বাংলাদেশে জঙ্গি বিরোধী পদক্ষেপে কতটা আশ্বস্ত জনগণ?

বাংলাদেশে জঙ্গি পরিস্থিতি নিয়েই সর্বত্র আলোচনা সমালোচনা এবং বিশ্লেষণ চলছে। জঙ্গি দমনে সরকারের কার্যক্রম নিয়ে যেমন আলোচনা সমালোচনা রয়েছে তেমনি এ বিষয়ে রাজনীতিক দলগুলোর ভূমিকা নিয়ে আছে তর্ক-বিতর্ক।

গুলশানে জঙ্গি হামলার পরে জঙ্গি দমনে সরকারের কঠোর অবস্থান দেখা যায়। হলি আর্টিজানে ওই হামলার পরবর্তী আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর অভিযানে এ পর্যন্ত প্রায় অর্ধশত সন্দেহভাজন জঙ্গির মৃত্যু হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী বলেন, “এর মধ্য দিয়ে একটি বার্তা কিন্তু জঙ্গিদের বিরুদ্ধে যাচ্ছে সারা দেশে। সেটি হলো যে- এ ধরনের আস্তানা গেড়ে, অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে, বোমা নিয়ে সেখানে অবস্থান নিতে পারবে কিন্তু তাদের পরিত্রান নেই।”

মি. চৌধুরী মনে করেন, “রাজনৈতিকভাবে জঙ্গিবাদের প্রশ্নে ঐক্যমত না থাকলেও দেশের সাধারণ মানুষের মধ্যে জঙ্গিবাদের প্রশ্নে ঐক্যমত আছে।”

সরকারের নীতি নির্ধারকরা মনে করে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সরকার যেসব পদক্ষেপ নিচ্ছে তাতে জনগণ সমর্থন দিচ্ছে এবং আশ্বস্ত হচ্ছে।

এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ মামুন বলেন, “বিরোধীদল কিছুদিন আগে বললো যে যারা গুম হয়েছে আগে তাদেরকে জঙ্গি হিসেবে চালিয়ে দেয়া হচ্ছে। এটাওতো হতে পারে।”

ফারিহা নামে আরেকজন শিক্ষার্থী বলছিলেন, “আমার সাথে সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীরা যে কেউ জঙ্গি হতে পারে আমি জানিনা। এটা একটা ভয় কাজ করতেছে।”

অন্য আরেক শিক্ষার্থী বলছিলেন, সরকারের বক্তব্য আসলে পরিষ্কার যে জঙ্গিবাদের সঙ্গে কোনো আপস নাই।
তবে তাঁর ভাষায় সরাকরের পদক্ষেপ যথাসময়ে হয়নি বলেই মনে হয়- “প্রথমে যখন ব্লগার হত্যা শুরু হয়েছিল একটা গ্রুপ কিন্তু এটাকে নাস্তিক নিধন হিসেবে জাস্টিফাই করার চেষ্টা করেছিল। এখন আমরা সেটার ফল পাচ্ছি। তখন আমরা যথাযথ ব্যবস্থা নেই নাই সে কারণে এখন পানি এতদূর পর্যন্ত গড়িয়েছে”।

জঙ্গি ইস্যুটি এখন এতটাই আলোচিত যে শহর এবং গ্রামের সাধারণ মানুষও এটি নিয়ে সচেতন এবং হাটে বাজারে বৈঠক, মসজিদে আলোচনায় প্রাধান্য থাকে জঙ্গিবাদ প্রসঙ্গ।

সাভারের দত্তপাড়ায় মসজিদে যোহরের নামাজের পর গ্রামের কয়েকজন মুসল্লির সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা হয়।
সেখানে জাফর আলী বলেন, “যেভাবে নির্মুল করতেছে এই পদক্ষেপ আমাদের অনেকের কাছেই ভাল এবং মানুষে ভালই মনে করেতেছে যে দেশে জঙ্গিবাদ যাতে না থাকে”।

জঙ্গিবাদ নিয়ে তারা সরকার এবং বিরোধীদলের নেতাদের বক্তব্য বিবৃতির সমালোচনা করলেন।
ষাটোর্ধ্ব তারা মিয়া বলেন, “জঙ্গিবাদ এক জিনিস রাজনীতি আরেক জিনিস। জঙ্গিবাদের নিয়ে রাজনীতি করা যাবে না। রাজনীতি আছে থাকবে আমাদের দেশে।”

জঙ্গি দমনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নানা অভিযান নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও দেখা যায় অনেকে বিভিন্ন রকম প্রশ্ন তুলছে এবং তর্ক বিতর্ক করছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও গবেষক শামীম রেজা এ প্রসঙ্গে বলছিলেন, “জঙ্গিবাদের ক্ষেত্রে যেভাবে সরকার তার একটা ডিসকোর্স তৈরি করছে সেভাবে সামগ্রিক জাতীয় ঐক্যমতের কোনো ডিসকোর্স তৈরি হয়নি।

“দেখা যায় যে সবসময় বিরোধীদল যে বিবৃতি দিচ্ছে তার সাথে সরকারের বিবৃতি মেলে না। এবং এই না মেলার এই যে অনৈক্যের জায়গাটা তাতে কিন্তু জনগণ আরো শঙ্কিত হয়ে পড়েন।”

মি. রেজা মনে করেন, জঙ্গিবাদ দমন একটি ব্যাপকভিত্তিক প্রক্রিয়া একই সঙ্গে একটি আদর্শের বিরুদ্ধে লড়াই।
বাংলাদেশে জঙ্গিরা যে দর্শন নিয়ে মাঠে নেমেছে তার প্রতিদর্শন নিয়ে কার্যকর জোরালো প্রচারাভিযানেরও ঘাটতি দেখা যায় বলেও জানাচ্ছেন শামীম রেজা।বিবিসি বাংলা।



মন্তব্য চালু নেই