বাঁশের কেল্লা সম্পাদক ৮ দিনের রিমান্ডে

বাঁশের কেল্লার মুল নিয়ন্ত্রণ লন্ডনে

জামায়াত-শিবিরের প্রচারণার ফেসবুক পেজ বাঁশেরকেল্লা’র মূল নিয়ন্ত্রণ বাংলাদেশে নয়, যুক্তরাজ্যে। এই পেজের মোট পাঁচজন এডমিন-এর দু’জন লন্ডনে থাকেন। আর পেজটির সঙ্গে সরাসরি মোট কাজ করেন ৫০ জন। মাসিক খরচ ৫০ লাখ টাকার বেশি। বাংলাদেশে থাকা ৩জন এডমিন কোন নির্দিষ্ট জায়গায় বসে কাজ করেন না। তারা ল্যাপটপে যখন যেখানে সুবিধা তখন সেখানে বসে কাজ করেন। আর কেউ আটকস হলেও এই পেজ বন্ধ করা সম্ভব নয়।
পুলিশ জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার রাতে কুমিল্লা থেকে আটক হওয়া কে এম জিয়া উদ্দিন ফাহাদ(৩০) জামায়াতের ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র শিবিরের প্রচার বিভাগের সমন্বয়ক এবং ফেসবুক পেজ বাঁশেরকেল্লার এডিটোরিয়াল এডমিন। তাকে কুমিল্লা ক্যাডেট কলেজ আবাসিক এলকায় তার বোনের বাসা থেকে আটক করা হয়। তার কাছ থেকে একটি ল্যাপটপ, দু’টি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়। সে এখন পর্যন্ত তার মোট চারটি ইমেইল আইডির কথা জানিয়েছে গোয়েন্দাদের।
ফাহাদ বাঁশেরকেল্লা ছাড়াও আরো ৫০টি ফেসবুক পেজ-এর এডমিন। তার মধ্যে অন্যতম হল তিতুমীরের বাশেরকেল্লা, আওয়ামী ট্রাইবুন্যাল, বাকশাল নিপাত যাক, আই এ্যাম বাংলাদেশি, ডিজিটাল রূপে বাকশাল, বিএএন বাশখালী নিউজ-২৪, ইসলামী অনলাইন এ্যাক্টিভিস্ট, তরুণ প্রজন্ম, বাশের কেল্লা ইউএসএ, ভিশন ২০২১ প্রভৃতি।
যেভাবে কাজ হয়
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা বিভাগের যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম জানান, বাঁশেরকেল্লাসহ তাদের সব ফেসবুক পেজেরই একাধিক এডমিন আছে। তাই তাদের কাউকে আটক করলেও তাদের পেজ বন্ধ করা যায় না। আমরা পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করলেও তারা আবার নতুন পাসওয়ার্ড সংগ্রহ করে। আর তাদের কয়েকজন এডমিন আছেন ইংল্যান্ডে । বাংলাদেশে তাই তাদের কোন এডমিন আটক বা গ্রেপ্তার হলেও কোন সমস্যা হয় না।
তিনি জানান, বাঁশেরকেল্লার সঙ্গে বাংলাদেশে কমপক্ষে ৫০ জন সরাসরি যুক্ত থেকে কাজ করে। আর জাময়াত-শিবিরের নেতা-কর্মীদের মধ্যে থানা থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত প্রতিটি পর্যায়ে একজন বাঁশেরকেল্লার সঙ্গে যুক্ত। তারা ছবি ও তথ্য পাঠান। সরাসরি যুক্ত ৫০ জন সার্বক্ষণিক হিসেবে কাজ করেন। তাদের দায়িত্ব ভাগ করে দেয়া আছে। তারা বিভিন্ন জায়গায় অবস্থান করে অনলাইন এবং অন্যান্য মাধ্যম থেকে ছবি ও তথ্য পাঠান।
এছাড়া এক গ্রুপ সাংবাদিকের সঙ্গেও রয়েছে তাদের যোগাযোগ। তাদের জন্য প্রয়োজনীয় ছবি ও তথ্য সরবরাহ করেন তারা টাকার বিনিময়ে। তাদের রয়েছে আইটি বিশেষজ্ঞ। এবং ইউটিউব চ্যানেলে ভিডিও আপ করার জন্য আলাদা গ্রুপ আছে। মিডিয়া মনিটরিং ও রেকর্ড করার জন্য আছে নির্দিষ্ট গ্রুপ। মনিরুল ইসলাম জানান, ‘ আমাদের কাছে তথ্য আছে যে তারা গত কয়েক বছরে ২০ জনকে দেশের বাইরে থেকে আইটি প্রশিক্ষণ দিয়ে নিয়ে এসেছে।’
টাকা আসে কোথা থেকে
ডিবির পশ্চিম বিভাগের ডেপুটি পুলিশ কমিশনার শেখ নাজমুল আলম প্রিয়.কমকে জানান,‘ বাশেরকেল্লার সঙ্গে যারা সার্বক্ষণিক কাজ করেন তারা মাসিক বেতন পান। আর অন্য যাদের কাছ থেকে ছবি, ভিডিও বা তথ্য নেন তাদেরও তারা সম্মানি দেন। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের জানাগেছে তারা এই পেজগুলো চালাতে মাসে কমপক্ষে ৫০ লাখ টাকা খরচ করেন। আটক ফাহাদ জানিয়েছেন, তাদের সংগঠনই এই অর্থের যোগান দেয়। সে জানায়, তাদের ২০টির মত পেইড পেজ আছে। তার জন্য তাদের বছরে বমপক্ষে ১০ হাজার ডলার খরচ হয়। প্রতিটি পেজের জন্য বছরে ২০০ থেকে ১০০০ ডলার দিতে হয়।এছাড়া তারা বিশেষ কোন আইটেম বুস্টআপও করে নিয়মিত। এজন্যও টাকা খরচ হয়।
গ্রাফিক্স বিভাগ
তাদের একটি দক্ষ গ্রাফিক্স বিভাগ আছে যাদের কাজ হল সুবিধা অনুযায়ী ছবি বিকৃত করা। নানা ধরণের ছবি কোলাজ করে তাদের সুবিধা মত ব্যবহার করা।ডেপুটি পুলিশ কমিশনার শেখ নাজমুল আলম জানান,আটক ফাহাদ জনিয়েছে তারা ভিভিআইপি, বিশিষ্ট ব্যক্তি, সেনা, পুলিশ, বিজিবি, র‌্যাবসহ বিভিন্ন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর বিরুদ্ধে উস্কানিমূলক গ্রফিক্স ডিজাইন করে ফেসবুক পেজেস দেয়া ছাড়াও শিবিরের প্রচার সেলের মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়া হয়।
সে জানিয়েছে বাশেরকেল্লার কাজ হল জামায়াত-শিবির ও রাজনৈতিক বন্ধুদের পক্ষে প্রচারণা চালান। আর বর্তমান সরকারের ‘ অবৈধ’ কাজকে তুলে ধরা।
বাঁশেরকেল্লার দাবী
বাঁশেরকেল্লা তাদের ফেসবুক পেজে জানিয়েছে পুলিশ তাদের প্রধান এডমিনকে আটকের দাবি করেছে করেছে তা অপপ্রচার ছাড়া আর কিছুই নয়। তাদের সকল এডমিন নিরপদ আছে এবং বাঁশেরকেল্লার কার্যক্রম অব্যাহত আছে।

