প্রধানমন্ত্রী তো একদিনও আদালতে যাননি: খোকন

দুর্নীতি মামলায় আদালতে হাজির না হওয়ার খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির প্রেক্ষাপটে প্রধানমন্ত্রীর নভো থিয়েটার মামলার প্রসঙ্গ টেনে এনেছেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মাহবুব উদ্দিন খোকন।

বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্টের সাংবাদিকদের কক্ষে এক ব্রিফিংয়ে তিনি অভিযোগ করেছেন, আইনজীবীরা যাতে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদাকে আইনগত সহায়তা দিতে না পারেন, ‘সে চেষ্টাও’ সরকার করছে।

তিনি বলেন, “মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আইন অনুযায়ী প্রত্যেকটা মামলা হলেই হাজিরা দিতে হবে। নভো থিয়েটার মামলা কোর্টে বিচারাধীন ছিল। কত বছর বিচারাধীন ছিল? চার বছর। প্রধানমন্ত্রী একদিন গেছেন সেই কোর্টে? একদিনও যান নাই।”

টানা কয়েকটি ধার্য দিনে জিয়া দাতব্য ট্রাস্ট ও জিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় আদালতে না যাওয়ায় বুধবার সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে এই পরোয়ানা জারি করেন ঢাকার তিন নম্বর বিশেষ জজ আদালতের বিচারক আবু আহমেদ জমাদার।

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক খোকন বলেন, আদালতে যেতে হবেই- বিষয়টি এমন নয়। সময় চাওয়ার আইনগত অধিকার সবারই আছে এবং আদালত চাইলে বিষয়টি বিবেচনা করতে পারে।

খালেদা জিয়ার ছেলে ও এ মামলার আসামি তারেক রহমান বিদেশে অবস্থান করলেও আইনজীবীর মাধ্যমে হাজিরা দিয়ে আসছিলেন। তেমন কোনো আবেদন না করে খালেদা জিয়ার আদালতে অনুপস্থিতির বিষয়ে এক সাংবাদিক দৃষ্টি আকর্ষণ করলে খোকন বলেন, “আমরা কেন দেব, বেগম খালেদা জিয়াতো দেশেই আছেন। বেগম খালেদা জিয়া তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেত্রীও ছিলেন।

“উনি আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। উনি বারবার নিম্ন আদালতে গিয়ে হাজির হয়েছেন, দেখিয়েছেন।”

এ সময় আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার নভো থিয়েটার মামলার প্রসঙ্গ টেনে বিএনপি নেতা খোকন বলেন, “এই মামলা ফাইল হয়েছে কত সময়? অনেক পুরাতন মামলা। আইন অনুসারে প্রত্যেক মাসেই হাজির হতে হবে। দুদকের আইনজীবীকে জিজ্ঞেস করেন? বা আওয়ামী লীগের অনেক নেতা আছেন, অনেক মন্ত্রী আছেন, তাদের বিরুদ্ধে মামলা আছে। উনারা কখনো হাজিরা দিচ্ছেন? পত্রপত্রিকায় আসছে কোন সময়?”

খালেদার বিরুদ্ধে মামলার বাদী দুর্নীতি দমন কমিশন ‘রাজনৈতিক গোলযোগের এই সময়ে’ সরকারকে সাহায্য করতেই জামিন বাতিলের আবেদন করেছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

“আমরা যেন বেগম খালেদা জিয়াকে আইনগত সহায়তা করতে না পারি, এটা সম্ভবত সরকারের পক্ষ থেকেও চাচ্ছে। এটা সভ্য সমাজে চিন্তাও করা যায় না।”

খোকন অভিযোগ করেন, খালেদাকে আইনগত সহায়তা দিতে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী টিএইচ খানের বাসায় বুধবার এক বৈঠকের সময় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ওই বাসা ঘেরাও করেছিল।

২০০২ সালের ২৭ মার্চ বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে আগের মেয়াদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সংশ্লিষ্ট একনেক সদস্যদের বিরুদ্ধে তেজগাঁও থানায় তিনটি মামলা হয়।

বঙ্গবন্ধু নভোথিয়েটার প্রকল্পের পরামর্শকের ব্যয় বৃদ্ধি, ভবন নির্মাণের ব্যয় বৃদ্ধি ও কমকর্তা-কর্মচারীদের ব্যয় বৃদ্ধির ক্ষেত্রে দুর্নীতির অভিযোগে এসব মামলা করে তখনকার দুর্নীতি দমন ব্যুরো।

শেখ হাসিনা এসব মামলার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাই কোর্টে রিট আবেদন করলে আদালত ২০১০ সালের ৪ মার্চ অভিযোগপত্র দাখিলের আদেশ অবৈধ ঘোষণা করে।

রায়ে বলা হয়, সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে (হাসিনা) হেয় প্রতিপন্ন করতে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে এসব মামলা করা হয়েছিল।

এরপর দুর্নীতি দমন কমিশনের তদন্ত কর্মকর্তা আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা মেলেনি জানিয়ে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিলে ঢাকা জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ আদালত গত ৫ ফেব্রুয়ারি আসামিদের অব্যাহতির আদেশ দেন।

১৩ বছর আগের এ মামলায় শেখ হাসিনার সঙ্গে সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়া, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী এ এইচ এস কে সাদেক, বর্তমান বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, সংসদ সদস্য মহীউদ্দীন খান আলমগীরও অব্যাহতি পান।



মন্তব্য চালু নেই