বিএনপির ৫ অঙ্গসংগঠনের কমিটি যে কোনো দিন

ঢাকা মহানগর বিএনপির পর এবার দলের ৫ অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নতুন কমিটি যে কোনো দিন ঘোষণা করা হবে। সংগঠনগুলো হলো- জাতীয়তাবাদী যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, কৃষক দল, মহিলা দল ও সহযোগী সংগঠন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। কমিটি চূড়ান্ত করার জন্য একাধিক খসড়া কমিটি বিএনপির হাইকমান্ডের কাছে জমা দেয়া হয়েছে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।

আগামী আন্দোলনকে সামনে রেখে দলকে ঢেলে সাজানোর অংশ হিসেবেই এসব গুরুত্বপূর্ণ সংগঠনের নেতৃত্বের পরিবর্তন করা হচ্ছে। এ সপ্তাহের মধ্যে এসব কমিটি ঘোষণা করা হতে পারে।

সূত্র জানায়, দলের ৯টি অঙ্গসংগঠন ও ২টি সহযোগী সংগঠনের মধ্যে বেশিরভাগই মেয়াদোত্তীর্ণ। নতুন কমিটি না দেয়ায় কোনো নতুন নেতৃত্ব তৈরি হচ্ছে না। সে কারণেই সংগঠনগুলোর কাজ অনেকটাই স্থবির হয়ে পড়েছে।

তৃণমূলের মতে, সংগঠন ও নেতৃত্ব যে শক্তিশালী নয় তার প্রতিফলন দেখা দেছে ৫ জানুয়ারির নির্বাচন পূর্ব আন্দোলনগুলোতে। এজন্য মেয়াদোত্তীর্ণ সব কমিটি পুনর্গঠনের দাবি জানায় তৃণমূল। স্থবিরতা কাটাতে এবং রাজপথের আন্দোলনের উপযোগী করার জন্য সব সংগঠনকে পুনর্গঠনের ঘোষণা দেন বিএনপির হাইকমান্ডও। সে অনুযায়ী দায়িত্বশীল সিনিয়র নেতারা এসব সংগঠনের জন্য বেশ কয়েকটি খসড়া কমিটি তৈরি করে দলের চেয়ারপারসনের কাছে জমা দিয়েছেন।

দলের একটি বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, বেগম খালেদা জিয়া সৌদি আরব ওমরাহ পালনের যাওয়ার আগে এসব কমিটির একটি খসড়া তৈরি করে নিয়ে গিয়েছিলেন। সেখানে তার ছেলে দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে আলাপ আলোচনা করেই কমিটিগুলো চূড়ান্ত করা হয়েছে। তারেক রহমান ও রাজনৈতিক উপদেষ্টাদের পরামর্শে যে কোনো মুহূর্তে চূড়ান্তভাবে মনোনীত নতুন নেতৃত্ব ঘোষণা দিতে পারেন বিএনপি চেয়ারপারসন।

নেতৃত্বে আসতে পারেন যার
যুবদল:
বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, যুবদলের বর্তমান সভাপতি সৈয়দ মোয়াজ্জেমে হাসোন আলাল সভাপতি পদে থাকতে চান না। তাই মেয়াদোত্তীর্ণ যুবদলের সভাপতি পদে ডাকসুর সাবেক জিএস, বিএনপির শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক খায়রুল কবির খোকন বা শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী এবং সাধারণ সম্পাদক পদে ৯০’র গণআন্দোলনের অন্যতম সাবেক ছাত্রনেতা কামরুজ্জামান রতনকে বিবেচনায় রাখা হয়েছে। তবে কোনো কোনো মহল চাইছেন সাধারণ সম্পাদক পদে বর্তমান সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম নীরবকে নিয়ে আসার জন্য।

সংগঠনের তৃণমূল নেতাকর্মীদের আস্থাভাজন নেতা হিসেবেও নীরবের একটি সুনাম রয়েছে। এছাড়া বিগত আন্দোলনে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেয়ায় ইতোমধ্যে তার বিরুদ্ধে ১৪৭টি মামলাও হয়েছে। সে কারণে নতুন কমিটিতে তাকে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে রাখার পক্ষে মতামত দিচ্ছেন দলের অধিকাংশ নীতিনির্ধারকরাও।

অপরদিকে ৯০’র গণআন্দোলনের অন্যতম নেতা কামরুজ্জামান রতন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের অন্যতম ত্যাগী নেতা হিসেবে পরিচিত। বর্তমানে তিনি দলের নির্বাহী কমিটির সদস্য হলেও বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার অত্যন্ত স্নেহভাজন ও বিশ্বস্ত বলে পরিচিত।

এছাড়া নতুন কমিটির গুরুত্বপূর্ণ পদে ঘোষণা হতে পারে সাবেক ছাত্রদল সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকুর নাম।

মহিলা দল:
সভাপতি নূরে আরা সাফাকে সরিয়ে সংগঠনটির নতুন কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পেতে পারেন বর্তমান সাধারণ সম্পাদক শিরিন সুলতানা অথবা বিএনপি কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও মানিকগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি আফরোজা খানম রীতা। যদি আফরোজা খানম রিতাকে সভাপতি করা হয় সাধারণ সম্পাদক পদে বহাল থাকতে পারেন শিরিন সুলতানাই। এছাড়া সাধারণ সম্পাদক পদে নতুন মুখ হিসেবে নাম শোনা যাচ্ছে শ্যামা ওবায়েদেরও।

কৃষক দল:
কৃষক দলের সভাপতি পদে দায়িত্ব পাচ্ছেন সংগঠনটির বর্তনাম সাধারণ সম্পাদক ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা শামসুজ্জামান দুদু।

স্বেচ্ছাসেবক দল:
সভাপতি হাবিব উন নবী খান সোহেলকে ঢাকা মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব করায় তার স্থলাভিষিক্ত হতে ইতিমধ্যে নেতাদের মধ্যে দৌঁড়ঝাপ শুরু হয়েছে। সংগঠনটির বর্তমান সাধারণ সম্পাদক মীর সরাফত আলী সপু সভাপতি হওয়ার জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছেন। ছাত্রদলের সাবেক নেতা সানাউল হক নীরুর নামও শোনা যাচ্ছে সভাপতি পদের জন্য। তবে দলের একটি অংশ নীরুর বিরোধীতা করছেন বলে জানা গেছে। আবার এ পদে দেখা যেতে পারে সাবেক ছাত্রদল সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকুকেও।

ছাত্রদল:
কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ও সাধারণ পদে সংগঠনটির একাধিক নেতার নাম জোরেসোরে আলোচনায় আসছে। সভাপতি পদে সংগঠনের বর্তমান কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক রাজীব আহসান, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মামুনুর রশীদ মামুনের নামই বেশি শোনা যাচ্ছে। সাধারণ সম্পাদক পদে সহ-সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুল করিম মিলন, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক এজমল হোসেন পাইলট, দপ্তর সম্পাদক নাজমুল হাসান, ঢাবির সাধারণ সম্পাদক মাসুদ খান পারভেজ ও সাংগঠনিক সম্পাদক মিনহাজের নামও আলোচনায় রয়েছে।



মন্তব্য চালু নেই