ফিটনেসবিহীন রেলে বাড়ছে দুর্ঘটনা!

ইঞ্জিন ও বগির ফিটনেস তো নেই। ফিটনেস নেই রেললাইনেরও। ফলে দিনের পর দিন আশঙ্কাজনকহারে বাড়ছে রেল দুর্ঘটনা- যা সারানোর কোন চিন্তা কর্তকর্তা ও কর্মচারিদের। অথচ এই কর্মকর্তা ও কর্মচারিরাই রেল থেকে কোটিপতি হচ্ছেন- এমন অভিযোগের অন্ত নেই!

এ কারণে অবহেলার শিকার হয়ে প্রতিদিন কোন না কোন স্থানে চলন্ত ট্রেনের সঙ্গে যাত্রীবাহী লেগুনা, বাস, ট্রাক ও টে¤েপার মুখোমুখি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে। ঘটছে লাইনচ্যুতির ঘটনাও। প্রতিনিয়ত ছোট-বড় নানা দুর্ঘটনা যেন লেগেই আছে রেলে।

সংশ্লিষ্টদের মতে, বিশ্বের রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা যখন আকাশ পথে বিমান চলাচলের মত উন্নত পর্যায়ে পৌঁছাচ্ছে, বাংলাদেশে ঠিক তখনই মান্ধাতার আমলের ক্রয় করা মেয়াদোত্তীর্ণ ইঞ্জিন ও বগি দিয়ে রেল যোগাযোগ অব্যাহত রাখা হয়েছে। আর রেললাইনও চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।

চালক ও গার্ডরা জানান, রেললাইনে পাথর না থাকা, সিগন্যাল ব্যবস্থার ত্রুটি, লাইন ক্ষয়, নষ্ট স্লিপার, লাইন ও ¯ি¬পার সংযোগস্থলে লোহার হুক না থাকার কারণে ইঞ্জিন ও বগি লাইনচ্যুত হয়ে দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে। এতে প্রাণহানী ও দুর্ভোগ বাড়ছে।

রেলওয়ের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, তেলবাহী ওয়াগন দুর্ঘটনাসহ চট্টগ্রামে গত ৯ মাসে ৬২ টি দুর্ঘটনা ঘটেছে। এ সময়ে বিভিন্ন স্থানে নিহত হয়েছেন ২ জন ও আহত হয়েছেন ২৮ জন সাধারণ মানুষ। শেষ কয়েক মাসে ট্রেন লাইনচ্যুতির ঘটনা ঘটেছে বেশি।

সূত্র জানায়, সর্বশেষ গতকাল শনিবার সকালে কুমিল্লার সদর রসুলপুর নামক স্থানে রংপুর গেইন নামের একটি ট্রেনের তিনটি খাবারের বগি লাইনচ্যুত হয়। একটি বগি ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। ফলে রাত নয়টা পর্যন্ত লাকসাম ও আখাউড়া এলাকায় ঢাকা ও চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে যাওয়া একাধিক ট্রেন আটকা পড়ে।

সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, পূর্বাঞ্চলের জি এম মো. মোজাম্মেল হকসহ দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের উদাসীনতা ও মনিটরিংয়ের অভাবের কারণে এমন ঘটনা ঘটছে প্রতিনিয়ত। আর দায় এড়াতে দুর্ঘটনার পর পরই তাদের কাউকে না কাউকে লোক-দেখানো সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়। যা কার্যত আইওয়াস। অথচ বলির পাঠা বানানো হয় নিরীহ ট্রেনচালক ও গার্ডকে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ট্রেনচালক বলেন, নিয়মানুসারে প্রতিদিন ৩ বার পর্যায়ক্রমে পুরো লাইন, সিগন্যাল ও ব্রিজ পরিদর্শনের বিধান রয়েছে। একই সাথে প্রতিটি ট্রেন ছাড়ার আগে ইঞ্জিন ও প্রতিটি বগির বিশেষ বিশেষ যন্ত্রাংশ ও চাকা চেক করার কথা। কিন্তু দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা এসবের কিছুই করেন না।

রেল শ্রমিক নেতা কামাল পারভেজ বাদল বলেন, রেল কর্মকর্তা ও কতিপয় অসাধু কর্মচারী রেল থেকে শুধু কোটিপতি হওয়ার কাজে নিয়োজিত আছেন। রেলের কোন সমস্যা বা নিজ কর্তব্য কাজও করতে তারা রাজী নন। টেন্ডারসহ নানা অবৈধ কাজে ব্যস্ত থাকার কারণে তারা এখন রেলের কাজের জন্য ফিটনেসবিহীন হয়ে গেছেন।

তিনি অভিযোগ করেন, দায় এড়াতে রেলের এসব কর্মকর্তারা দুর্ঘটনার পরপরই তদন্ত কমিটি গঠন বা সংশ্লিষ্টদের তাৎক্ষণিক সাময়িক বরখাস্ত করে। কিন্তু গঠিত তদন্ত কমিটিগুলোর প্রতিবেদন কখনো আলোর মুখ দেখে না। কিছু কিছু ক্ষেত্রে তদন্ত রিপোর্ট দিতে দেখা গেলেও পর¯পরকে রক্ষা করেই দায়সারাভাবেই দেয়া হয়।

তিনি বলেন, গত ১৯ জুন দুপুরে চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলার বেক্সগুরা এলাকায় রেলের ঝুঁকিপূর্ণ ব্রিজটি ভেঙে পড়ে। এরপর ভেঙে যাওয়া ২৪ নম্বর ব্রিজটি মেরামত করে রেলের প্রকৌশল বিভাগ। দুর্ঘটনার পরপরই রেলের প্রধান যান্ত্রিক প্রকৌশলীকে প্রধান করে তিন সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।

এ ঘটনায় রেলের দুই প্রকৌশলীকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। এতে তিনদিনের তদন্ত রিপোর্ট ২৭ দিনে জমা দিলেও রিপোর্টটি দায়সারা গোছের হওয়ায় প্রধান সংকেত কর্মকর্তাকে আহবায়ক করে পুনঃতদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ কমিটি ৩০ জুলাই প্রতিবেদন জমা দেয়ার কথা থাকলেও গতকাল শনিবার পর্যন্ত জমা দেননি বলে জানান শ্রমিক সংগঠনের আহবায়ক চন্দন দে।

এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে দায়িত্বশীল রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন) হাবিবুর রহমান  বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারবো না। মহাপরিচালক দেশের বাইরে আছেন, তিনি আসলেই বিস্তারিত বলতে পারবেন। মিডিয়ার সাথে কথা বলার অথরিটি আমার নাই।’



মন্তব্য চালু নেই