প্রমাণ পেলে ওসিদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম বলেছেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তা গোলাম রাব্বি ও ডিসিসির (দক্ষিণ) কর্মকর্তা বিকাশ চন্দ্র দাসকে নির্যাতনের ঘটনা তদন্তে সংশ্লিষ্ট থানার ওসিদের কোনো গাফিলতি বা জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেলে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

শনিবার দুপুর ২টার দিকে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।

রাজধানীর অপরাধ পরিস্থিতি নিয়ে যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলামের পক্ষ থেকে ক্রাইম রিপোর্টারদের নিয়ে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে একটি সংবাদ সম্মেলন করা হয়। সেখানে সাংবাদিকরা তাকে বিভিন্ন প্রশ্ন করেন।

সম্প্রতি রাজধানীতে পুলিশ সদস্যদের দ্বারা নির্যাতনের সংখ্যা বেড়ে গেছে। পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা কি এসব কর্মকর্তাকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারছেন না, নাকি পুলিশ সত্যিই বেপরোয়া হয়ে গেছে? এ প্রশ্নের জবাবে মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘পুলিশের পক্ষ থেকে বার বারই বলা হয়েছে যে, কারো ব্যক্তিগত দায় প্রতিষ্ঠান নেবে না। কারণ, পুলিশ একটি পেশাদার রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান। এখানে থেকে কেউ অপেশাদার আচরণ করতে পারবে না। আর করলেও তার দায় নিজেকেই নিতে হবে। মোহাম্মদপুর থানার এসআই মাসুদ শিকদার ও যাত্রাবাড়ী থানার এসআই আরশাদ হোসেন আকাশ অপেশাদার আচরণ করেছেন। তাদের ব্যাপারে তদন্ত চলছে। এরইমধ্যে এসআই মাসুদের বিরুদ্ধে প্রাথমিক তদন্তে জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়ায় তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। আর যাত্রাবাড়ীর ঘটনায় অন্তর্বর্তীকালীন প্রতিবেদন পাওয়া সাপেক্ষে আকাশের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

সংশ্লিষ্ট থানার ওসিরা এর দায় এড়াতে পারেন? জবাবে তিনি বলেন, ‘দুটি তদন্ত কমিটি কাজ করছে। তারা অনুসন্ধান করছেন। অনুসন্ধানে উর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও ওসিদের বিরুদ্ধে জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেলে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

তিনি জানান, এসআই মাসুদ শিকদার কর্তৃক গোলাম রাব্বি ও ডিসিসি কর্তকর্তাকে নির্যাতনের ঘটনায় পুলিশ সদর দফতরের অতিরিক্ত ডিআইজি ব্যারিস্টার হারুনুর রশীদের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। সেই কমিটি কাজ শুরু করছে। পক্ষান্তরে যাত্রাবাড়ীর ঘটনায় ডিএমপির পক্ষ থেকেও একটি কমিটি হয়েছে। সেই কমিটির নেতৃত্বে রয়েছেন, যুগ্ম কমিশনার (ট্রাফিক) বনজ কুমার মজুমদার। উপ কমিশনার (গোয়েন্দা পূর্ব) মাহবুব আলম এবং উপ কমিশনার (ওয়ারী) সৈয়দ নুরুল ইসলাম নামে আরো দুজনকে সদস্য হিসেবে রাখা হয়েছে। আগামী তিন দিনের মধ্যে উভয় কমিটিকে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। তদন্তে যে সুপারিশ করা হবে, তার ভিত্তিতেই দুই এসআইসহ ঘটনায় জড়িতদের ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ছাড়া গোলাম রাব্বিকে নির্যাতনের ঘটনায় ডিএমপির পক্ষ থেকে আরো একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে।

এসআই মাসুদের বিরুদ্ধে এখনও কেন মামলা হয়নি? জবাবে মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘ঘটনার তদন্ত চলছে। তদন্ত প্রতিবেদনে সুপারিশের ভিত্তিতেই সকল প্রকার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ফৌজদারি কার্যবিধির মতো অপরাধ থাকলে সেই অনুযায়ী মামলাও রুজু করা হবে।

সাদা পোশাকে কি পুলিশ দায়িত্ব পালন করতে পারে? গত বছর তো ডিএমপি কমিশনার সাদা পোশাকে পুলিশের দায়িত্ব পালনে নিষেধ করেছিলেন? জবাবে তিনি বলেন, ‘সাদা পোশাকে দায়িত্ব পালন করা যাবে না, এমন কোনো কথা নেই। তবে সাদা পোশাকে দায়িত্ব পালন করার তথ্যটি অবশ্যই উর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাকে জানতে হবে। যাত্রাবাড়ীর ঘটনায় সাদা পোশাকে দায়িত্ব পালনের বিষয়টি উর্ধ্বতনরা জানেন কিনা আর জানলেও কী ভিত্তিতে রাখা হয়েছিল সেটিও তদন্ত করে বের করা হবে।’

পুলিশের তদন্ত পুলিশই করে, এতে কি সুষ্ঠ তদন্ত আশা করা যায়? জবাবে যুগ্ম কমিশনার বলেন, ‘ডিএমপির ওপর আস্থা রাখতে হবে। এটি একটি সরকারি প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠানের তদন্তে অনেকের শাস্তি হয়েছে। এমনকি অনেকের চাকরিও চলে গেছে। কারো পক্ষ নিয়ে পুলিশ তদন্ত করে না। ভবিষ্যতেও করা হবে না।’

প্রতিরোধের উপায় কী? জানতে চাইলে মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘সকল পুলিশ সদস্যকে কাউন্সেলিং করা হয়। এ ঘটনার পর সেটি আরো বৃদ্ধি করা হবে। যাতে তারা সাধারণ মানুষের সঙ্গে খারাপ আচরণ না করে। মানুষের কল্যাণে যাতে পুলিশ কাজ করতে পারে।’



মন্তব্য চালু নেই