ফেরত যাচ্ছে এডিপি বরাদ্দের টাকা

নির্ধারিত সময়ের মধ্যে খরচ করতে না পারায় বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) বরাদ্দের ৮ হাজার কোটি টাকার বেশি ফেরত যাচ্ছে। বরাদ্দের অনুকূলে যেসব মন্ত্রণালয় ও বিভাগ পুরো অর্থ ব্যয় করতে পারেনি, তারা অর্থ ফেরত দেয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। এর মধ্যে শুধু পদ্মা সেতু প্রকল্প থেকে ফেরত যাচ্ছে ৩ হাজার ২০০ কোটি টাকা।

এছাড়া অর্থবছরের ১১ মাসে সকল মন্ত্রণালয় ও বিভাগ মিলে এডিপি বরাদ্দের মাত্র ৬৭ শতাংশ অর্থ ব্যয় কতে পেরেছে। ফলে মাত্র এক মাসে সরকারের সামনে চ্যালেঞ্জ থাকছে ৩৩ শতাংশ এডিপি বাস্তবায়নের।

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি) সূত্রে জানা গেছে, এই অবস্থায় চলতি অর্থবছরেও শতভাগ এডিপি বাস্তবায়ন নিয়ে শঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে।

বিভাগটির সর্বশেষ প্রতিবেদনের তথ্য মতে, লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ২০১৪-১৫ অর্থবছরের শেষ মাসে সরকারকে ব্যয় করতে হবে ২৫ হাজার কোটি টাকার বেশি, যা প্রায় অসম্ভব বলেই মনে করছেন খাতসংশ্লিষ্টরা।

জানা গেছে, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে এডিপি বরাদ্দের পুরো অর্থ খরচ করতে না পারায় বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগ অর্থ ফেরত দেয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ফেরত যাচ্ছে পদ্মা সেতু প্রকল্পের অর্থ। প্রকল্পটির ৩ হাজার ২০০ কোটি টাকা ফেরত যাচ্ছে। এই বিপুল পরিমাণ অর্থ ফেরতের বিষয়ে সেতু বিভাগ থেকে গত মাসের শেষ দিকেই চিঠি পাঠানো হয় পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে। এরই মধ্যে মন্ত্রণালয় তা অনুমোদন করেছে।

কয়েকটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ ৫ হাজার কোটি টাকা ফেরত দিচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে শিল্প মন্ত্রণালয়, ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

যদিও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় ও আইএমইডি থেকে বলা হচ্ছে, অর্থবছরের শেষ নাগাদ এডিপি বাস্তবায়ন শতভাগের কাছাকাছিই হবে।

এ ব্যাপারে আইএমইডি সচিব মো. শহীদ উল্লা বুধবার বলেন, ‘এখনো ফোর্থ কোয়ার্টার বাকি। তাছাড়া অনেক প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে, কিন্তু হিসাব এখনো শেষ হয়নি। তাই বাস্তবায়নের হারও কম এসেছে।’

তিনি বলেন, ‘আমরা আশাবাদী অর্থবছরের শেষ নাগাদ এডিপি বাস্তবায়ন শতভাগ হবে। আমরা সেই লক্ষ্যেই কাজ করে যাচ্ছি।’

এদিকে বুধবার মূল্যস্ফীতি বিষয়ে মিট দ্য প্রেস অনুষ্ঠানে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, ‘আগামী ১ জুলাই থেকে সকল ক্ষেত্রে পরিবর্তন দেখতে পাবেন। আমরা এডিপি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সংস্কার হাতে নিয়েছি। এর ফল পাওয়া যাবে আগামী বছর থেকে।’

এ বিষয়ে মন্ত্রী আরো বলেন, ‘আমাদের দেশে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন পর্যালোচনা করলে দেখা যায় প্রথম তিন প্রান্তিকে যে পরিমাণ বাস্তবায়ন হয়, শেষ প্রান্তিকে এসে সেই তিন প্রান্তিকের সমান বাস্তবায়ন হয়। আসলে প্রথম প্রান্তিকে বর্ষাকাল থাকায় আমরা ঠিকমতো কাজ করতে পারি না। এছাড়াও টাকা ছাড়ের ক্ষেত্রে আগে কিছু কড়াকড়ি নিয়ম ছিল। প্রতি প্রান্তিকেই টাকা ছাড়ের ক্ষেত্রে অনুমোদন নিতে হতো। এখন টাকা ছাড়ের নিয়ম সহজ করা হয়েছে। শুধু চতুর্থ প্রান্তিকে এসে টাকা ছাড়ের অনুমতি নিতে হয়। যদি প্রয়োজন হয় তবে আগামীতে চতুর্থ প্রান্তিকেও যাতে টাকা ছাড়ের অনুমতি নিতে না হয় সে ব্যবস্থা করবো যাতে করে বাস্তবায়ন কাজ বৃদ্ধি পায়। আমি আশা করছি, অন্যান্য বছরের মতো এবারও এডিপি বাস্তবায়ন হার ১০০ ভাগের কাছাকাছি হবে।’

