বগুড়ায় ধর্ষন করে পাঁচ নারীসহ সাত জনকে খুনের অভিযোগে ৬ যুবক আটক

বগুড়ায় পাঁচ নারীসহ সাত জনকে খুনের অভিযোগে এক যুবককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গ্রেপ্তার করা হয় তার পাঁচ সহযোগীকেও। ঢাকার দক্ষিণখান এলাকার একটি বাসা থেকে গত শনিবার (১৯ এপ্রিল) মোমিন ওরফে বাবু মণ্ডল ওরফে পিচ্চি বাবুকে (৩৫) গোয়েন্দা পুলিশ গ্রেপ্তার করে। বুধবার বগুড়ায় নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সামনে এ সাত খুনের বিবরণ দেন পুলিশ সুপার (এসপি) মোজাম্মেল হক। এসপি জানান, বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে পিচ্চি বাবু ২০০৫ সাল থেকে এ পর্যন্ত পাঁচ নারীকে ধর্ষণ ও হত্যা করে বলে পুলিশের কাছে স্বীকার করেছে। সংবাদ ব্রিফিংয়ে এসপি জানান, গত ১৮ এপ্রিল বগুড়ার শিবগঞ্জে এক কিশোরের হত্যাকাণ্ডের তদন্ত করতে গিয়ে পুলিশ শিবগঞ্জের নন্দীপুর গ্রামের সামছুল আলমের ছেলে মোমিন ওরফে বাবু মণ্ডল ওরফে পিচ্চি বাবুর সন্ধান পায়। পরে গোয়েন্দা পুলিশের একটি বিশেষ দল তার কথিত স্ত্রী নিপা আক্তারের সহায়তায় ঢাকার দক্ষিণখান এলাকার একটি বাসা থেকে কথিত মা পারুল আক্তারসহ পিচ্চি বাবুকে গ্রেপ্তার করে। পরে তার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী ময়দানহাটা ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য আইনুল হক, সারোয়ার ও জলিলকে গ্রেপ্তার করা হয়। বাকি দুজনের নাম জানা যায়নি।

পিচ্চি বাবুর বরাত দিয়ে এসপি জানান, পিচ্চি বাবু মাদক ব্যবসা, দেহ ব্যবসা এবং চোনাচোরাচালানের সঙ্গে জড়িত ছিল। ব্যবসায়িক দ্বন্দ্বের জেরে ২০০৫ সালে সে প্রথম খুন করে ঢাকার যাত্রাবাড়ীর তরমুজ ব্যবসায়ী ছামাদকে (৪০)। ছামাদকে সে ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গা উপজেলায় নিয়ে তাকে হত্যা করে ৫০ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয়। এরপর সে ঢাকায় ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে দেহ ব্যবসা শুরু করে। তখন থেকে বিভিন্ন তরুণীকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণ ও হত্যা করে। ২০১০ সালের জুলাইয়ে সোনিয়া (২০) নামের এক তরুণীকে ঢাকা থেকে শিবগঞ্জে আনে এবং ধর্ষণ শেষে গলায় ফাঁস দিয়ে হত্যা করে লাশ ধানক্ষেতে ফেলে রাখে।

২০১১ সালের অক্টোবরে লাকী আকতারকে (১৮) ঢাকার এক আবাসিক হোটেল থেকে আনে শিবগঞ্জে। তাকেও আরো কয়েকজনসহ ধর্ষণ ও হত্যা শেষে মোকামতলা মেঘাখর্দ গ্রামের ঈদগাহ মাঠের পাশে ভুট্টা ক্ষেতে ফেলে রাখে। ২০১২ সালের ডিসেম্বরে তানিয়াকে (২২) ঢাকার পল্টন মোড় থেকে শিবগঞ্জ এনে গণধর্ষণের পর হত্যা করে। ২০১৩ সালের অক্টোবরে লিপিকে (২০) শিবগঞ্জ আনে ঢাকার মহাখালী থেকে। পরে তার কানের দুল, মোবাইল ফোনসহ সঙ্গে থাকা মালামাল লুট করে গণধর্ষণের পর হত্যা করে লাশ একটি হলুদ ক্ষেতে ফেলে রাখে। একই বছরের নভেম্বরে শাপলাকে (২০) ঢাকা থেকে শিবগঞ্জ এনে ধর্ষণের পর গলায় ফাঁস দিয়ে হত্যা করে।

এসপি আরো জানান, সর্বশেষ গত ৫/৬ মাস আগে পিচ্চি বাবু ঢাকায় একটি এনজিওতে কর্মরত নিপা আক্তারকে বিয়ে করে। গত ১৮ এপ্রিল দুর্ঘটনায় আহত হওয়ার মিথ্যা খবর দিয়ে তার স্ত্রী নিপাকে শিবগঞ্জ আসতে বলে। তার কথামতো নিপা তার ভাগ্নে সুজনকে (১৬) সাথে নিয়ে ওইদিন সন্ধ্যায় বাসে এসে মহাস্থান নামে। পরে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করে নিপা ও সুজনকে তার নিজের বাড়ি না নিয়ে তার গ্রামের বাড়ি শিবগঞ্জের ময়দানহাটা ইউনিয়নের মহব্বত নন্দীপুর মাঠে নিয়ে যায়। ওই সময় বাড়ি গেলে গ্রামের লোকজন তাকে ধরে পুলিশে দেবে বলে ভয় দেখায়। রাত ১১টার দিকে নিপার ভাগ্নে সুজনকে কৌশলে একটু দূরে নিয়ে গিয়ে গলায় ফাঁস দিয়ে হত্যা করে। এরপর ফিরে এসে নিপাকে ধর্ষণ করে হত্যার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়। পরে নিপাকে রেখে পালিয়ে যায় পিচ্চি বাবু। এরপর সুজন হত্যার খবর জানাজানি হলে নিপা লাশ শনাক্ত করে।

এসপি বলেন, পরবর্তীতে সুজন হত্যামামলার তদন্ত করতে গিয়ে পুলিশ নিপার সন্ধান পায় এবং তার সহায়তায় পিচ্চি বাবুকে গ্রেপ্তার করে। ঘটনার বিবরণ দেয়ার সময় পিচ্চি বাবুসহ গ্রেপ্তার সব ব্যক্তিকে সাংবাদিকদের সামনে হাজির করা হয়।



মন্তব্য চালু নেই