পে-কমিশনের প্রতিবেদন হস্তান্তর ২১ ডিসেম্বর

অবশেষে হস্তান্তর হতে যাচ্ছে নতুন পে-কমিশনের প্রতিবেদন। পে-কমিশনের চেয়ারম্যান ড. ফরাস উদ্দিন আগামী ২১ ডিসেম্বর সকাল ৯টায় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের কাছে পে-কমিশনের প্রতিবেদন হস্তান্তর করবেন বলে অর্থমন্ত্রণালয়ের সূত্রে জানা গেছে।

পে-কমিশনের প্রতিবেদন গত ১৬ ডিসেম্বর অর্থমন্ত্রী আবুল মাত আবদুল মুহিতের কাছে হস্তান্তরের কথা ছিল। তবে অর্থমন্ত্রী চিকিৎসার জন্য গত ১১ ডিসেম্বর সিঙ্গাপুর যান। এ ছাড়া পে-কমিশন তাদের প্রতিবেদনে কিছু সংযোজন-বিয়োজনের জন্য ২২ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় বাড়ানোর আবেদন করলে অর্থমন্ত্রণালয় তা অনুমোদ করে।

অর্থমন্ত্রী আজ রাতে সিঙ্গাপুর থেকে দেশে ফিরবেন। তাই আগামী রোববার প্রথম কার্যদিবসেই অর্থমন্ত্রীর কাছে নতুন পে-কমিশনের রিপোর্ট জমা দিবেন ড. ফরাস উদ্দিন ।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, প্রায় সাড়ে ১১ লাখ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারির বেতন বাড়ানোর জন্য মূলত তিন ধরনের প্রস্তাব দিতে যাচ্ছে কমিশন। এই তিন প্রস্তাবের একেকটিতে সর্বোচ্চ বেতন বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে এক লাখ, ৮০ হাজার ও ৭০ হাজার টাকা। আর প্রতিটি ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন বেতন দেওয়ার প্রস্তাব থাকছে ১০ হাজার টাকা।

পে-কমিশন বর্তমান গ্রেড বা ধাপও কমিয়ে আনার প্রস্তাব করতে যাচ্ছে। রিপোর্টে বর্তমানে ২০ স্কেলের পরিবর্তে ১৬টি স্কেল করার কথা বলা হয়েছে। সর্বোচ্চ অর্থাৎ প্রথম ধাপে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্যসচিব ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিবের বেতন ধরা হয়েছে। এদের বেতন এক লাখ টাকা করার সুপারিশ করা হচ্ছে। সিনিয়র সচিবদের জন্য ৯০ হাজার টাকা বেতনের সুপারিশ করা হচ্ছে। আর সচিবদের জন্য ৮০ হাজার টাকা সুপারিশ করা হচ্ছে। গ্রেড-২ বা দ্বিতীয় ধাপে সর্বোচ্চ বেতনের সুপারিশ করা হচ্ছে ৭০ হাজার টাকা। সব ক্ষেত্রেই সর্বনিম্ন বেতন করার প্রস্তাব থাকছে ১০ হাজার টাকা।

পে-কমিশনের প্রতিবেদনে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারিদের বিদ্যমান বাড়িভাড়া, চিকিৎসা ভাতা, যাতায়াত, গাড়ি, মোবাইল ফোন, আপ্যায়ন, উৎসব, শ্রান্তি, বিণোদনসহ সব ভাতা ও অন্যান্য আর্থিক সুবিধা সময় উপযোগী করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এতে প্রথমবারের মতো সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারিদের পাশাপাশি পরিবারের সদস্যদের জন্যও বিমা সুবিধার সুপারিশ করা হচ্ছে। এ ছাড়া থাকছে বিকল্প প্রস্তাবও। চাকরিজীবীদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে প্রত্যেকের নামে পাঁচ বছর মেয়াদি স্বাস্থ্যকার্ড ইস্যু করার প্রস্তাবও থাকতে পারে প্রতিবেদনে।

এতে এককালীন চিকিৎসা খরচ দেওয়ার প্রস্তাব করা হচ্ছে। বেতন বা স্বাস্থ্যভাতা থেকে প্রতি মাসে একটি নির্দিষ্ট হারে টাকা কেটে রাখার কথা বলা হচ্ছে সুপারিশে। এর বিনিময়ে তাদের পরিবারের সদস্যদের সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত চিকিৎসা ব্যয় সুবিধা দেওয়ার সুপারিশ করবে কমিশন। তবে কেউ মারা গেলে অথবা দুর্ঘটনায় শারীরিকভাবে অক্ষম হয়ে পড়লে আলাদাভাবে ৫ থেকে ১০ লাখ টাকা দেওয়ার প্রস্তাব করা হচ্ছে।

সরকারি চাকরিজীবীদের আবাসিক সঙ্কট মোকাবেলায় সহজ শর্তে ঋণ দেওয়ার সুপারিশ করা হচ্ছে। নতুন বেতন স্কেলে বাড়ি নির্মাণ বা কেনা বাবদ ঋণের পরিমাণ ৪০ মাসের মূল বেতনের সমান করার সুপারিশ করা হচ্ছে। তবে এ ঋণ হবে সুদযুক্ত। সুদের হার হতে পারে ৫ শতাংশ।

তবে পে-কমিশনের প্রতিবেদনই চূড়ান্ত নয়। এর পর কমিশনের সুপারিশ অর্থমন্ত্রণালয়ে কাটছাঁট হয়ে তা সচিব কমিটিতে যাবে। সেখান থেকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় হয়ে মন্ত্রিসভায়। সেখানে অনুমোদন পেলেই তা বাস্তবায়ন হবে। অবশ্য অর্থমন্ত্রী এরই মধ্যে ঘোষণা দিয়েছেন, আগামী জুলাই থেকে নতুন পে-স্কেল বাস্তবায়ন হবে।



মন্তব্য চালু নেই