‘পেনশনের পুরো টাকা একবারে তোলা যাবে না’

সরকারি চাকরিজীবীরা পেনশনের পুরো টাকা একবারে তুলতে পারবেন না। চাকরির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর এক সঙ্গে পেনশনের ৫০ শতাংশ অর্থ উত্তোলন করতে পারবেন বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।

একই সঙ্গে আগামী দুই বছরের মধ্যে বেসরকারি চাকরিজীবীদের অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে পেনশন সুবিধার আওতায় আনা হবে বলে তিনি জানান।

বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে জাতীয় পেনশন সংক্রান্ত এক বৈঠক শেষে অর্থমন্ত্রী এ কথা জানান। বৈঠকে অর্থ বিভাগের সিনিয়র সচিব মাহবুব আহমেদ, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব ইউনুসুর রহমানসহ অর্থ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

অর্থমন্ত্রী বলেন, পেনশন ব্যবস্থায় আমূল সংস্কার করা হচ্ছে। এ বিষয়ে একটি আইন করা হবে। হয়ত আইনটি করতে দুই বছর লেগে যাবে। তবে আগামী ছয় মাসের মধ্যে এর রূপরেখা প্রণয়ন করে সেটি মস্ত্রিসভার বৈঠকে উপস্থাপন করা হবে।

অর্থমন্ত্রী ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরের বাজেট বক্তৃতায় সুশাসন ও প্রাতিষ্ঠানিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে বেশকিছু সংস্কারের ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। এরমধ্যে সরকারি চাকরিজীবীদের চাকরি শেষে পেনশন ব্যবস্থার সংস্কারের কথা বলেছিলেন। একই সঙ্গে সাংবাদিকসহ বেসরকারি খাতে চাকরিজীবীদের পেনশন সুবিধার আওতায় আনার পরিকল্পনার কথা বলেছিলেন।

পেনশন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বর্তমানে দেশে কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর মাত্র ৫ শতাংশ সরকারি চাকরিতে নিয়োজিত আছেন, যাদের জন্য পেনশন সুবিধা রয়েছে। অন্যদিকে, ব্যক্তিখাতের ৯৫ শতাংশের মধ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে নিযুক্ত প্রায় ৮ শতাংশের কিছু অংশ গ্রাচ্যুইটি সুবিধা পেলেও বাকিদের জন্য পেনশন বা গ্রাচ্যুইটি নেই।

তিনি বলেন, জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার হ্রাস ও গড় আয়ু বৃদ্ধির কারণে জনমিতি কাঠামো পরিবর্তিত হচ্ছে। এতে প্রবীণদের সংখ্যা এবং মোট জনগোষ্ঠীতে এর অনুপাত ক্রমশ বাড়ছে। অন্যদিকে পরিবারের সংখ্যাও বাড়ছে, যা ভবিষ্যতে প্রবীণদের আর্থিক ও সামাজিকভাবে নিরাপত্তাহীন হওয়ার ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। সরকারের একার পক্ষে এই ঝুঁকি মোকাবেলা দুরূহ হবে। এ প্রেক্ষাপটে সব শ্রমজীবী জনগোষ্ঠীসহ প্রবীণদের জন্য একটি সার্বজনীন ও টেকসই পেনশন পদ্ধতি প্রবর্তন এখন সময়ের দাবি।

মুহিত বলেন, এ লক্ষ্যে পেনশন ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন আনার কথা ভাবছেন। এতে ভবিষ্যতে যোগদানকারী সব সরকারি চাকরিজীবীর জন্য বিদ্যমান পেনশন পদ্ধতি পরিবর্তন করে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে পেনশন পদ্ধতি চালু করবেন। পর্যায়ক্রমে, আধা-সরকারি ও ব্যক্তিখাতে আনুষ্ঠানিকভাবে এবং অনানুষ্ঠানিক বা স্ব-কর্মসংস্থানে নিযুক্ত কর্মজীবীসহ সব স্তরের জনগোষ্ঠীর জন্য সরকার নিয়ন্ত্রিত একটি সমন্বিত কাঠামোর আওতায় সার্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা প্রণয়নের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন।

তিনি বলেন, ডিপিএস ব্যবস্থা যেভাবে বেসরাকারি খাতে একটি পেনশন সুযোগ করে দিয়েছে, এখন এটাকে সার্বজনীন করার জন্য কী ব্যবস্থা নেওয়া যায়, সেটাই হবে নতুন পরিকল্পনার ভিত্তি। এ ব্যবস্থায় একদিকে যেমন প্রবীণদের আর্থিক ও সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিত হবে, অন্যদিকে দেশের আর্থিক খাতের গভীরতা নিশ্চিতসহ দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ চাহিদা পূরণে সহায়ক তহবিল সৃষ্টি করবে।

অর্থমন্ত্রী বলেন, অনেক চাকরিজীবী অবসর গ্রহণের পর একসঙ্গে সব টাকা তুলে ফেলেন। এতে তারা বেশির ভাগ ক্ষেত্রে আর্থিক সমস্যায় পড়েন। এর ফলে তাদের জীবনযাপন অত্যন্ত কষ্টকর হয়ে পড়ে। তাদের পরোমুখাপেক্ষী হয়ে বাঁচতে হয়। পেনশন ব্যবস্থায় সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। নতুন পেনশন ব্যবস্থা চালু হলে এ অবস্থা থেকে তারা পরিত্রাণ পাবেন।

নতুন ব্যবস্থা প্রচলন হলে বর্তমানে কর্মরত আর নতুন যারা চাকরিতে যোগ দেবেন তাদের পেনশন নিয়ে কোনো জটিলতা দেখা দেবে কি না- এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘না, পুরাতনরা পুরাতন পদ্ধতিতে পেনশন পাবেন, আর নতুনরা নতুন নিয়মে। তবে এ ক্ষেত্রে একটি সময় বেধে দেওয়া হবে। পরে সব চাকরিজীবী নুতন প্রবর্তিত পদ্ধতিতে পেনশন পাবেন।’



মন্তব্য চালু নেই