বাংলাদেশকে ঋণ দেয়ার লড়াইয়ে চীন-ভারত

প্রতিবেশী বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কের নতুন মাত্রা তৈরি করতে বাংলাদেশকে ৪৫০ কোটি মার্কিন ডলার ঋণের ঘোষণা দিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সম্পর্কের নতুন দিগন্তের সূচনা হলেও দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে থাকা তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি অধরাই থেকে গেছে।

ভারতে চারদিনের সফররত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে শনিবার দ্বিপাক্ষিক আলোচনার পর প্রতিরক্ষা খাতে আরো ৫০ কোটি ডলারের ঘোষণা দেন নরেন্দ্র মোদি। তবে বহু বছর ধরে বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা সরঞ্জামাদি ক্রয়ের অন্যতম বড় উৎস চীন।

ভারতের এ পদক্ষেপে ক্রমবর্ধমান হারে বাড়ছে চীনের সতর্কতা। ২০১৪ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকে দক্ষিণ এশিয়ার নেতৃত্বে ব্যাপক ভূমিকা পালন করছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।

২০১৫ সালে ঢাকার সঙ্গে ঐতিহাসিক স্থল সীমান্ত চুক্তি স্বাক্ষর করেন মোদি।

এদিকে বেসামরিক পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনসহ ও বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ খাতের ২২ চুক্তি স্বাক্ষরের পর এক সংবাদ সম্মেলনে নরেন্দ্র মোদি বলেছেন, ‘বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশের জনগণের সমৃদ্ধির জন্য ভারত সব সময় পাশে দাঁড়িয়েছে। অামরা বাংলাদেশের দীর্ঘদিনের উন্নয়নের বিশ্বস্ত অংশীদার।’

বাংলাদেশের অগ্রাধিকারমূলক খাতের বিভিন্ন প্রকল্প উন্নয়নে ৪৫০ কোটি ডলার ঋণসহায়তার ঘোষণা দেন মোদি। ভারতের এই প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এ নিয়ে গত ছয় বছর বাংলাদেশের জন্য ৮০০ কোটি মার্কিন ডলার ঋণ অনুমোদন দেয়া হলো।’

তবে তিস্তার পানি বণ্টন নিয়ে দীর্ঘদিনের বিবাদ থাকলেও শেখ হাসিনার সফরে যুগান্তকারী কোনো ফলাফল আসেনি। দুই দেশের মধ্যে বহমান এ তিস্তার সমস্যা সমাধানের অঙ্গীকার করেছেন মোদি; বাংলাদেশের কৃষির জন্য যা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

২০১১ সালে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের বাংলাদেশ সফরে তিস্তা চুক্তি হওয়ার কথা থাকলেও একেবারে শেষ মুহূর্তে এসে তা বাতিল হয়ে যায়। তখন থেকে ঝুলে আছে তিস্তা পানি চুক্তি।

বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ও ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের প্রধান শেখ হাসিনাকে ভারতের প্রতি ঐতিহাসিকভাবেই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) চেয়ে অধিক সহানুভূতিশীল হিসেবে দেখা হয়। শেখ হাসিনা বলেছেন, ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধ নিয়ে দুই দেশ যৌথভাবে ডকুমেন্টারি তৈরি করবে। ফলে তিক্ততার পাকিস্তানের সঙ্গে তিক্ত সম্পর্ক তৈরি হতে পারে।

এদিকে বন্দর এবং অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প স্থাপনে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোকে বিশাল অঙ্কের ঋণসহায়তা দিয়ে আসছে চীন। বেইজিংয়ের এ ঋণসহায়তাকে ইতিবাচকভাবে নিচ্ছে না নয়াদিল্লি। বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কাসহ এশিয়ার প্রতিবেশী অন্যান্য দেশের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারের চেষ্টা করছে ভারত।

২০১৫ সালে বাংলাদেশ সফরে এসে ঢাকাকে ২০০ কোটি মার্কিন ডলার ঋণসহায়তার ঘোষণা দেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ওই সময় মোদি সড়ক, রেল, সমুদ্রপথ এবং টেলিযোগাযোগের মাধ্যমে দুই দেশের যোগাযোগ বাড়ানোর ওপর গুরুত্বারোপ করেন। মোদির ওই সফরের আগে সড়ক, রেল ও সমুদ্রপথে যোগাযোগ স্থাপনের মাধ্যমে আঞ্চলিক অর্থনীতি সুসংহত করতে বাংলাদেশকে আট কোটি ডলারের ঋণসহায়তা দেয় ভারত।

ভারত চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তানের বিরুদ্ধে প্রতিবেশী দেশগুলোকে ঐক্যবদ্ধ করতে চায়। তবে এ অঞ্চলের দেশগুলোতে ভারতের ঋণসহায়তা চীনের ঋণের তুলনায় অনেক কম। গত বছর চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং পাকিস্তানের অবকাঠামো প্রকল্পে অত্যন্ত স্বল্প সুদে দুই হাজার কোটি মার্কিন ডলার ঋণসহায়তা দেন। এ ঋণসহায়তা ছাড়াও পাকিস্তানের অন্যান্য প্রকল্পে এবং শ্রীলঙ্কায় চীনের বিশাল অঙ্কের বিনিয়োগ রয়েছে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা শেখ হাসিনা ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের কাছ থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতার নেতৃত্ব দিয়েছিলেন মুজিব। বাংলাদেশ সরকার বলছে, অনেক বাংলাদেশির সহযোগিতায় পাকিস্তান সেনাবাহিনী মুক্তিযুদ্ধে অন্তত ৩০ লাখ মানুষকে হত্যা করেছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতার লড়াইয়ে সহায়তা করে ভারত।

শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘অামরা ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক বাড়াতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। আমাদের সম্পর্ক ও সহযোগিতার ফল ভোগ করবে পুরো দক্ষিণ এশিয়া।’

সূত্র : সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট।



মন্তব্য চালু নেই