ফেসবুক পেজে নজরদারিতে বিশেষ গোয়েন্দা ইউনিট

সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইট ফেসবুকের ফ্যানপেজ, ফ্যানপেজ ও গ্রুপ থেকে উসকানিমূলক বক্তব্য প্রচার করা হচ্ছে। আনলাইনে সক্রিয় মেধাবী তরুণ প্রজন্মকে ধর্মীয় অনুভূতির মাধ্যমে সশস্ত্র জিহাদে আগ্রহী করে তুলছে একটি জঙ্গি গোষ্ঠী। এমন বেশ কিছু ওয়েবপেজ শনাক্ত করেছে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
আইএস এর কথিত সদস্য হিফজুর রহমানসহ গ্রেপ্তার হওয়া ১৩ জঙ্গি সদস্যেকে জিজ্ঞাসাবাদেও মিলেছে অনেক তথ্য। হিফজুর রহমান একটি নিজস্ব ওয়েবপেজের মাধ্যমে দেশ বিদেশে যোগযোগ স্থাপনে বিশেষ ভূমিকা রাখছিলেন।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, সাম্প্রতি সাইবার ক্রাইমে জঙ্গিবাদ বিস্তারের নতুন মাত্রার কারণে পুলিশ সদর দপ্তরের উদ্যোগে সাইবার ক্রাইম অ্যান্ড কম্পিউটার ফরেনসিক ইউনিট (Cyber Crime & Computer Forensic Unit) গঠনের কাজ শুরু হয়েছে। ডিবি পুলিশই পরিচালনা করবে এ বিশেষ ইউনিটের কার্যক্রম। তত্ত্বাবধানে থাকবেন একজন অতিরিক্ত উপ-কমিশনার।
জানতে চাইল ডিবির যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘জঙ্গিরা এখন অনলাইনের মাধ্যমে তারা নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ করছে, তাদের নিজস্ব ধারণা, কথিত জিহাদ ও খেলাফতে উদ্বুদ্ধকরণের বার্তা এবং ভিডিও চিত্রও প্রচার করছে। বিভিন্ন ওয়েবপেজে ‘হিন্দ’ শব্দটি যুক্ত করে দিচ্ছে। গ্রেপ্তার জঙ্গিদের প্রত্যেকের ফেসবুক পেজে উসকানিমূলক অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মিলেছে। বিশেষ করে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জেএমবির সদস্য হিফজুরের ফেসবুকে দক্ষিণ এশিয়ার জঙ্গি নেটওয়ার্ক সম্পর্কে বিশেষ ধারণা পাওয়া গেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘অনলাইনে জঙ্গিবাদ ছড়িয়ে দেয়া চক্রকে শনাক্ত করতে আমরা নতুন ফরমেটে কাজ শুরু করেছি।’
গোয়েন্দারা জানান, ইসলামের আলো, বাঁশের কেল্লা, সালাউদ্দিনের ঘোড়া (জসিম উদ্দিন রাহমানীর পেজ), দৃষ্টিভঙ্গি, যদি রাত পোহালে শোনা যেত শেখ হাসিনা মরে গেছে, দ্য মেসেজ অব ইসলাম, ইসলাম-ই-রাজনীতি, শিবির সংবাদ, জিহাদের ঝান্ডা আমরা চিরদিন উঁচু রাখব, বাগদাদ থেকে বাংলা, জিহাদ আর জিহাদ, i am muslim, i love islam, we are jihadi, আইএসআইএস (Islamic State in Indian Subcontinent), তিতুমীর-১, তিতুমীর-২, বাঁশের কেল্লা (ফিনল্যান্ড, লন্ডন, ইউএসএ), বাঁশের কেল্লা-নিউ, টিনের চালে কাক আমি তো অবাকসহ কয়েকটি ফেসবুক পেজে ধর্মীয় উসকানিমূলক বক্তব্য ছড়াচ্ছে জঙ্গিরা। এসব পেজে অনেক ধর্মভীরু মানুষ না বুঝেই লাইক দিচ্ছেন। অনেকে মতবাদ বিনিময়ে জঙ্গিবাদের নেটওয়ার্কে যুক্ত হয়ে পড়ছেন।
তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, গত ১৩ সেপ্টেম্বর হিফজুর তার ফেসবুক পেজে ‘আমি কেন এই জালিম তাগুত সরকারকে ভয় পাই না জানেন? তাহলে শুনুন…।’ এর আগে গত ৯ সেপ্টেম্বর হিফজুর তার ফেসবুক পেজে পোস্ট করে, ‘গণতন্ত্রে লাত্থি মারো শরীয়াহ কায়েম করো’ স্ট্যাটাস দেন। স্ট্যাটাসের একটি অংশে হিফজুর লিখেন, ‘আল কায়েদা ইন ইন্ডিয়ান সাব-কন্টিনেন্ট (AQIS) এর মূল লক্ষ্য সমূহ…।’
২০১৩ সালের ডিসেম্বর মাসে ‘আইএসআই বাংলাদেশ নামে’ হিফজুর ফেসবুক পেজ খোলেন। এরপর চলতি বছরের ৮ সেপ্টেম্বর হিফজুর তার ফেসবুক পেজে বিভিন্ন জঙ্গি লিংক বাড়ান। গত ২১ সেপ্টেম্বর তার ফেসবুক পেজে জঙ্গি লিংক ব্যাপক হারে পাওয়া যায়। সেখানে ২ হাজার ৪০৯টি লাইক পড়ে। ছয় দিনের মধ্যে ওই পেজে লাইক বেড়ে হাজার ছাড়িয়ে যায়। এভাবে ক্রমান্বয়ে ইন্টারনেটের মাধ্যমে জঙ্গি প্রচার বাড়ানোর চেষ্টা করেন হিফজুর। বর্তমানে ফেসবুকে তার বন্ধুর সংখ্যা ২ হাজার ১০৩ জন।
হিফজুরের পুরো পরিবার ধর্মীয় উগ্রপন্থিতে বিশ্বাসী বলে দাবি গোয়েন্দাদের। তার বাবার নাম ক্বারী হোসাইন আহমেদ। হবিগঞ্জের ইসলামাবাদ আবাসিক এলাকা রুহুবেল এলাকায় তার বাড়ি। তারা সাত ভাইবোন। বর্তমানে পরিবারের বেশিরভাগ সদস্য বিদেশে থাকে। হিফজুর সিলেটের শাহজালাল উপ-শহর এলাকার সরকারি তিব্বিয়া কলেজের ‘ন্যাচারাল মেডিসিনে’ ডিপ্লোমা দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। জিহাদি কাজে অংশ নিতে জেএমবি তার পছন্দের সংগঠন। আইএস এর জন্য যোদ্ধা সংগ্রহ করতে চার মাস আগে তিনি লন্ডন থেকে বাংলাদেশে এসেছেন। দেশে আসার পর তিনি দেশের বিভিন্ন জঙ্গি গ্রুপগুলোর সঙ্গে একাধিক বৈঠক করেছেন। রাজধানীর গুলশানের আজাদ মসজিদ ও সিলেটের হযরত শাহজালাল মাজার মসজিদে বৈঠক করেন তিনি। বৈঠকে জেএমবি ও আনসারুল্লাহসহ অন্য জঙ্গি সংগঠনের সদস্যরাও উপস্থিত ছিলেন।
জিজ্ঞাসাবাদে হিফজুর গোয়েন্দাদের জানান, আন্তজার্তিক ইসলামি উগ্রপন্থি সংগঠনের সহায়তায় বাংলাদেশে নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করার পরিকল্পনার কথা স্বীকার করেছেন হিফজুর । গত ১৮ সেপ্টেম্বর আশুলিয়া থেকে গ্রেপ্তার হওয়া জেএমবির স্বঘোষিত ভারপ্রাপ্ত আমির আব্দুল্লাহ আল তাসনিম ওরফে নাহিদ ও আইটি এক্সপার্ট সিকান্দার আলী নকির সঙ্গেও তার একাধিক বৈঠকের কথা স্বীকার করেছেন। তার সঙ্গে ওই বৈঠকের পর জেএমবির কমপক্ষে ১৬ সদস্য সিরিয়ায় আইএসএর সঙ্গে যোগ দিতে পাসপোর্ট সংগ্রহ করে। এরা হামদাদ নামে যুক্তরাজ্যের এক নাগরিকের সঙ্গেও ফেসবুকে নিয়মিত যোগযোগ স্থাপন করতেন। এদেরকে সিরিয়া যেতে উদ্বুদ্ধ করেন হামদাদই।



মন্তব্য চালু নেই