বন্যার পরিস্থিতির আরো অবনতি: মানুষের দুঃসহ জীবনযাপন

টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে উত্তরাঞ্চলসহ দেশের বিভিন্ন জেলার বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে। যমুনা, তিস্তা ও ঘাঘট নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি বৃদ্ধির কারণে নদী ভাঙন ও নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। তলিয়ে গেছে আমন, আউশ, বীজতলা এবং শাকসবজি ও ফসলের ক্ষেত। বন্যা প্লাবিত এলাকায় বিশুদ্ধ খাবার পানি ও খাদ্যের অভাবে পানিবন্দী মানুষ মানবেতর জীবনযাপন করছে। অনেক পরিবার ঘর ছেড়ে উঁচু মাচা ও কলা গাছের ভেলায় অবস্থান করছে। এখন পর্যন্ত অনেক স্থানে কোনো ত্রাণসামগ্রী পৌঁছেনি।

দুর্ভোগের পাশাপাশি দুর্গত এলাকায় চলছে ত্রাণের জন্য হাহাকার। এ অবস্থায় খেয়ে না খেয়ে দিন কাটছে বানভাসীদের। আগামী ৭২ ঘণ্টায় লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, নীলফামারী, রংপুর, গাইবান্ধা, বগুড়া, জামালপুর, টাঙ্গাইল, শরীয়তপুর, মাদারীপুর, মুন্সীগঞ্জ, রাজবাড়ী ও ফরিদপুর জেলার বন্যা পরিস্থিতির সামান্য অবনতি হতে পারে। আগামী ৪৮ ঘণ্টায় নেত্রকোনা, সুনামগঞ্জ ও সিলেট জেলার বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে।

গঙ্গা ব্যাতীত সকল প্রধান নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। আগামী ৭২ ঘণ্টায় গঙ্গা নদীর পানি হ্রাস পেতে পারে এবং আগামী ৪৮ ঘণ্টায সুরমা-কুশিয়ারা নদীর পানি হ্রাস পাওয়া অব্যাহত থাকতে পারে। ব্রহ্মপুত্র-যমুনা ও পদ্মা এবং ঢাকা শহর সংলগ্ন নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেতে পারে। আর ঢাকা শহর সংলগ্ন নদ-নদী বুড়িগঙ্গা, বালু, তুরাগ ও টঙ্গি খালের পানি বৃদ্ধি পেলেও তা নিজ নিজ বিপদসীমার নীচ দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে।

পানি উন্নয় বোর্ডের বন্যা তথ্য কেন্দ্রের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বুধবার একথা বলা হয়।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের ৮৩টি পানি মনিটরিং স্টেশনের মধ্যে ৩৫টি স্থানে পানি বৃদ্ধি ও ৩৭টি স্থানে পানি হ্রাস পেয়েছে। ৮টি স্থানে পানি অপরিবর্তিত রয়েছে। ৩টি স্থানের তথ্য পাওয়া যায় নি। নদ-নদীর ২০টি স্থানে পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। উজানে পানি বাড়তে থাকায় দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে ব্রহ্মপুত্র অববাহিকায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে বলে জানিয়েছে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র। আগামী তিন দিনে রাজধানী ঘিরে থাকা নদ-নদীগুলোর পানিও কিছুটা বাড়তে পারে, তবে তাতে নগরীতে বন্যার আশঙ্কা দেখছেন না পূর্বাভাস কেন্দ্রের কর্মকর্তারা। গত সোমবার রাজধানীর মাদারটেকের শেখের জায়গা এলাকায় সংযোগ সড়কের একটি অংশ ভেঙে পাশের বালু নদীর পানি ঢুকে ওই এলাকা প্লাবিত হয়।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের পূর্বাভাস কেন্দ্রের সহকারী প্রকৌশলী রিপন কর্মকার বলেন, বালু নদীর পানির বিপদ সীমার নিচেই ছিল। কিন্তু সংযোগ সড়ক ভেঙে যাওয়ায় ওই ঘটনা ঘটে।

তিনি জানান, রাজধানী সংলগ্ন বুড়িগঙ্গার পানি মঙ্গলবার সকাল ৬টা থেকে ২৪ ঘণ্টায় ১০ সেন্টিমিটার, বালু নদীর পানি ২ সেন্টিমিটার, তুরাগের পানি ৬ সেন্টিমিটার ও টঙ্গী খালের পানি ৫ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে চার ক্ষেত্রেই পানি এখনো বিপদ সীমার নিচে রয়েছে। বুধবার বন্যা পূর্বাভাস সতর্কীকরণ কেন্দ্রের বুলেটিনে বলা হয়েছে, পরবর্তী ৭২ ঘণ্টায় বুড়িগঙ্গা, বালু, তুরাগ ও টঙ্গী খালের পানির সমতল আরো কিছুটা বাড়লেও বিপদসীমার নিচ দিয়েই প্রবাহিত হতে পারে।

