বাড়ছে নিত্যপণ্যের দাম, কাজে আসেনি মন্ত্রীর হুঁশিয়ারি

পবিত্র মাহে রমজানে নিত্যপণ্যের বাজারে মূল্যবৃদ্ধির কারসাজির চেষ্টা করলে মঙ্গল হবে না। কিছুদিন আগেই ব্যবসায়ীদের প্রতি এমন হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। মন্ত্রীর হুশিয়ারীকে উপেক্ষা করে রমাজেন এক সপ্তাহ আগেই হুরহুর করে বাড়তে শুরু করেছে নিত্যপণ্যের দাম।

গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে বেড়েছে ছোলা, বুট, মাংস, সবজি আর আদা রসুনের দাম। চাহিদার তুলনায় বাজারে পণ্য সরবারহ পর্যাপ্ত থাকার পরও অগ্রিম মজুদ প্রবণতার জেরে দর বাড়ছে বলে মনে করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।নিত্যপণ্যের দাম ক্রয়ক্ষমতার বাইরে থাকায় ভোগান্তিতে পড়েছে নগরবাসী।

ক্রেতাদের অভিযোগ সরবারহ বেশি থাকা সত্ত্বেও বেশি দামে বিক্রি করছেন বিক্রেতারা। মাছ, মাংস, সবজি, পেঁয়াজ সব ধরনের পণ্যই গত সপ্তাহের তুলনায় বেড়েছে। এছাড়াও মাসখানেক আগে থেকেই একের পর এক পণ্যের দাম বেড়ে চলেছে বলছেন ক্রেতারা। এভাবে বাড়তে থাকলে আগামীতে নিত্যপণ্যের দাম সর্বসাধারণের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যাবে আশঙ্কা করছেন অনেকেই।

রাজধানীর কাওরান বাজার ও হাতিরপুলসহ বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, কাঁচাবাজারে মাছ, মাংস, পেঁয়াজ ও সবজির সরবরাহ পর্যাপ্ত রয়েছে। এরপরেও ক্রেতাদের আগের চেয়ে বাড়তি দামেই কিনতে হচ্ছে বেশিরভাগ খাদ্যপণ্য।

বাজারে দেশি পেঁয়াজ গত সপ্তাহে বিক্রি হয়েছে প্রতি কেজি ৩৮-৪২ টাকা দরে। চলতি সপ্তাহে তা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৪৫-৫০ টাকা দরে। ভারতীয় পেঁয়াজও কেজি প্রতি ২-৩ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৪০-৪২ টাকায়।

এদিকে রমজানের অন্যতম উপকরণ ছোলা আগের সপ্তাহের চেয়ে ৫ থেকে ৭ টাকা বেশি দামে বিক্রি করছেন বিক্রেতারা। প্রতি কেজি ছোলা ৬৫ থেকে ৭০, বুট ৫০ থেকে ৫৮ টাকা, খেসারির ডাল প্রতি কেজি ৫৫ টাকা, চিনি বিক্রি হচ্ছে ৪৫ টাকা দরে।

বাজারগুলোতে প্রতি কেজি সাদা আলু ২০-২৫ ও লাল আলু ২৫ টাকা, গত সপ্তাহের বেগুন যেখানে বিক্রি হয়েছে ৩৬ থেকে ৪০ টাকা আজ তা বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৫৫ টাকা, করলা ৩২-৪০ টাকা, পটল ৩৬-৪০ টাকা, ঝিঙ্গে ৪০ টাকা, চিচিঙ্গা ৩৬-৪০ টাকা, টমেটো ৪০-৪৫ টাকা, গাজর ৩০ টাকা, মূলা ২৪-৩০ টাকা, শশা ৩৬-৪০ টাকা, পেঁপে ২৪-৩০ টাকা, মিষ্টি কুমড়ার পিচ ১৫-২০ টাকা, লাউ ৪০ টাকা, বরবটি ৫০-৬০ টাকা, ঢেঁড়স ৩৬-৪০ টাকা, কচুরলতি ৩৬-৪০ টাকা, কাঁচামরিচ ৪০-৫০ টাকা, কাঁচকলা প্রতি হালি ৩০-৩৫ টাকা, লেবু প্রতি হালি প্রকার বেধে ২০-৩০ টাকা দরে বিক্রি করছে।

