বাংলাদেশে গার্মেন্টস শ্রমিকদের ওপর নির্যাতন চলছেই!
কখনো গার্মেন্টসের ভেতরে কখনোবা বাইরে চলছে শ্রমিকদের ওপর শারীরিক নির্যাতন। দাবি আদায়ে বিক্ষোভের চেষ্টা করলেও রক্তাক্ত হতে হচ্ছে গার্মেন্টস শ্রমিকদের।
রাজধানীর বাড্ডার লুৎফুন টাওয়ারে অবস্থিত লাইফ স্টাইল গার্মেন্টসে শ্রমিক ইউনিয়ন গঠন করাকে কেন্দ্র করে নির্যাতিত হতে হয়েছে তৌফিক নামের এক শ্রমিককে। মচকে ফেলা হয়েছে তার হাত-পায়ের আঙুল। আঘাত করা হয়েছে মাথাসহ সারা শরীরে।
শ্রমিক ইউনিয়ন গঠন করতে চাইলে মালিকপক্ষ থেকে বাধা দেওয়া হয় তৌফিককে। কিন্তু তৌফিক কথা না শোনায় মালিকপক্ষ থেকে তাকে জীবননাশের হুমকি দেওয়া হয়। পরে কারখানা থেকে বেরিয়ে বাসায় যাওয়ার পথেই দুর্বৃত্তরা আক্রমণ করেন তৌফিকের ওপর। আক্রমনকারীরা বলেন, ‘জিএম সাহেবের সঙ্গে বেয়াদবি করছিস, তোকে মেরেই ফেলবো’।
এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট থানা প্রথমে মামলা নিতে না চাইলেও পরে তা নথিভুক্ত করা হয়েছে বলে জানান টেক্সটাইল গার্মেন্টস ওয়ার্কার্স ফোডারেশনের সাধারণ সম্পাদক তপন সাহা।
তপন সাহা বলেন, একের পর এক কারখানায় শ্রমিকদের ওপর নানা শারীরিক নির্যাতন চলছে। কিন্তু প্রশাসন ও বিজিএমইএ’র (বাংলাদেশ পোশাক ঈস্খস্তুতকারক ও রফতানিকারক সমিতি) পক্ষ থেকে কোনো ধরনের ব্যবস্থাই নেওয়া হচ্ছে না। বিজিএমইএকে আমরা তৌফিককে নির্যাতনের বিষয়টি জানালেও এখনো কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
অন্যদিকে রাজধানীর স্ট্রেপ থ্রি গার্মেন্টস কারখানার ভেতরেই শারীরিক নির্যাতনেরর শিকার হতে হয়েছে রীতা ও আমেনা নামে দু’জন নারী শ্রমিককে। কাজের শেষে কারখানার ভেতরে মালিকপক্ষের ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসীদের দিয়ে নানা শারীরিক নির্যাতন করা হয় তাদের। রক্তাক্ত অবস্থায় জোরপূর্বক তাদের কাছ থেকে পদত্যাগ পত্র স্বাক্ষর করিয়ে নেয় মালিকপক্ষ। সে বিষয়েও বিজিএমইএ নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করেছিলো বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শ্রমিক নেতা অভিযোগ করেন, মালিকরা যে যাই করুন না কেন, সব কিছুই বিজিএমইএ অবহিত থাকে। কিন্তু সব কিছুতেই কী করে মালিকপক্ষকে সুরক্ষিত রাখা যায় তাতেই সচেষ্ট থাকেন বিজিএমইএ’র নেতারা। আমরা যখন কথা বলি তখন তারা তা শুনতে চান না। কিন্তু পরে যখন শ্রমিকরা রাস্তায় নেমে পড়েন ভাংচুর করেন, তখন নেতারা বলেন, দুর্বৃত্তরা নাকি এসব করেছে। কিন্তু যখন নিজেদের রক্ত ঝরার বিচার শ্রমিকরা কোথাও পান না, তখন তারা এমন করবেন এটাই স্বাভাবিক।
গত এক বছরে যতো গার্মেন্টস কারখানায় নতুন করে শ্রমিক সংগঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে তার মধ্যে ৮০ শতাংশ উদ্যোগ গ্রহণকারী শ্রমিকরাই মালিকপক্ষের দ্বারা শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন বাংলাদেশ টেক্সটাইল গার্মেন্টস ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের সভাপতি অ্যাডভোকেট মাহবুবর রহমান ইসমাইল।
মালিকরা বরাবরই ট্রেড ইউনিয়নের বিপক্ষে। এখন যখন জিএসপি ইস্যুতে এসে ট্রেড ইউনিয়নের ওপর জার দেওয়া হচ্ছে, তখন তারা শ্রমিকদের ওপর শারীরক নির্যাতন চালাচ্ছেন- যাতে ভয়ে কেউ আর এ ধরনের উদ্যোগ নিতে না পারেন। কিন্তু এর ভোগান্তি দীর্ঘ্যমেয়াদে মালিকদেরই পোহাতে হবে।
মালিক-শ্রমিক বিরোধ নিষ্পত্তিতে কর্মরত আর্বিটেশন কমিটির অকার্যকর হয়ে পড়েছে বলে শ্রমিকদের পক্ষে যে অভিযোগ উঠেছে তা উড়িয়ে দেন কমিটির চেয়ারম্যান আবদুল আহাদ আনসারী। প্রাথমিক পর্যায়ে তৌফিককে নির্যাতনের বিষয়টি বিজিএমইএ জানে না বলে দাবি করলেও পরে তিনি স্বীকার করেন যে, টেক্সটাইল গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশন থেকে এ ধরনের একটি অভিযোগ মৌখিকভাবে পাওয়া গেছে।
গার্মেন্টস কারখানায় শ্রমিক নির্যাতন চলছে, এটি ঠিক না। তৌফিকের ঘটনায় আমাদের কাছে মৌখিক অভিযোগ এসেছে। আমি বলেছি, লিখিতভাবে অভিযোগ দিলে তবেই ব্যবস্থা নেবো। এখনো আমার কাছে লিখিত কোনো অভিযোগ আসেনি।
তবে শ্রমিক নেতারা অভিযোগ করছেন, প্রতিদিনই তৌফিক, রীতা, আমেনাদের মতো গার্মেনটস শ্রমিকদের নির্যাতনের শিকার হতে হচ্ছে। আর এসব ঘটনা দেশের পোশাক শিল্পের ভাবমূর্তিতে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করবে বলেও মনে করছেন তারা।
মন্তব্য চালু নেই