বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতি’র সকল কার্যক্রম ব্যর্থ ও লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ

আব্দুর রহমান,সাতক্ষীরা ॥ বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতি জেলা শাখার এডহক কমিটি সকল কার্যক্রমে ব্যর্থ ও কমিটির নামে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই কমিটির এক কর্মকর্তা জানায় গত ২০১২ সালের ২৬ জুলাই বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতি একটি এডহক কমিটি অনুমোদন দেয়। অনুমোদন দেওয়ার পর থেকে ওই সমিতির যুগ্ম আহবায়ক মিলন আহম্মেদ লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেন। এ ব্যাপারে অবসরপ্রাপ্ত সমবায় কর্মকর্তা ও অডিট অফিসার আব্দুর রব ওয়ার্ছী দীর্ঘদিন তদন্ত শেষে একটি প্রতিবেদন তৈরি করেন। প্রতিবেদনে বিগত ২০১২ সালের ২ নভেম্বর হতে ২০১৩ সালের ১৬ অক্টোবরের সমস্ত হিসাব দাখিল করেন ওই কমিটির যুগ্ম আহবায়ক মিলন আহম্মেদ। ওই কমিটিকে অবৈধ ঘোষনা করে এবং ত্র“টিপূর্ণ হিসাব অবৈধ বলে অবসরপ্রাপ্ত সমবায় কর্মকর্তা ও অডিট অফিসার আব্দুর রব ওয়ার্ছি লিখিতভাবে একটি প্রতিবেদন দাখিল করেন। বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতি জেলা শাখার যুগ্ম আহ্বায়ক মিলন আহমেদ যে হিসাব দাখিল করেছে তাতে বলা হয়েছে সমিতির বেতন বাবদ ২৪ হাজার টাকা কিন্তু ওই সমিতিতে কোন কর্মকর্তা-কর্মচারী নাই। কোন তারিখে নিয়োগ দেয়া হয়েছে এমন কোন রেজুলেশনও তাদের নেই। সমিতির মামলা খরচ হিসেবে ৩২ হাজার ১ শত টাকার হিসাব দেয়া হয়েছে। অথচ এই কমিটি অনুমোদন পাওয়ার আগেই মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে বলে জানা যায়। সমিতির বিভিন্ন সময়ে যাতায়াত হিসেবে ৭৯ হাজার ৪ শত ৭৫ টাকা হিসাব দেয়া হয়েছে। সাতক্ষীরা জেলায় যাতায়াত খরচ বাবদ যে হিসাব দেখানো হয়েছে তা অগ্রহণযোগ্য। এছাড়া সমিতির নির্বাচন বাবদ ৭ হাজার ৭ শত ৮০ টাকা হিসাব দেখানো হয়েছে। কিন্তু জেলা সমিতির এডহক কমিটি করা হয়েছে পূর্ণাঙ্গ কমিটি করার জন্য। এখনো পর্যন্ত কোন পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয় নাই। তাহলে এখানে নির্বাচন বাবদ যে হিসাব দেখানো হয়েছে তা কখনই সত্য নয়। বিভিন্ন সময়ে সমিতির আপ্যায়ন হিসাবে ১ লক্ষ ৬ হাজার ৯ শত ১০ টাকা হিসাব দেখানো হলেও আপ্যায়ন খরচ এত টাকা কখনো হতে পারে না। এখানেও তিনি টাকা আত্মসাৎ করেছেন। সমিতির মিটিং বাবদ ২২ হাজার ২ শত ১৫ টাকা দেখানো হয়েছে। তাহলে যাতায়াত খরচ, আপ্যায়ন ও মিটিং বাবদ কিভাবে আলাদা খরচ দেখানো হয়েছে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এছাড়া সমিতির নীতিমালা বাবদ ৪০ হাজার ৬ শত ৩৭ টাকা দেখানো হয়েছে। কিন্তু এতে কোন আয় দেখানো হয়নি। এই সমিতিতে মোট টাকা ছিল ৫ লক্ষ ৬৪ হাজার ১ শত ৫৭ টাকা ৭৫ পয়সা। খরচ দেখানো হয়েছে ৪ লক্ষ ৩৪ হাজার ৮ শত ৩৯ টাকা ৭৫ পয়সা। এই কমিটির অনুমোদন দেয়া হয় ২০১২ সালের জুলাই মাসের ২৬ তারিখ। অথচ এই কমিটির কোন মেয়াদ উল্লেখ করা নাই। এই কমিটির দায়িত্ব ছিল বিগত কমিটির নিকট হতে কাগজপত্র, ব্যাংক হিসাব, জেলা শাখার সদস্য সংখ্যা বৃদ্ধি করা ও জেলা শাখার নির্বাচনী কার্যক্রম সম্পন্ন করা। ১৭ সদস্য বিশিষ্ট এডহক কমিটির লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সফল হয়নি বিশেষ করে সমিতির কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের লক্ষ্যে একটি নির্বাচিত কমিটি গঠনে ব্যর্থ হয়েছে। এ ব্যাপারে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে প্রতিবেদন দাখিল করেছেন অডিট অফিসার ও অবসরপ্রাপ্ত সমবায় অফিসার আব্দুর রব ওয়ার্ছি। অতএব এই কমিটি সকল কার্যক্রমে ব্যর্থ হয়েছেন। যার ফলে এই এডহক কমিটি অবৈধ ঘোষণা করেছেন অডিট অফিসার। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলার সাতক্ষীরা পুস্তক সমিতির সদস্যরা জানান, আহবায়ক কমিটির মেয়াদ ৩ মাস কিন্তু বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি ও খুলনা বিভাগের দায়িত্ব প্রাপ্ত পরিচালক ওহিদুজ্জামান সরকার জামালের নিজস্ব ব্যক্তিদের নিয়ে কমিটি করায় তার নির্দিষ্ট কোন মেয়াদ ছিল না। এবং আহবায়ক কমিটি সমিতির সংঘস্মারক ও সংঘবিধি অনুযায়ী পরিচালিত না হয়ে নিজেদের মনগড়া হিসাব নিকাশ করে সমিতি পরিচালনা করছে। যা অডিট রিপোর্টে প্রতিফলন হয়েছে। সমিতির সাধারণ সদস্যরা এই আহ্বায়ক কমিটির দূর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগে কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ও খুলনা বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিচালক বরাবর কয়েকবার লিখিত আবেদন করা হলেও তার কোন সুফল পাওয়া যায় নি। ফলে এই ব্যর্থ ও অবৈধ কমিটি দূর্ণীতির আখড়া হিসাবে চিহ্নিত হয়েছে। এ ব্যাপারে সমিতির সদস্যদের মধ্যে কেন্দ্রীয় কমিটির উপর আস্থা হারিয়ে ফেলেছে। অডিট রিপোর্টের পর জেলা পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির আহ্বায়ক কাজী মোঃ অলিউল্লাহ’র নিকট জেলা শাখার সদস্যরা দূর্ণীতি ও অনিয়মের বিরুদ্ধে একটি লিখিত অভিযোগ প্রদান করে।



মন্তব্য চালু নেই