মাংসর বাজারে প্রতি কেজি গরুর মাংস বিক্রি করছে ৪০০- ৪২০ টাকা, খাসির মাংস বিক্রি করছে ৫৮০-৬০০ টাকায়। সপ্তাহে কেজিতে ব্রয়লার মুরগির দাম বেড়েছে ১৫ থেকে ২০ টাকা। এ সপ্তাহে কেজি প্রতি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি করছে ১৬০ টাকায় ও লেয়ার ১৭০ টাকা, কক মুরগি ২২০-২৫০ টাকা, দেশি মুরগি ৩৩০-৩৫০ টাকায় বিক্রি করছে।

রাজধানীর খুচরা মাছের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, গত সপ্তাহের তুলনায় কেজিতে ৩০ থেকে ১৫০ টাকা বেড়েছে বেশিরভাগ মাছের দম।

খুচরা বাজারে প্রতি কেজি রুই দেশি ৩০০-৩৫০ টাকা, কাতলা ৩২০-৩৬০ টাকা, তেলাপিয়া ১৮০-২৫০, সিলভার কার্প ১৮০-২০০ টাকা, আইড় ৪৫০-৮০০ টাকা, গলদা চিংড়ি আকার বেধে ৬০০-১২০০ টাকা, পুঁটি ২২০-২৫০ টাকা, পোয়া ৪০০-৫০০ টাকা, মলা ৪০০ টাকা, পাবদা ৫৫০-৭০০ টাকা, বোয়াল ৪৫০-৫৫০ টাকা, শিং আকার বেধে ৫০০-৮০০, দেশি মাগুর ৬৫০-৭০০ টাকা, শোল মাছ ৪০০-৬০০ টাকা, পাঙ্গাস ১২০-২০০ টাকা, চাষের কৈ ২৫০-২৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। ৬০০ গ্রামের ইলিশ মাছ বিক্রি করছে ৭৫০-৯০০ টাকায়।

রাজধানীর খুচরা চালের বাজারে প্রতি কেজি মোটা চাল বিক্রি করছে ৩৫-৩৭ টাকা দরে। নতুন মিনিকেট চাল বিক্রি হচ্ছে ৪২-৪৫ টাকায় এবং পুরাতন চাল বিক্রি হচ্ছে ৪৮-৫০ টাকায়। প্রতি কেজি নতুন লতা চাল বিক্রি হচ্ছে ৩৬-৩৮ টাকায় এবং পুরাতন লতা বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকায়। প্রতি কেজি মোটা চাল ৩২-৩৩ টাকা, বিআর-২৮ বিক্রি হচ্ছে কেজি প্রতি ২ টাকা কমে নতুন ৪০ টাকা ও পুরাতন ৪২ টাকা। নাজিরশাইল প্রতি কেজি ৫০-৫২ টাকা, সুগন্ধ চাল প্রতি কেজি ৭৫-৮০ টাকার মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে। আঁতপ চাল বিক্রি হচ্ছে ৩৫-৩৮ টাকার মধ্যে। সুগন্ধি চালের মধ্যে কাটারিভোগ ৭৫ টাকা, কালিজিরা প্যাকেট পাওয়া যাচ্ছে প্রতি কেজি ১০০ টাকা দরে।

কাওরান বাজারের ক্রেতা জাকির হোসেন বলেন, চাহিদার তুলনায় বাজারে পণ্য সরবারহ পর্যাপ্ত থাকা সত্ত্বেও দাম বেশি। রমজানের আগেই এই অবস্থা রমজানের সময় মনে হয় বাজারে আসাই যাবেনা।

ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি আরও বলেন, মন্ত্রীরা মিডিয়ার সামনে অনেক কথা বলেন কিন্তু বাজারে আসেন না। বড় বড় হুঁশিয়ারি দেন ঠিক আছে কিন্তু বাজারের সব পণ্যের দাম বাড়ছে। অথচ তার কোনো খোঁজ-খবর নেয় না।



মন্তব্য চালু নেই