বিএনপির হাইকমান্ডকে তুলোধুনো করলেন ছাত্রদলের সাবেক নেতারা

বিএনপির হাইকমান্ডকে তুলোধুনো করলেন ছাত্রদলের সাবেক নেতারা। রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটউিশন মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত ছাত্র কনভেনশনে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের নিয়ে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করে বক্তব্য দেন ৯০’র ছাত্র নেতারা। পাশাপাশি সরকারবিরোধী আন্দোলন চাঙ্গা করতে নানা সুপারিশও তুলে ধরেন তার। ভবিষ্যতে সরকারবিরোধী আন্দোলনে বিজয় অর্জন করতে চাইলে রাজধানী ঢাকাকে টার্গেট করতে হবে। ঢাকায় সফল হলে সারাদেশে আন্দোলন সফল হবে।

বক্তারা অভিযোগ করে বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশানের কার্যালয়ের নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন হয় না, সেখানে ব্যবসায়ীদের মর্যাদা বেশি।

টাঙ্গাইল জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ফরহাদ ইকবাল বলেন, ‘ঢাকার নেতাদের বলতে হবে তারা রাজপথে থাকবেন কি না। চূড়ান্ত আন্দোলনের জন্য তৃণমূলে আমরা প্রস্তুত। তবে ঢাকার নেতাদের সংগঠিত হতে হবে।’

বদরুন্নেচ্ছা কলেজের সাবেক ভিপি আর্লি বলেন, ‘ওয়ান ইলেভেনের কথা বললে পদ হারাতে হয়, তাই ওয়ান ইলেভেন কথা বলা যাবে না। কিন্তু যারা দলের সঙ্গে বেঈমানী করেছে তাদেরকে এখনো চিহ্নিত করা যায়নি। আন্দোলনের সময় নেতারা হাতে চুড়ি পরে ঘরে বসে থাকবেন আর হাসিনার পতন হয়ে যাবে এমনটি মনে করার সুযোগ নেই।’

ময়মনসিংহ জেলার মোতাহার হোসেন বলেন, ‘ঢাকা মহানগরকে শক্তিশালী করতে সংগ্রাম কমিটি গঠন করতে হবে। বার বার আন্দোলনের ডাক দিলেও ঢাকায় কেন আন্দোলনের সফলতা পায় না সে বিষয়টি ভাবতে হবে।’

খুলনার ছাত্রনেতা সফিকুল আলম তুহিন বলেন, ‘খালেদা জিয়া গুলশানের বাসভবনে অবরুদ্ধ, আর তারেক রহমান বিদেশে নির্বাসনে থাকবেন এটা আমরা দেখতে চাই না। এর জন্য কঠোর কর্মসূচি দিতে হবে।’

যশোরের সাবেরুল হক সাবু বলেন, ‘আন্দোলনের রূপরেখা ঘোষণা করতে হবে। এখানে আপোষ নয় লড়াই করতে হবে। ৫ জানুযারির আন্দোলন ঘিরে ঢাকার নেতারা সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করেননি। তৃণমূল প্রস্তুত রয়েছে, তাই ঢাকা থেকে আন্দোলনের সূত্রপাত করতে হবে।’

সিলেটের সাবেক এক ছাত্রনেতা বলেন, ‘কেন্দ্র থেকে কোনো কমিটি তৃনমূল নেতৃত্বে চাপিয়ে দিলে হবে না। প্রতিটি কমিটি হওয়া দরকার সংশ্লিষ্ট এলাকাগুলোতে।’

গোপালগঞ্জের ছাত্রনেতা বদরুল আলম নাসিম বলেন, ‘জেলার অভ্যন্তরীণ কোন্দলের জন্য আন্দোলন সংগ্রামে অনেকেই অংশ নিতে পারে না। সাবেক ছাত্রনেতাদের জায়গা করে দিতে হবে।’

বরিশালের বদরুল আলম বলেন, ‘জেলা পর্যায়ে সাবেক ছাত্রনেতাদের কীভাবে পদ বঞ্চিত করে রাখা যায় সে ব্যবস্থা করে স্থানীয় নেতারা। আর এ জন্যই মাঠপর্যায়ের আন্দোলন সফল হয় না। স্থানীয় কমিটিতে সাবেক ছাত্রনেতাদের জায়গা দিতে হবে। তাহলে মাঠের আন্দোলন আরো জোরদার করা যাবে।’

ইডেন কলেজের সাবেক ভিপি হেলেন জেরিন খান বলেন, ‘৫ জানুয়ারির আন্দোলনে আমরা হেরে গেলাম, এর জন্য দায়ি শেখ হাসিনা নয়, আমরাই এর জন্য দায়ি। আমি হেলেন জেরিন খান ২৪ বছর রাজনীতি করছি। আমি সব সময় সামনের কাতারে থেকেছি। কিন্তু আমি বিগত ৩ বছরেও খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করতে পারিনি। যারা দায়িত্বপালনে ব্যর্থ হবে তাদেরকে আগে ধরতে হবে। গুটি কয়েক নেতা ম্যাডামকে কুক্ষিগত করে রাখবে, তাদের বিরুদ্ধে আগে ব্যবস্থা নিতে হবে।’ আন্দোলনের সময় যারা আন্দোলনে অংশ না নিয়ে অসুস্থতার ভান ধরে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে তাদের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি।

এর আগে সকাল সোয়া ১০টায় পবিত্র কুরআন তেলাওয়াতের মধ্যে দিয়ে গণতন্ত্রের পুনরুদ্ধারের চলমান সংগ্রামে বিজয় ছিনিয়ে আনার লক্ষ্যে জাতীয় কনভেনশন শুরু হয়। জাতীয় কনভেশনের সভাপতি ডাকসু’র সাবেক ভিপি আমান উল্লাহ আমান স্বাগত বক্তব্য দেন।

তিনি বলেন, ‘২৪ বছর আগে এই জায়গায় সর্বদলীয় ছাত্রঐক্যের কনভেশন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ওই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া।’

কনভেশনে বিকেলে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত হবেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। তিনি আগামী দিনে সরকারবিরোধী আন্দোলনে করণীয় নির্ধারণে প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা দেবেন।

সারাদেশ থেকে প্রায় দেড়-দুই হাজার সাবেক ও বর্তমান ছাত্ররা নেতারা জাতীয় এই কনভেশনে যোগ দেন। এদের মধ্যে বিভিন্ন কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিপি, জিএস ও জেলাপর্যায়ের ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ বর্তমানে দায়িত্বে থাকা ছাত্রদলের সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদকরা এই কনভেশনে যোগ দেন।



মন্তব্য চালু নেই