বঙ্গবীরের শুনানি : বিচারপতির বক্তব্য বোঝেননি ইসির আইনজীবী?

ভাইয়ের আসনে উপনির্বাচন করতে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী। কিন্তু ঋণ খেলাপির অভিযোগে তার মনোনয়নপত্রটি বাতিল হয়ে যায়। এ নিয়ে হাইকোর্টে যান তিনি। অবশেষে বুধবার আদালত তার পক্ষে রায় দিলেন। তবে এই রায় ঘোষণার আগে শুনানিতে বিচারপতি আর নির্বাচন কমিশনের পক্ষের আইনজীবীর মধ্যে মৃদু বিতর্ক হয়েছে।

হাইকোর্ট বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মিফতাহ উদ্দিন চৌধুরী কাদের সিদ্দিকীর রিট আবেদনের শুনানিকালে ইসির আইনজীবী অ্যাডভোকেট তৌহিদুল ইসলামের কাছে মনোনয়নপত্র বাতিলের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মাই লর্ড, নির্বাচন কমিশনে সিদ্দিকীর ঋণখেলাপির বিষয়ে রিপোর্ট আসায় কমিশন তার মনোনয়নপত্র বাতিল করেছে। সিদ্দিকী সাহেব ও তার স্ত্রীর ব্যাপারে ব্যাংক থেকে যে সকল রিপোর্ট আমাদের কাছে এসেছে তাতে উল্লেখ আছে সিদ্দিকী দম্পত্তি (কাদের সিদ্দিকী ও তার স্ত্রী নাসরিন সিদ্দিকী) দুইজনই ঋণখেলাপি।’

তখন আদালত এই আইনজীবীর উদ্দেশে বলেন, ‘সুদ মওকুফ হলো, সময় দেয়া হলো, তারপরেও নির্বাচনে অংশ নেয়ার সুযোগ নেই, এটা হয় নাকি?‘

আদালত আরো বলেন, ‘আপনি কি বিষয়টি পরিষ্কার বুঝতে পেরেছেন?’ উত্তরে তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ‘মাই লর্ড, আমি বিষয়টি পরিষ্কার বুঝতে পারি নাই।’

এ পর্যায়ে আদালত বলেন, ‘তাহলে বসুন, আমাদেরকে বুঝতে দিন।’

এরপর লেখা শুরু হয় বঙ্গবীরের রিটের আদেশ। টাঙ্গাইল-৪ (কালীহাতি) আসনের উপ-নির্বাচনে বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর মনোনয়নপত্র গ্রহণের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে সিদ্দিকীর মনোনয়নপত্র বাতিলের সিদ্ধান্ত কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন। পাশাপাশি কাদের সিদ্দিকীর মনোনয়নপত্র বাতিলে টাংগাইল জেলার রিটার্নিং অফিসারের গত ১৩ আগস্ট ও নির্বাচন কমিশনের নেয়া ১৮ আগস্টের নেয়া সিদ্ধান্ত স্থগিত করতে বলেন। আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে নির্বাচন কমিশন (ইসি), প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইস), টাঙ্গাইলের জেলা রিটার্নিং অফিসার, অগ্রনী ব্যাংক, বাংলাদেশ ব্যাংককে এই রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

পরে আদালত থেকে বেরিয়ে কাদের সিদ্দিকীর আইনজীবী রাগীব রউফ বলেন, ‘হাইকোর্টের এ আদেশের ফলে কাদের সিদ্দিকীর নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন, এতে কোনো বাধা নেই।’

তিনি বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে কাদের সিদ্দিকীর ঋন খেলাপির বিষয়ে পাওয়া নথির প্রেক্ষিতে তার মনোয়নপত্র বাতিল করেছিল। কিন্তু সংশ্লিষ্ট ব্যাংক লোনের ওপর সুদ মওকুফ করেছে এবং লোন পরিশোধ করতে দশ বছরের সময় দিয়েছে। এরপর আইনগতভাবে নির্বাচনে অংশ নিতে তার আর বাধা ছিল না। কিন্তু তারপরও নির্বাচন কমিশন মনোনয়নপত্র বাতিল করেছিলেন। এটিকে চ্যালেঞ্জ করে আমরা রিট আবেদনটি দায়ের করেছিলাম।’

এ দিকে নির্বাচন কমিশনের আইনজীবী অ্যাডভোকেট তৌহিদুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেছেন, তারা হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করবেন।

প্রার্থিতা বাতিলের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে দায়ের করা কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর রিটের শুনানি করে বিচারপতি মিফতাহ উদ্দিন চৌধুরী ও বিচারপতি কাজী মো. ইজারুল হক আকন্দের অবকাশকালীন বেঞ্চ।

আদালতে কাদের সিদ্দিকীর পক্ষে শুনানি করেন সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এ জে মোহাম্মদ আলী, সঙ্গে ছিলেন ব্যারিস্টার রাগীব রউফ চৌধুরী ও অ্যাডভোকেট রুবায়েত হোসেন। অরপদিকে নির্বাচন কমিশনরে (ইসি) পক্ষে আদালতে শুনানী করেন অ্যাডভোকেট তৌহিদুল ইসলাম।

এদিকে এ মামলায় পক্ষভুক্ত না হয়েও আদালতের অনুমতিক্রমে রাষ্ট্রপক্ষে কিছু সময়ের জন্য আদালতে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাডভোকেট মাহবুবে আলম। পক্ষ না হয়েও বাংলাদেশের যে কোনো আদালতে যে কোনো মামলার বিষয়ে শুনানি করতে সাংবিধানিকভাবে অধিকার রাখেন অ্যাটর্নি জেনারল এমন কথা আদালতের সামনে উপস্থাপন করলে আদালত তখন তাকে এ মামলায় শুনানি করার সুযোগ দেন।

উল্লেখ্য, টাঙ্গাইল-৪ (কালিহাতী) আসন থেকে দশম সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন কাদের সিদ্দিকীর ভাই লতিফ সিদ্দিকী। গত ১ সেপ্টেম্বর তিনি পদত্যাগ করায় আসনটি শূন্য ঘোষণা করে ৩ সেপ্টেম্বর গেজেট প্রকাশ করে সংসদ সচিবালয়।

এরপর নির্বাচন কমিশন এ আসনে উপ-নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে। সে মোতাবেক আগামী ১০ নভেম্বর এ আসনে উপ-নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

এতে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের প্রার্থী হিসেবে কাদের সিদ্দিকী ও তার স্ত্রী নাসরিন সিদ্দিকী মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। কিন্তু ঋণখেলাপের অভিযোগে গত ১৩ অক্টোবর (মঙ্গলবার) রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. আলীমুজ্জামান তাদের মনোনয়নপত্র বাতিল ঘোষণা করেন। এরপর গত ১৬ অক্টোবর শুক্রবার এই দুই নেতা রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ইসিতে আপিল আবেদন করেন।

গত রোববার বিকেলে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিবউদ্দীন আহমদের নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের নির্বাচন কমিশন কাদের সিদ্দিকীর আপিল খারিজ করে রায় দেন। এ খারিজাদেশের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে গতকাল মঙ্গলবার হাইকোর্টে রিট করেন কাদের সিদ্দিকী।বাংলামেইল



মন্তব্য চালু নেই