রিপন কর্মকার বলেন, পানি বাড়ার এ হার খুব ধীর বলে তা রাজধানীতে কোনো প্রভাব ফেলবে বলে মনে হয় না। ইতোমধ্যে ঢাকার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হলেও ধীরে ধীরে পরিস্থিতির উন্নতি হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।আশপাশের নদীতে পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ঢাকার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হচ্ছে। তবে এ নিয়ে আশঙ্কার কিছু নেই। পানি বৃদ্ধি এক সপ্তাহ অব্যাহত থাকলে তখন ঢাকায় বন্যার আশঙ্কা তৈরি হবে।

জামালপুর
জামালপুরে বন্যার পরিস্থিতি আরো অবনতি ঘটেছে। গত ২৪ঘন্টায় যমুনার বাহাদুরাবাদ ঘাট পয়েন্টে বৃদ্ধি পেয়ে বিপদ সীমার ৩৯ সেন্টি মিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। পুর্বের বন্যার চেয়ে এবার আরো ৩ সেন্টি মিটার বৃদ্ধি পেয়ে গত ২৭আগষ্ঠ বুধবার বিপদ সীমার ৩৯ সেন্টি মিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। এতে করে জেলার দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার ২ ইউনিয়ন, ইসলামপুর উপজেলার ১২ ইউনিয়ন, মেলান্দহ উপজেলার ৬ ইউনিয়ন, মাদারগঞ্জ উপজেলার ৫ইউনিয়ন, সরিষাবাড়ী উপজেলার ৪ ইউনিয়ন, বকসিগঞ্জ উপজেলার ২ ইউনিয়নসহ জামালপুর সদর উপজেলার ১টি ইউনিয়ন বন্যার পানিতে পুরনায় তলিয়ে গেছে। বিশেষ করে যমুনা ও ব্রহ্মপুত্র নদের অববাহিকা দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা চুকাইবাড়ী, চিকাজানী ,ইসলামপুর উপজেলার পার্থর্শী, কুলকান্দি, বেলগাছা, চিনাডুলী, নোয়ারপাড়া, ইসলামপুর সদর, পলবান্দা, গোয়ালের চর, গাইবান্দা, চরগোয়ালীনী ও চরপুটিমারী ইউনিয়ন। মেলান্দহ উপজেলার, শ্যামপুর, মাহমুদপুর, আদ্রা,ফুলকোচা, ঝাউগড়া, ও ঘোষেরপাড়া ইউনিয়ন। মাদারগঞ্জ উপজেলার গুনারীতলা জোড়খালী, বালিজুড়ি ও চর পাকেরদহ ইউনিয়ন। সরিষাবাড়ী উপজেলার পিংনা, আওনা, ও কামরাবাদ, ইউনিয়ন। বকশিগঞ্জ উপজেলার সাদুরপাড়া, মেরুরচর ইউনিয়ন, জামালপুর সদর উপজেলার লক্ষীরচর, ইউনিয়ন বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। এসব এলাকায় নতুন করে প্লাবিত হয়ে প্রায় লক্ষাধীক মানুষ পানি বন্দি হয়ে পড়েছে। হাজার হাজার হেক্টর জমির ফসল বন্যার পানিতে তলিয়ে বিনষ্ট হচ্ছে। এ সকল এলাকা মানুষসহ গৃহপালিত পশু, গরু, ছাগল হাঁস, মরগি পানি বন্দি হয়ে পড়েছে। বন্যা কবলিত মানুষ উচু বাঁধে আশ্রয় নিয়েছে। এসব এলাকায় মানুষ বিশুদ্ধ পানি ও খাদ্যের অভাব তাদের দেখা দিয়েছে বলে জানিয়েছেন চিনাড়ুলি ইউপির চেয়ারম্যান আব্দুস ছালাম ও সাপধুরি ইউপির চেয়ারম্যান সুরুজ মন্ডল। এদিকে মানুষের খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির পাশাপাশি গো খাদ্যে চরম সংকট দেখা দিয়েছে। এব্যাপারে জামালপুরের জেলা প্রশাসক শাহাবউদ্দিন খান জানান এপর্যন্ত বন্যা কবলিত এলাকা দেওয়ানগঞ্জ, ইসলামপুর ও সরিষাবাড়ি ৩ উপজেলায় ৩৩ মে. টন চাল এবং ৫ লাখ টাকা শুকনো খাবার (চিড়া-গুড়) বিতরণ করা হয়েছে। এদিকে বন্যা দুর্গত ভানভাসিরা জানায় ত্রান বিতরনী তোলনায় খুবই অপ্রতুল্য বলে জানিয়েছেন।