এডিপি বাস্তবায়ন চিত্র: আইএমইডি’র সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, অর্থবছরের ১১ মাস শেষে এখনো ১০টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের বাস্তবায়নের হার ৫০ শতাংশের নীচে। এর মধ্যে ২টি মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন হার ২০ শতাংশেরও নীচে।

তথ্যমতে, চলতি অর্থবছর এডিপি বাস্তবায়নে সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়। ১৫ প্রকল্পে মন্ত্রণালয়ের জন্য বরাদ্দ ছিল ৩ হাজার ৭৭০ কোটি ৯১ লাখ টাকা। আর ব্যয় হয়েছে ৩ হাজার ৬৫৪ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। এ হিসাবে এডিপি বাস্তবায়নের হার ৯৭ শতাংশ। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের পর রয়েছে পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগ ৮৫ শতাংশ এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ৮৪ শতাংশ। এডিপি বাস্তবায়নে এগিয়ে থাকা অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের মধ্যে রয়েছে যথাক্রমে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় ৮৩ শতাংশ, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় ৮১ শতাংশ এবং গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় ৮০ শতাংশ।

এডিপি বাস্তবায়নে সবচেয়ে পিছিয়ে রয়েছে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ ১৪ শতাংশ ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ১৯ শতাংশ। এছাড়া জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ৩৪ শতাংশ ও শিল্প মন্ত্রণালয় ৩৯ শতাংশ এডিপি বাস্তবায়ন করেছে। অন্য মন্ত্রণালয়গুলো অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে ৪০ শতাংশের বেশি এডিপি বাস্তবায়ন করেছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ৮০ বা তার বেশি শতাংশ এডিপি বাস্তবায়নকারী মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর বরাদ্দ তুলনামূলক কম। তাই সার্বিক এডিপিতে তাদের প্রভাব খুব বেশি পড়েনি। আর সর্বোচ্চ বরাদ্দ পাওয়া মন্ত্রণালয়গুলোর এডিপি বাস্তবায়নচিত্র তুলনামূলক খারাপ। এর মধ্যে সবচেয়ে পিছিয়ে রয়েছে সেতু বিভাগ।

আইএমইডির তথ্যমতে, চলতি অর্থবছর সর্বোচ্চ উন্নয়ন বরাদ্দ রয়েছে স্থানীয় সরকার বিভাগে, যা মোট এডিপির ১৭ শতাংশ বা ১৩ হাজার ৩৬৯ কোটি ৮০ লাখ টাকা। এর মধ্যে ১১ মাসে ব্যয় হয়েছে ১০ হাজার ৪৬১ কোটি টাকা। বাস্তবায়নের হার ৭৮ শতাংশ।

তবে পদ্মা সেতুর বরাদ্দের বড় অংশ ব্যয় না হওয়ায় সেতু বিভাগের এডিপির বড় অংশই অব্যবহৃত রয়ে গেছে। ৮ হাজার ৬৫৩ কোটি ৪৫ লাখ টাকা বরাদ্দের বিপরীতে ১১ মাসে সেতু বিভাগ ব্যয় করেছে ৩ হাজার ৭৭৩ কোটি ৯৪ লাখ টাকা। বাস্তবায়নের হার ৪৪ শতাংশ। এছাড়া বিদ্যুৎ বিভাগ ৭০ শতাংশ, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা ৭২, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় ৫৬, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ ৭৬, শিক্ষা মন্ত্রণালয় ৬৪, রেলপথ মন্ত্রণালয় ৭৭ শতাংশ এবং জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ ৬৭ শতাংশ এডিপি বাস্তবায়ন করেছে।

উল্লেখ্য, চলতি অর্থবছরে ৮০ হাজার ৩১৫ কোটি টাকার মূল এডিপি অনুমোদন দেয়া হয়েছিল। গত মার্চে সংশোধিত এডিপি প্রণয়নের সময় ৫ হাজার ৩১৫ কোটি টাকা কেটে নেয়া হয়। এতে সংশোধিত এডিপির আকার দাঁড়ায় ৭৫ হাজার কোটি টাকায়।

এতে বাস্তবায়নাধীন প্রকল্প রয়েছে ১ হাজার ৩৫১টি। বছরের প্রথম ১১ মাসে ব্যয় হয়েছে ৪৯ হাজার ৯৩১ কোটি ২৫ লাখ টাকা। অর্থাৎ উন্নয়ন বরাদ্দের ৩৩ শতাংশ অর্থ এখনো ব্যয় হয়নি। রাইজিংবিডি



মন্তব্য চালু নেই