বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ রাষ্ট্রীয় মদদেই চুরি : এফবিআই
নিউইয়র্ক ফেডারেল রিজার্ভে থাকা বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ রাষ্ট্রীয় মদদেই চুরি হয়েছিল বলে জানিয়েছে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই। গত বছরের রিজার্ভ চুরির তদন্তের সঙ্গে জড়িত এফবিআই’র এক কর্মকর্তা ফিলিপাইনে রয়েছেন। বুধবার তিনি বলেছেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার রাষ্ট্রীয় মদদেই লুট হয়েছিল।
ল্যামন্ট সিলার নামে মার্কিন ওই কর্মকর্তা এ বিষয়ে বিস্তারিত কোনো তথ্য না জানালেও বিশ্বের অন্যতম এই সাইবার চুরির সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের নাম যে শিগগিরই যুক্তরাষ্ট্র প্রকাশ করবে সে বিষয়ে জোরালো ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি।
এর আগে গত সপ্তাহে ওয়াশিংটনে মার্কিন কর্মকর্তারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলাদেশের রিজার্ভ চুরিতে উত্তর কোরিয়া জড়িত বলে দাবি করেন।
সাইবার নিরাপত্তা ফোরামে ল্যামন্ট সিলার বলেন, আমরা বাংলাদেশ ব্যাংকের সাইবার চুরির বিষয়ে সব কিছু জানি, রাষ্ট্রীয় মদদে হামলার মাত্র একটি উদাহরণ এটি; যা ব্যাংকিং খাতে করা হয়েছে।
গত সপ্তাহে সরকারি এক কর্মকর্তা ওয়াশিংটনে বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে বলেন, এ সাইবার চুরির জন্য উত্তর কোরিয়া জড়িত বলে বিশ্বাস করে এফবিআই। তবে এ বিষয়ে বিস্তারিত কোনো তথ্য দেননি ওই কর্মকর্তা।
ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল এক প্রতিবেদনে জানায়, বাংলাদেশের এ সাইবার চুরির ঘটনায় উত্তর কোরিয়াকে দায়ী করে মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন মার্কিন প্রসিকিউটররা। এতে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে চীনা এক ব্যক্তিকে অভিযুক্ত করা হতে পারে।
২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে সাইবার চুরির এ ঘটনার পর আন্তর্জাতিক তদন্তের নেতৃত্ব দেয় এফবিআই। বাংলাদেশ ব্যাংকের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ভেঙে হ্যাকাররা সুইফট নেটওয়ার্ক কোড ব্যবহার করে নিউ ইয়র্ক ফেড থেকে রিজার্ভের এক বিলিয়ন মার্কিন ডলার অর্থ স্থানান্তরে একাধিকবার নির্দেশ পাঠায়।
তবে মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাংক অধিকাংশ নির্দেশ বাতিল করে দিলেও বেশ কয়েকটি নির্দেশে সাড়া দেয়। ফলে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার ফিলিপাইনের কয়েকটি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে চলে যায়। পরে দ্রুত ফিলিপাইনের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে অর্থ তুলে দেশটির বেশ কয়েকটি ক্যাসিনোতে ব্যবহার করা হয়।
তবে এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি। ফিলিপাইনে চীনা এক ক্যাসিনো মালিক বলেন, তিনি সিনেটের তদন্ত কমিটিকে জানিয়েছেন যে, চীনের দুই শীর্ষ ব্যবসায়ীর কাছ থেকে কয়েক মিলিয়ন ডলার অর্থ পেয়েছেন তিনি। ঢাকা থেকে ম্যানিলায় এ অর্থ স্থানান্তরের পেছনে ওই দুই ব্যক্তি দায়ী।
বাংলাদেশের রিজার্ভ চুরির এ ঘটনায় একটি রেমিট্যান্স কোম্পানিসহ বেশ কয়েকজন সন্দেহভাজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছে ফিলিপাইনের তদন্ত কর্মকর্তারা। দেশটির বিচার বিভাগের সঙ্গে সমন্বয় করে এই অভিযোগ দায়ের করা হয়। তবে এই অভিযোগ দেশটির আদালতে দায়ের করা হয়নি।
সিলার বলেছেন, চুরির সঙ্গে জড়িতদের শাস্তি নিশ্চিত করতে ফিলিপাইন সরকারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করেছে এফবিআই।
মার্কিন এই গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, আমাদের কাজ এখনো শেষ হয়নি। আমরা অভিযুক্তদের বিচারের মুখোমুখি করতে চাই। যাতে আমরা অন্যদের দেখাতে পারি যে, রাষ্ট্রীয় মদদেও এ ধরনের হামলা চালানো হলেও আপনাকে শাস্তি ভোগ করতে হবে। শেষ পর্যন্ত শাস্তি থেকে পালানোর কোনো উপায় নেই।
মন্তব্য চালু নেই