ভোলা
আমবশ্যার সৃষ্ট জোয়ারে পঞ্চম দফায় ভোলার ৬ উপজেলার ৭০টি গ্রামসহ নির্মাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এতে পানি বন্দি হয়ে দুর্ভোগে পড়েছেন লক্ষাধিক মানুষ। উপকূলের পানিবন্দি এলাকার ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারগুলো উচুঁ স্থানে আশ্রয় নিলেও খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির অভাবে মানবেতর দিন কাটাচ্ছেন । সরকারের পক্ষ থেকে তেমন সাহায্য পৌঁছায়নি তাদের কাছে।

ভোলা জেলাসহ বিভিন্ন উপজেলায় প্রায় সাড়ে ৩৩ কিলোমিটার বাধঁ নির্মানে ধীরগতির কারনে আমবশ্যা ও পূর্নিমায় সৃষ্ঠ জোয়ারে প্লাবিত হয়ে পানি বন্দি হয়ে পড়ছেন বাঁধের ভেতর ও বাইরের প্রায় দুই লাক্ষাধিক মানুষ। এসব এলাকায় সামান্য জোয়ার এলেই তলিয়ে যায় ঘরভীটা, রাস্তা-ঘাট, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ফসলি জমি আর ভেসে যায় পুকুর ও ঘেরের মাছ। উপকূলের এসব বানবাসি মানুষ ক্ষতি কাটিয়ে বার বার ঘুরে দাড়ানোর চেষ্টা করলেও যেন পানির মধ্যেই ভাসমান দিন কাটাতে হচ্ছে তাদের। এ অবস্থায় পঞ্চম দফায় জোয়ারেও যেন রক্ষা হয়নি তাদের। এরপরেও সরকারের পক্ষ থেকে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি বলে অভিযোগ করেছেন তারা।

কয়েকদিন যাবত মেঘনার পানি বিপদসীমার ৩ দশমিক ৭২মিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় ভোলার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ভেতর ও বাইরে অবস্থিত ২০ টি চরের প্রায় লক্ষাধিক মানুষের এই নিত্য নিয়তি। বর্ষায় এসব চরের মানুষের সামাজিক উৎসব, আনন্দ বেদনা সবকিছুই পানির ওপর ভেসে। বছরের পর বছর ধরে জোয়ার ও বর্ষায় এভাবেই দিন কেটে যাচ্ছে ভোলা সদর উপজেলার রামদাসপুর, নাছির মাঝি, মাঝের চর, দৌলতখান উপজেলার মেদুয়া, মদনপুরা, নেয়ামতপুর, হাজিপুর, বোরহানউদ্দিন উপজেলার মলংচড়া, তজুমদ্দিন উপজেলার চর জহির উদ্দিন, চর তাজাম্মল, মনপুরার চর নিজাম, কলাতলীর চর, লালমোহন উপজেলার কচুয়াখালীর চর ও চরফ্যাশন উপজেলার চর পাতিলা, ঢালচর, নজরুল নগর এলাকার বাসিন্দাদের। পানির কারনে ঘর থেকে বের হতে পারছেন না তারা নৌকাই তাদের চলা চলের একমাত্র বাহন। অমাবস্যা ও পূর্ণিমার সৃষ্ট জোয়ারে এসব চরের মধ্যে বাঁধের ভেতরের এলাকাগুলো প্লাবিত হলেও বাঁধের বাইরের এলাকা সাধারণ জোয়ার এলেই প্লাবিত হয়। ফলে প্রায়ই এসব এলাকার মানুষকে পানিবন্দী জীবন কাটাতে হয়। ফলে ডায়রিয়া, আমাশয়, সর্দি ও জ্বরসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয় এসব চরের বাসিন্দারা। বিশেষ করে শিশুদের ক্ষেত্রে এসব রোগের প্রকোপ দেখা দেয়। নদীতে মাছ শিকার আর জমি চাষাবাদ করে দিন কাটে এদের। তবে জোয়ার ও বন্যার কারণে শত কষ্ট করেও উৎপাদন খরচ উঠাতে পারেন না চাষিরা। এ সময় তাদের ভিটাবাড়ি, ফসলের জমি ও মাছের ঘের, হাস-মুরগি ভেসে যাওয়ায় নিম্ন আয়ের এসব পরিবারের দেখা দেয় চরম অভাব।

