বিএনপিকে ‘অভয়’ দিলেন শামীম ওসমান

বিএনপি ও ছাত্রদল নেতাদের ওপর রাজনৈতিকভাবে কোনো ধরনের নির্যাতন বা জুলুম করা হবে না বলে ‘অভয়’ দিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ-৪ (ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য শামীম ওসমান।

তিনি বলেন, ‘নিজেদের মধ্যে রাজনৈতিক মতাদর্শ ও আদর্শগত বিরোধ থাকলেও কারও ওপর রাজনৈতিকভাবে কোনো ধরনের নির্যাতন কিংবা জুলুম করা হবে না। অন্যায়ভাবে কারও বিরুদ্ধে মিথ্যে মামলাও করা হবে না।’

শনিবার রাতে ‘সময়ের নারায়ণগঞ্জ: ছাত্র রাজনীতির একাল ও সেকাল’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠক ছাত্রলীগ-ছাত্রদলের সাবেক ও বর্তমান নেতাদের উদ্দেশে এ আহ্বান জানান তিনি।

নারায়ণগঞ্জের অনলাইন নিউজ পোর্টাল ‘নিউজ নারায়ণগঞ্জ২৪ডটনেট’ এ গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করে। নারায়ণগঞ্জ ক্লাবের কনফারেন্স রুমে শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা থেকে রাত পৌনে ১০টা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে বৈঠকটি সরাসরি শহরের চাষাঢ়া কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বড় পর্দায় সম্প্রচার করা হয়।

শামীম ওসমান বলেন, আমার নারায়ণগঞ্জের উন্নয়ন চাই। আর সেজন্য বিএনপি, ছাত্রদলসহ সব রাজনৈতিক দলকে এক প্লাটফর্মে আসতে হবে। মাদক, সন্ত্রাস, ভূমিদস্যূতা রোধে ছাত্র সমাজকে এগিয়ে আসতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘আমরা হানাহানির রাজনীতি চাই না। প্রকৃত ছাত্রদের হাতেই রাজনীতি ছেড়ে দেয়া উচিত। জিন্দাবাদ মার্কা রাজনীতি পরিহার করা উচিত। রাজনীতির আগে নিজের মধ্যে আত্মশুদ্ধি আনতে হবে। ভালো রাজনীতি ও উন্নয়নের জন্য যদি বিএনপি কিংবা ছাত্রদল নেতারা আমার কাছে আসে আমি তাদের স্বাগত জানাবো। তাদের জন্য আমার দরজা খোলা। কিন্ত তারা যেন কারও দ্বারা ব্যবহৃত না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।’

এ সময় সরকারি তোলারাম কলেজের সাবেক জিএস ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমরা যখন ছাত্র রাজনীতি করেছি তখন আমাদের মধ্যে সৌহার্দ্যপূর্ণ আচরণ ছিল। তখন আমরা দেশের জন্য, প্রকৃত রাজনীতির জন্য রাজনীতি করতাম। কিন্তু কালের বিবর্তনে ছাত্র রাজনীতিতে পরিবর্তন এসেছে।’

তোলারাম কলেজের সাবেক ভিপি ও জেলা যুবলীগ সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত মোহাম্মদ শহীদ বাদল বলেন, ‘ছাত্র রাজনীতির ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে সবার ঐক্যবদ্ধ প্রয়াস প্রয়োজন।’

ফতুল্লা থানা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি কাউসার আহমেদ পলাশ বলেন, ‘এক সময়ে আমরা এক কাপ চা তিন জন ভাগ করে পান করতাম। কিন্তু এখন সে অবস্থা নেই। এর জন্য আমরাও হয়তো দায়ী। তবে ছাত্র রাজনীতির মধ্যে পরিবর্তন আনা প্রয়োজন।’

জেলা ছাত্রদলের সাবেক আহ্বায়ক জান্নাতুল ফেরেদৗস বলেন, ‘এখন রাজনীতি মানেই ঝুট ব্যবসা আর টেন্ডারবাজি করা। এটা পরিহার করতে হবে। বাণিজ্যের মাধ্যমে কমিটি যাতে না দেয়া হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।’

জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি এহসানুল হাসান নিপু বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জে অন্য যে কোনো ছাত্র সংগঠনের চেয়ে ছাত্রলীগ অনেক শক্তিশালী।’

তার সঙ্গে এক মত প্রকাশ করেন জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সাফায়েত আলম সানি, সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান সুজন, সাংগঠনিক সম্পাদক আতাউর রহমান নান্নু সহ-সভাপতি মিনহাজুল ইসলাম রিয়াদ ও হাবিবুর রহমান রিয়াদ। তারা নারায়ণগঞ্জের কলেজগুলোতে প্রকৃত ছাত্রদের নিয়ে ছাত্র রাজনীতি করতে ছাত্রদলের প্রতি আহ্বান জানিয়ে সহযোগিতার আশ্বাস দেন।

এ সময় সাবেক ছাত্রদল নেতা আনোয়ার হোসেন আনু বলেন, ‘ছাত্র রাজনীতির ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে হলে সিনিয়রদের হস্তক্ষেপ প্রয়োজন।’

জেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক মাসুকুল ইসলাম রাজীব, যুগ্ম-আহ্বায়ক ফতেহ মোহাম্মদ রেজা রিপন, মহানগর ছাত্রদলের আহ্বায়ক মনিরুল ইসলাম সজল, যুগ্ম-আহ্বায়ক আবুল কাউসার আশা ও শাহেদ আহমেদ বলেন, ‘আমরা নারায়ণগঞ্জে গণতান্ত্রিক আন্দোলন করতে গিয়ে পুলিশের হয়রানির শিকার হচ্ছি। কলেজগুলোতে আমাদের প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে না। অনেক সময়ে কেন্দ্রীয়ভাবে অনেক কিছু নিয়ন্ত্রিত হয়।’

বৈঠকে উপস্থিত অন্যরাও নারায়ণগঞ্জে ছাত্র রাজনীতির ক্ষেত্রে সহাবস্থান বজায় রাখার আহ্বান জানান। এজন্য আগে নিজেদের মধ্যে ব্যক্তিগত সম্পর্ক উন্নয়ন করে আধুনিক নারায়ণগঞ্জ গড়ার কাজে এগিয়ে আসার তাগিদ দেন তারা।



মন্তব্য চালু নেই