা আইন মেনেই হচ্ছে।’

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘ইলেকশান না করে খালেদা জিয়া ভুল করেছেন। তিনি বলছেন, একদলীয় শাসন চলছে। একদলীয় হলে তিনি কীভাবে বক্তব্য দিতে পারেন। জিয়া অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে বিএনপির জন্ম দিয়েছে। জিয়া একা একা একদিন টিভিতে ঘোষণা দিয়েছেন, তিনি রাষ্ট্রপতি। তৎকালীন রাষ্ট্রপতি সায়েম সাহেবকে অস্ত্র ধরে বললেন, আপনি অসুস্থ আমাকে রাষ্ট্রপতি বানান। মার্শাল ল জারি করে ক্ষমতায় যে আসে, সেটাকে কোন গণতন্ত্র বলেন। আমরা গণতান্ত্রিক ভাবে নির্বাচিত সরকার।’

৫ জানুয়ারির নির্বাচনে অংশ নেয়ার জন্য বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদকে ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী, ‘তার সঠিক সিদ্ধান্তে গণতন্ত্র রক্ষা পেয়েছে। শত প্রতিকূলতার মধ্যেও তিনি নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন। খালেদা জিয়া ইলেকশানে না এসে যে ভুল করেছেন, তার খেসারত এদেশের মানুষ কেনো দেবে? নানা জনে নানা ঘটনা ঘটবে বলে তখন বলে বলেছিলেন। নির্বাচনের পরে আমরা শক্ত হাতে হাল ধরেছি বলে দেশের মানুষ সত্যিকারের শান্তিতে আছে, দেশ এগিয়ে যাচ্ছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘সাউথ সাউথ পুরস্কার আমার প্রাপ্য না, এটা বাংলাদেশের জনগনের। তারা যদি আমাদের ভোট দিয়ে বিজয়ী না করতো, তাহলে হয়তো এ পুরস্কার বাংলাদেশ পেতো না। আমরা যেটুকু করেছি, এদেশের জনগনের জন্য পেয়েছি। এর সবটুকু এদেশের জনগণকেই উৎসর্গ করছি।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সামনে আমাদের হাতে চার বছর সময় আছে। আমরা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবো। কিন্তুু বিএনপি নেত্রী ক্ষমতায় থেকে টাকা বানাতে চেয়েছেন। তার ছিলো ভাঙা সুটকেস। সেটা যদি জাদুর বাক্স হয়ে থাকে, তাহলে কিছু বলার নেই। ঘটনা তো তা না। তিনি দুর্নীতি করেছেন, টাকা খেয়েছেন, দেশের উন্নতি করে নাই। উন্নতি করলেই বিদ্যুৎ উৎপাদন বিএনপির আমলে কমে গেছে কেন? সাক্ষরতার হার সাত বছরে কমে ৪৪ ভাগে নেমে গেলো কীভাবে। উন্নয়নের জোয়ার ভাটার টানে চলে গেছে। তার ছেলেদের উন্নতি হয়েছে। দেশের মানুষ আরও অন্ধকারে পড়ে গেছে। পাঁচ বছরে আমরা তাদের তুলে এনেছি।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘স্বাধীনতার সুফল বাংলার মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়াই আমাদের লক্ষ, কর্তব্য। সে লক্ষ্য নিয়েই আমরা কাজ করে যাচ্ছি। যে বাংলাদেশের মানুষ রক্ত দিয়ে স্বাধীনতা অর্জন করেছে, সে স্বাধীনতা থেকে এদেশের মানুষকে ভুল পথে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। বাংলাদেশের ইতিহাস মুছে ফেলে দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছিলো। বাংলাদেশ মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর পথ বন্ধ করে দেয়া হয়েছিলো। ২১ বছর আওয়ামী লীগের ওপর অত্যাচার নির্যাতন করা হয়েছিলো। কেবল আদর্শের ওপর টিকে ছিলো বলে ১৯৯৬ সালে আমরা সরকার গঠন করতে সক্ষম হয়েছি।’

তিনি আরও বলেন, ’৯৬ সাল থেকে ২০০১ বাংলাদেশের জন্য স্বর্ণ যুগ ছিলো। অল্প সময়ের মধ্যে ব্যাপক উন্নতি করেছিলাম। কিন্তু ২০০১ সালে ক্ষমতায় আসতে পারেনি বলে ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে পারিনি। সে সময় বাংলাদেশে শিক্ষা, খাদ্যসহ বিভিন্ন ধরনের উন্নতি হয়। জিয়া যেমন স্বাধীনতা বিরোধী খুনীদের মন্ত্রী বানিয়েছিলেন তেমনি বেগম জিয়াও মানবতাবাদী ও যুদ্ধাপরাধীদের হাতে বাংলাদেশের পতাকা তুলে দিয়েছিলেন। ২০০১ সালের পরেও এদেশের মানুষের উপর স্বাধীনতার সময়ের মতো নির্যাতন শুরু হয়। মেয়েদের নির্যাতন করেছে নির্বিচারে।’

বিরোধীদলীয় নেতা রওশন ও খালেদা জিয়ার প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিনিয়োগ নাকি শুন্যের কোঠায় নেমে গেছে। এ বিষয়ে বিরোধীদলীয় নেতাও কিছু বলেছেন। গত জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ১ হাজার ১৮১ পয়েন্ট ৪২ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ এসেছে। বিনিয়োগের ধারাবাহিকতা অব্যাহত আছে। এর প্রমাণ হলো, কতোটা ইমপোর্ট হলো। অনেক বেশি আমদানি হচ্ছে। গ্যাস উৎপাদন যদি আরও বাড়াতে পারতাম, তাহলে আরও বিনিয়োগ হতো। মাঝখানে সাত বছর আমরা বাড়িয়েছি। গ্যাস উৎপাদনও বৃদ্ধি করেছি। সঞ্চালন লাইন করেছি। পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কাজ সঠিকভাবে হচ্ছে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিএনপি ক্ষমতায় আসার পরে ৭১ সালে যেসব গ্রামে পাক বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করেছে, সেখানে গিয়ে তারা আক্রমণ করেছে। বৌদ্ধ, খৃস্টানসহ কোনো ধর্মের লোক বাদ যায়নি। গির্জায় বোমা মারা, মসজিদে হামলা করাসহ তারা সবই করেছে। তাদের কোনো মানবতাবোধ ছিলো না। অপারেশন ক্লিনহার্টের নামে নির্বাচনে জয়লাভের জন্য যেসব সন্ত্রাসীদের ব্যবহার করেছে, তাদেরও হত্যা করেছে। আবার আ.লীগ, যুবলীগের নেতাকর্মীদেরও পিটিয়ে হত্যা করেছে। আমাদের রিসার্চ সেন্টারের সবকিছু লুট করে নিয়ে গেছে।’



মন্তব্য চালু নেই