এদিকে এলাকাবাসী জানায়, বাঁধের বাইরের এসব মানুষ ঘূর্ণিঝড় মহাসেনের পর নদী ভাঙনসহ কয়েক দফা প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত হলেও সেই ক্ষতি কাটিয়ে কিছুতেই ঘুরে দাঁড়াতে পারছে না। স্থায়ী ঠিকানাহারা এসব পরিবারগুলো সরকারের সাহায্য সহযোগিতার দাবি জানান। ভোলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুল হেকিম বলেন, বাঁধের ভেতরের মানুষ ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। কিন্তু বাঁধের বাইরের মানুষের জন্য নতুন কোনো প্রকল্প নেই। এ অবস্থায় দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহনের মাধ্যমে স্থায়ী বাঁধ নির্মানের দাবী জানান পানি বন্দি এসব মানুষ।

গাইবান্ধা
গাইবান্ধায় সকাল পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় ৪টি প্রধান নদীর পানি বেড়েছে। ফলে গাইবান্ধার চর ও নদী বিধৌত এলাকায় সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। ওদিকে পানি ঢুকে পড়ায় জেলার ৩৫টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, উজানে পাহাড়ি ঢল ও নিরবচিছন্ন বৃষ্টিপাতের কারণে এসময় ব্রহ্মপুত্রে ৭ সে. মিটার, তিস্তায় ১ সে. মিটার, করতোয়ায় ৩৬ সে. মিটার এবং ঘাগট নদীতে ১ সে. মিটার পানি বেড়েছে।প্রধান তিনটি নদী এখনও বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। যেমন ফুলছড়ি ঘাটে ব্রহ্মপুত্র ১৩ সে. মিটার, সুন্দরগঞ্জ পয়েণ্টে তিস্তা ৮৪ সে. মিটার এবং কাটাখালি ব্রিজ পয়েণ্টে করতোয়া বিপদসীমার ১৫৫ সে. মিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অন্যদিকে নিউ ব্রিজ পয়েণ্টে ঘাগট নদী বিপদসীমার ১৪ সে. মিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

কমরজানি এলাকার একজন সমাজকর্মী সাদ্দাম হোসেন জানান, বন্যাদুর্গত বহু মানুষ পার্শ্ববর্তী বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে আশ্রয় নিয়েছে। গৃহপালিত পশুপাখি নিয়ে সেখানে তারা অবর্ণনীয় দুঃসহ জীবনযাপন করছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপতরের উপ-পরিচালক মীর আবদুর রাজ্জাক জানান, চার উপজেলার এক হাজার ৪৫৬ একর ফসলী জমি বন্যার পানিতে ডুবে গেছে। তবে লোকসানের পরিমাণ তাৎক্ষণিকভাবে নিরূপণ করা হয়নি বলে তিনি জানান।

এদিকে জেলার চার উপজেলায় মোট ৩৫টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বন্যার পানি ঢুকে পড়ায় তা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এ কে এম আমিরুল ইসলাম এ কথা জানান।

এরমধ্যে সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় ১৫টি, ফুলছড়ি উপজেলায় ১৬টি, সদর উপজেলায় ৩টি এবং সাঘাটা উপজেলায় ১টি স্কুল রয়েছে।

লালমনিরহাট
তিস্তা নদীর উজানে পাহাড়ি ঢল ও ভারি বৃষ্টিপাতের কারণে আজ দুপুর ১২টায় তিস্তা নদীর ডালিয়া পয়েণ্টে পানি বিপদসীমার ৩০ সেন্টিমিনার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। তিস্তা ব্যারাজের ৪৪টি গেট খুলে দিয়ে ভাটিতে পানি প্রত্যাহার করা হচ্ছে। তিস্তা নদী তীরবর্তী বিভিন্ন এলাকায় নদী ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে।

তিস্তা নদীর পানির তোড়ে জেলার আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা ইউনিয়নের কুটিরপাড় গ্রাম রক্ষায় নির্মিত বালুর বাঁধের অর্ধ কিলোমিটার নদীতে ভেসে গেছে। এছাড়া বিভিন্ন এলাকার শতাধিক ঘরবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে।বন্যায় লালমনিরহাট জেলায় প্রায় ২৫ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। তিস্তার পানি বৃদ্ধির কারণে চরগোকুন্ডা, খুনিয়াগাছ ও নবীনগরে বেশ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সাময়িকভাবে বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

জেলা প্রশাসক জানান, জেলায় ত্রাণ হিসেবে ১৭৩ মেট্রিক টন চাল ওনগদ ৩ লাখ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।