বাঁশের কেল্লা সম্পাদক ৮ দিনের রিমান্ডে

farhad-thereport24-1

তথ্য প্রযুক্তি আইনে করা মামলায় ছাত্রশিবিরের প্রচার বিভাগের প্রধান সমন্বয়ক ও বাঁশের কেল্লার এ্যাডমিন পরিচালনাকারী এম জিয়া উদ্দিন ফাহাদকে আট দিনের রিমান্ড দিয়েছেন আদালত। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হাকিম মোল্ল্য সাইফুল আলম এ রিমান্ড মঞ্জুর করেন। ফাহাদকে শুক্রবার আদালতে হাজির করে পল্লবী থানায় তথ্য প্রযুক্তি আইনে দায়ের করা মামলায় সুষ্ঠু তদন্তের জন্য ডিবি পুলিশের এসআই মিজানুর রহমান দশ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন। এর আগে, শুক্রবার ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে এক প্রেস বিফিংয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (ডিবি) মনিরুল ইসলাম জানান, বৃহস্পতিবার বিকেলে কুমিল্লা ক্যাডেট কলেজের শিক্ষকদের আবাসিক এলাকা থেকে তাকে আটক করা হয়। ‘ফাহাদ বাঁশের কেল্লা’ (মেইন বাঁশের কেল্লা), ‘তিতুমীরের বাঁশের কেল্লা’, ‘আওয়ামী ট্রাইব্যুনাল’, ‘বাকশাল নিপাত যাক’, ‘ডিজিটাল রুপে বাকশাল’, ‘বিএএন বাঁশখালী নিউজ-২৪’, ‘ইসলামী অনলাইন এক্টিভিস্ট’সহ অর্ধশতাধিক ফেসবুক পেইজের এ্যাডমিন পরিচালনা করতেন তিনি। মনিরুল ইসলাম জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ফাহাদ জানিয়েছেন, সে ছাত্রশিবিরের প্রচার বিভাগের প্রধান সমন্বয়ক হিসেবে বর্তমানে নিয়োজিত। সে নিজেও ছদ্মনামে অর্ধশতাধিক ফেসবুক ও ই-মেইল আইডি খুলেছিল। ওই সব আইডি ব্যবহার করে সে দেশের বিশিষ্ট ব্যক্তি, পুলিশ, সেনাবাহিনীসহ বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিরুদ্ধে উস্কানীমূলক ও বিভ্রান্তিমূলক বক্তব্য প্রচার করে আসছিল। ছাত্রশিবিরের বিরুদ্ধে সহানুভূতি সৃষ্টি ও সরকারের বিরুদ্ধে জনমত তৈরিতেও সে প্রচারণা চালাতো বলেও জিজ্ঞাসাবাদে সে স্বীকার করেছে। মামলার এজাহার থেকে জানা গেছে, ফেসবুকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্পর্কে মানহানিকর বক্তব্য প্রকাশ করেন ঢাকা মহানগর জামায়াতে ইসলামীর আমির রফিকুল ইসলাম খানের ছেলে রিফাত আব্দুল্লাহ খান। একই সঙ্গে তিনি পুলিশ বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জীবননাশের হুমকি দেন। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনে ডিবি পুলিশের এসআই তোফাজ্জাল হোসেন পল্লবী থানায় ২১ ফেব্রুয়ারি মামলাটি করেন।


মন্তব্য চালু নেই