বায়তুল মোকাররমে জুমার খুতবায় যা বললেন মদিনার ইমাম

জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে জুমার নামাজ পড়িয়েছেন সৌদি আরবের মসজিদে নববির সিনিয়র ইমাম ড. আবদুল মুহসিন আল কাসিম। নামাজের আগে ইসলাম সম্পর্কে তাৎপর্যপূর্ণ আলোচনা করেছেন তিনি। বাংলাদেশসহ বিশ্ব মুসলিমের জন্য তিনি দোয়া করেন। তার আরবি বয়ান বাংলায় অনুবাদ করেন ড. এরশাদ বোখারি।

মসজিদে নববির ইমাম এই সফরের ব্যবস্থা করায় সৌদি বাদশা সালমান বিন আবদুল আজিজ এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান। বাংলাদেশের ধর্মপ্রাণ মানুষের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতেই তাদের এই সফর বলেও জানান মদিনার এই ইমাম। তিনি বাংলাদেশের শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য আল্লাহর দরবারে দোয়া করেন এবং বাংলাদেশকে শান্তির প্রতীক হিসেবে গ্রহণের প্রার্থনা জানান।

নামাজপূর্ব আলোচনায় মসজিদে নববির ইমাম দোয়া করে বলেন, ‘আল্লাহ! মুসলিম বিশ্বের জন্য বাংলাদেশকে শান্তির প্রতীক হিসেবে গ্রহণ কর। বাংলাদেশে শান্তি দাও। এদেশের জনগণকে হেফাজত দান কর। হে আল্লাহ! এ দেশের মানুষকে দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণ দান কর।’

আল্লাহর দরবারে ফরিয়াদ করে তিনি বলেন, ‘এখান থেকে বের হওয়ার আগে আমাদের জিন্দেগির সব গোনাহ মাফ করে দাও। তুমি আমাদের প্রতি সন্তষ্ট হয়ে যাও। আমাদের প্রতি রাজি হয়ে যাও।’

তিনি আরও দোয়া করেন, ‘হে আল্লাহ! তোমার দরবারে ফরিয়াদ করছি, আমাদের পরিবার, আমাদের সন্তান, আমাদের স্ত্রী সবাইকে হেদায়েত দান কর। তোমার দীনের পথে চলার তওফিক দান কর।’

হালাল রুজি অর্জনের প্রতি জোর দিয়ে তিনি বলেন, ‘হে আল্লাহ! তোমার দরবারে ভিক্ষা চাচ্ছি, তুমি আমাদের সবাইকে হালাল রুজি অর্জনের তাওফিক দান কর। আমাদের রিজিকের পথে বরকত দান কর। আল্লাহ আমাদের কবুল কর।’

ইমাম বলেন, ‘হে আল্লাহ আমাদেরকে সরল পথ দেখাও এবং এই পথে চলার তওফিক দাও। হে আল্লাহ! যে ইসলাম আমাদেরকে দান করেছো, সেই ইসলামের ওপর অটল থাকার তাওফিক দান কর। ইসলামের পথে চলার তওফিক দান কর।’

ইসলাম প্রতিষ্ঠায় রাসুল সা. ও সাহাবাদের কষ্টের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘রাসুল সা. জীবনে অনেক কষ্ট করেছেন। সাহাবায়ে কেরাম অনেক কষ্ট করেছেন। ইসলামের জন্য মহানবী সা. পবিত্র মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করেছেন। ঘর-বাড়ি ছেড়েছেন। সাহাবায়ে কেরামদের মুজাহাদার বদৌলতে ইসলাম সারা বিশ্বে ছড়িয়েছে। আমরা ইসলাম গ্রহণ করতে পেরেছি।’

মসজিদে নববির ইমাম বলেন, ‘আমাদের জন্য ওয়াজিব হচ্ছে আমরা যেন আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করি। আমরা যেন প্রত্যেক দিন আল্লাহর দরবারে তাওবা করি।’

জুমার আরবি খুতবায় মসজিদে নববির ইমাম বিশ্ব মুসলিমকে কোরআন আঁকড়ে ধরার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, কোরআনই মুসলমানদের পথ দেখাবে। এজন্য তিনি কোরআন পড়া এবং বাস্তব জীবনে তা বাস্তবায়নের প্রতি জোর দেন।

এদিকে তার ইমামতিতে নামাজ আদায়ের জন্য রাজধানীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হাজার হাজার মুসল্লি বায়তুল মোকাররম মসজিদে আসেন। মসজিদ ঘিরে নজিরবিহীন নিরাপত্তা বলয় গড়ে তুলেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।

জুমার নামাজে মসজিদে হারামের ভাইস প্রেসিডেন্ট জেনারেল শায়খ ড. মুহাম্মদ বিন নাসের আল খুজাইম, ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের মহাপরিচালক সামীম মোহাম্মদ আফজালসহ সরকারের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ৪২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ সফর করছেন মসজিদে হারামের ভাইস প্রেসিডেন্ট জেনারেল শায়খ ড. মুহাম্মদ বিন নাসের আল খুজাইম এবং মসজিদে নববির খতিব শায়খ ড. আবদুল মুহসিন বিন মুহাম্মদ আল কাসিমসহ সৌদি প্রতিনিধি দলের সদস্যরা।

ইসলামিক ফাউন্ডেশন সূত্রে জানা গেছে, মসজিদে নববির ইমাম ও খতিব ড. আবদুল মুহসিন আল কাসিম মক্কায় ১৯৬৭ খ্রিস্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৯৭ সাল থেকে মদিনার মসজিদে নববির ইমাম ও খতিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। সেই সঙ্গে মদিনার জেনারেল কোর্টের বিচারকের দায়িত্ব পালন করেন।



মন্তব্য চালু নেই