মুন্সীগঞ্জ
বুধবার জেলার বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। ভাগ্যকুল পয়েণ্টে পদ্মার পানি আরও ২ সে. মিটার বৃদ্ধি পেয়ে সকাল ৯টায় বিপদসীমার ১৮ সে. মিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। ফলে শ্রীনগর, লৌহজং, টঙ্গিবাড়ি ও সদর উপজেলার আরও নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। লৌহজং উপজেলার কুমারভোগ ও টঙ্গিবাড়ি উপজেলার কামারখাড়ায় পদ্মার ভাঙ্গন ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। ভাঙ্গনের কারণে টঙ্গিবাড়ি উপজেলার কামারখাড়া বড়াইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হওয়ায় কয়েক হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। বন্যার পানিতে ফসল তলিয়ে গেছে। মুন্সীগঞ্জের জেলা প্রশাসক জানান, বন্যার্তদের জন্য সরকারিভাবে একশ’ টন চাল পাওয়া গেছে। বন্যাকবলিত গ্রামগুলোতে মেডিকেল টিম কাজ করছে।

সিরাজগঞ্জ
সিরাজগঞ্জ জেলার বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। আজ সকালে সিরাজগঞ্জ পয়েণ্টে যমুনার পানি বিপদসীমার ১২ সে. মিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। জেলা প্রশাসক জানান, ৫টি উপজে লার ৩৩টি ইউনিয়ন বন্যা কবলিত হয়েছে। এতে প্রায় ২ হাজার বাড়ি সম্পূর্ণ ও প্রায় ১২ হাজার বাড়ি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রায় ৪ হাজার হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া ৪৮ হাজার পরিবারসহ ১৫৩টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তিনি জানান, বন্যাকবলিত মানুষের মধ্যে সরকারিভাবে ২৫০ মেট্রিক টন চাল ও নগদ ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা বিতরণ করা হয়েছে।

টাঙ্গাইল
যমুনা ও ধলেশ্বরী নদীর পানি স্থিতিশীল থাকায় টাঙ্গাল জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। জেলার লৌহজং, এলাজোনি, ঝিনাই ও বংশী নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় নদী তীরবর্তী এলাকায় বন্যা দেখা দিয়েছে। ফলে টাঙ্গাইল সদর, ভুঞাপুর, গোপালপুর, নাগরপুর, কালিহাতী ও বাসাইল উপজেলার ২৫টি ইউনিয়নের নদী তীরবর্তী লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী অবস্থায় রয়েছে। জেলায় ত্রাণ তৎপরতা চলছে। বন্যাকবলিত এলাকায় বিশুদ্ধ খাবার পানির সংকট দেখা দিয়েছে। বন্যাকবলিত এলাকায় ফসলী জমি, সবজি ক্ষেত ও মাছের ঘের তলিয়ে গেছে।

ফরিদপুর
উজান থেকে বন্যার পানি আসায় ফরিদপুর জেলার সদর, চরভদ্রাসন ও সদরপুর উপজেলার চর ও নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। জেলায় ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ জোরদার করা হয়েছে।জেলা প্রশাসক জানান, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় ত্রাণ বিতরণ শুরু হয়েছে এবং তা অব্যাহত রয়েছে।

নীলফামারী
নীলফামারীর ডালিয়ায় অবস্থিত তিস্তা ব্যারাজ থেকে ৬৫ কিলোমিটার উজানে ভারতের দোমোহনী থেকে বাংলাদেশ সীমান্ত ডিমলা উপজেলার কালিগঞ্জ (বাংলাদেশের প্রবেশদ্বার তিস্তা নদী) পর্যন্ত ভারতের সেচ অধিদপ্তর তিস্তার অসংরক্ষিত এলাকায় চূড়ান্ত সতর্কতা জারি করার খবরে তিস্তা অববাহিকায় সতর্কতা অবলম্বন করেছে ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ড। এজন্য তিস্তা অববাহিকার চরগ্রাম ও ফ্লাড ফিউজ এলাকার বসবাসকৃত পরিবারগুলোকে নিরাপদে সরে যেতে বলা হয়েছে।

তিস্তা ব্যারাজ কর্তৃপক্ষ জানায়, গত ২৪ ঘন্টায় বাংলাদেশের তিস্তা অববাহিকায় কোন বৃষ্টিপাত ছিল না। তবে উজানের প্রচন্ড ঢল নতুন করে বন্যার সৃষ্টি করছে। ফলে ব্যারাজের ৪৪টি গেট খুলে দেয়া হয়েছে।



মন্তব্য চালু নেই