» ফলো আপ :

বাঘের কামড়ে হাত হারিয়ে এখন কেমন আছেন অংকন?

গাজীপুরের বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কের দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বাঘের কামড়ে হাত হারানো মাহমুদুল হাসান অংকনের পরিবার। তাদের অভিযোগ, দর্শনার্থীদের অসাবধানতা থাকতেই পারে। কিন্তু সাফারি পার্কের নিরাপত্তাকর্মীরা কোথায় ছিলেন? সেখানে আদৌ নিরাপত্তাকর্মী রয়েছেন কিনা এমন প্রশ্নও ছুঁড়ে দেওয়া হয়েছে পরিবারের পক্ষ থেকে।

পরিবারের অভিযোগ, এমন একটা ঘটনায় কলেজ কর্তৃপক্ষের সবাই এসেছে-চিকিৎসা ঠিকমত হচ্ছে কিনা মনিটরিং করছে, অথচ পার্ক কর্তৃপক্ষের কেউ আসেনি। এমনকি কোনো খোঁজও নেয়নি।

মিলিটারি ইনিস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি’র অ্যারোনোটিক্যাল বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র মাহমুদুল হাসান অংকন ১৪ এপ্রিল পহেলা বৈশাখের দিন তিন বন্ধু মিলে বেড়াতে গিয়েছিলেন গাজীপুরের বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে। পার্কে ঘুরে বেড়ানোর এক পর্যায়ে বাঘ দেখতে যান। সেখানে বাউন্ডারি ওয়ালের ওপরে নেটে হাত দেওয়ামাত্র বাঘ অংকনের হাতে কামড় দেয়। এক পর্যায়ে বাঘের কামড় থেকে রক্ষার্থে পেছন থেকে টেনে ধরলে অংকনের হাত ছিঁড়ে যায়।

পরে দ্রুত তাকে সেখান থেকে উদ্ধার করে স্থানীয় এক ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়, সেখান থেকে নিয়ে গিয়ে ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অংকনের কনুই পর্যন্ত হাত কেটে ফেলা হয়েছে। বর্তমানে হাসপাতালের দ্বিতীয় তলার সিডি ওয়ার্ডের ৫ নং বেডে ডা. গণিমুল্লাহর তত্বাবাধানে চিকিৎসাধীন রয়েছেন তিনি।

শুক্রবার (১৭ এপ্রিল) সকালে সেখানে গিয়ে দেখা যায়, অংকনের বাবা-মা তার সেবা শশ্রুষা করছেন। তাকে দেখতে এসেছেন সহপাঠীরাও।

এসময় কথা হয় অংকনের পিতা বিমান বাহিনীর সাবেক কর্মকর্তা দাউদ হোসেনের সঙ্গে। তিনি সাফারি পার্কের নিরাপত্তার বিষয়টিকে সামনে এনে সেখানকার কর্মকর্তাদের উপর ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটান।

তিনি বলেন, আমার ছেলে অসাবধানতাবশতঃ সেখানে গেল। কিন্তু সেখানে কোনো নিরাপত্তাকর্মী ছিলেন না। এমনকি আমার ছেলেকে যখন বাঘে আক্রমণ করে তখন তার বন্ধুরাই তাকে টেনে ধরে রক্ষা করেছে। অনেক চিৎকার-চেঁচামেচি করলেও সাফারি পার্কের কোনো নিরাপত্তাকর্মী এমনকি পার্কের কোনো কর্মকর্তা পর্যন্ত সেখানে যায়নি। ছেলেকে উদ্ধারের পর তাদের গাড়ির সহায়তা চাইলে তারা তা পর্যন্ত দেননি।

তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, এতোবড় পার্ক, সেখানে সেফটি সিকিউরিটি কোথায়? দর্শনার্থীদের নিরাপত্তায় কর্মী থাকবে না এটি কী করে হয়?

অংকনের বাবা আরও বলেন, আমার ছেলেকে প্রথমে উদ্ধার করে স্থানীয় এক ক্লিনিকে নিয়ে যাওয়া হয়। তারা কি চিকিৎসা করলো বুঝলাম না। অথচ সাত হাজার টাকা না দেওয়া পর্যন্ত সেখান থেকে আসতে দেওয়া হয়নি। আমি বাড়ি থেকে বিকাশের মাধ্যমে টাকা পাঠানোর পরই ছেলেকে ছাড়া হয়েছে। আমি বারবার অনুরোধ করেছি, ছেলেকে হাসপাতালে ভর্তি করাতে হবে আপনারা ছেড়ে দেন, আমি টাকা পাঠাচ্ছি। কিন্তু তারা কেউ আমার কথা শোনেনি।

তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সবচেয়ে বড় কথা হলো এতো বড় একটা ঘটনা, কলেজ কর্তৃপক্ষের সবাই এলো, অথচ পার্ক কর্তৃপক্ষের কেউ আসেনি, এমনকি কেউ খোঁজও নেয়নি।

চিকিৎসার বিষয়ে তিনি বলেন, ডাক্তার বলেছে, আজকালের মধ্যে আরেকবার অপারেশন করতে হবে।

সকালে হাসপাতালে অংকনের বেডের পাশে দেখা যায় তার বন্ধু নিশাত পারভীন, মারজিয়া প্রভা, আরিফ রাব্বানিসহ কয়েকজনকে। সবাই তাকে সমবেদনা জানাচ্ছিলেন।

আরিফ রাব্বানি জানান, হাবিব, মঞ্জুরুল আর অংকন তিনজন মিলেই সাফারি পার্কে যান। তারা যখন বাঘ দেখতে যান, তখন অংকন বুঝতে পারেননি তার নিকটেই বাঘ রয়েছে। তিনি যখন নেটে হাত দেন তৎক্ষণাৎ বাঘটি আক্রমণ করে বসে।

তিনি অভিযোগ করেন, এমন অবস্থায় সেখানে কোনো নিরাপত্তাকর্মী ছিলেন না। হাবিব- মঞ্জুসহ আরও কয়েকজন অংকনকে পেছনের দিকে টেনে ধরে বাঘের হাত থেকে রক্ষা করেছে। আরিফ রাব্বানিও পার্কের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন।

আরো পড়ুন :

গাজীপুরে বাঘ থাবা মেরে ছিঁড়ে নিল যুবকের হাত



মন্তব্য চালু নেই