৩ সিটি নির্বাচনে সাংবাদিক হয়রানি

পুলিশ ‘শপথ’ করে বলল এমন ঘটনা ঘটেনি

ঢাকা (উত্তর-দক্ষিণ) ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিভিন্ন ভোটকেন্দ্রে সাংবাদিকদের প্রবেশে বাধা, নাজেহাল এবং হয়রানির ঘটনা ঘটলেও অভিযুক্ত পুলিশ বলছে ভোটকেন্দ্রে এমন কিছু ঘটেনি।

‘সাংবাদিকদের বাধা দেওয়া হয়নি’- তদন্ত কমিটির কাছে এমন শপথও করেছেন একজন পুলিশ কর্মকর্তা। তদন্ত কমিটির একজন সদস্য এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

রাজধানীর সেগুনবাগিচার বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ে বুধবার বেলা ১১টায় তদন্ত কমিটি ২০ পুলিশ কর্মকর্তার বক্তব্য শোনে। একই সঙ্গে তাদের কাছ থেকে লিখিত বক্তব্য নেওয়া হয়। এদের মধ্যে ৮ জন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও ১২ জন পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) ছিলেন।

ঢাকার অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মোহাম্মদ আনিছুর রহমানকে (সার্বিক) আহ্বায়ক করে ঢাকা উত্তর-দক্ষিণ সিটির জন্য তিন সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন— ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের যুগ্ম-কমিশনার রেজাউল করিম (ক্রাইমস এ্যান্ড অপারেশন) ও নির্বাচন কমিশনের উপ-সচিব আবদুল অদুদ।

গত রবিবার তদন্ত কমিটি প্রথম দফায় ৩০টি ভোটকেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তার বক্তব্য শোনে। ওই দিন প্রিসাইডিং অফিসাররা তদন্ত কমিটিকে জানিয়েছিলেন, ভোটকেন্দ্রে এমন কিছু ঘটেনি, সব স্বাভাবিকই ছিল।

তদন্ত কমিটির কাছে সাংবাদিকদের নাজেহালের বিষয় স্বীকার না করলেও ভোটগ্রহণের দিন ঢাকা ও চট্টগ্রামের বিভিন্ন কেন্দ্রে প্রবেশে সাংবাদিকরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, দলীয় কর্মী-সমর্থকদের বাধার সম্মুখীন হয় এবং হয়রানির ঘটনা ঘটে।

এদিন ঢাকা উত্তরের ২৯ নম্বর ওয়ার্ডে অবস্থিত কিশলয় বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ কেন্দ্রে সাংবাদিক প্রবেশে বাধা দেওয়া হয়। সকাল সাড়ে ৮টার দিকে ওই কেন্দ্রে সাংবাদিকরা ঢুকতে চাইলে তাদের বাধা দেন দায়িত্বরত পুলিশ সদস্য রাশেদ। সাংবাদিকরা কেন্দ্রে ঢুকতে চাইলে পুলিশ সদস্য রাশেদ বলেন, ডিসি অফিসের নির্দেশ আছে একসঙ্গে পাঁচজনের বেশি সাংবাদিক ভোটকেন্দ্রে ঢুকতে পারবেন না। কোনোপ্রকার ভিডিও বা ছবিও তোলা যাবে না।

এ ছাড়া পুরান ঢাকার আমলীগোলা এএমসি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে সকাল সোয়া ১০টার দিকে হঠাৎ কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার নুরুল আলমের কক্ষে প্রবেশ করেন লালবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জামান ও ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত) পরিতোষ।

তারা কক্ষে প্রবেশ করেই বৃদ্ধ প্রিসাইডিং অফিসার নুরুল আলমকে ধমক দেন। ‘কেন একটি বেসরকারি টেলিভিশনে সাক্ষাৎকার দিলেন? কেন আপনি সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছেন? কে আপনাকে এ অধিকার দিয়েছে? সবাইকে বের করে দেন।’

এ সব ঘটনায় ওই দিন স্বয়ং নির্বাচন কমিশনারাও দুঃখ প্রকাশ করেন এবং সাংবাদিকদের হয়রানি না করতে পুলিশকে টেলিফোনে নির্দেশ দেওয়া হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তদন্ত কমিটির এক কর্মকর্তা বুধবার দুপুরে বলেন, ‘ঘটনার সত্যতা বের করতে আমরা পুলিশ কর্মকর্তাদের আলাদাভাবে বক্তব্য শুনেছি। তারা কেউই সাংবাদিকদের হয়রানির কথা স্বীকার করেননি। তারা বলেছেন, তারা এ বিষয়ে কিছু জানেন না।’

ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, “শুধু তাই-ই নয়, এক পুলিশ কর্মকর্তা শপথ করেন বলেন, ‘স্যার আমি যে কেন্দ্রে দায়িত্ব পালন করেছি, সেই কেন্দ্রে সাংবাদিকদের প্র্রবেশ বাধা ও হয়রানি বা নাজেহালের ঘটনা ঘটেনি।’

তিনি বলেন, ‘পুলিশ কর্মকর্তাদের বলেছি, সত্য কথা না বললে ঘটনা তদন্তে ক্রসচেক করব।’

ওই কর্মকর্তা বলেন, সাংবাদিক হয়রানির বিষয়টি সাংবাদিকদেরই প্রমাণ করতে হবে। পুলিশ তো আর বলবে না তারা বাধা দিয়েছে।

তদন্ত কমিটির ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘তবে পুলিশ কর্মকর্তাদের কথা শুনে মনে হয়নি, তারা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে সাংবাদিকদের হয়রানি বা সরকারের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করেছেন। তবে এতগুলো ভোটকেন্দ্রের দু-একটিতে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটতে পারে।’

রাজধানীর একটি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বলেন, ‘বক্তব্য শোনার জন্য আমাকে ডাকা হলেও এ বিষয়ে কিছুই জানি না। এ ছাড়া ভোটের দিন কোনো সাংবাদিক আমার কাছে এ বিষয়ে অভিযোগ করেননি।’

নির্বাচন কমিশনের উপ-সচিব আবদুল অদুদ বলেন, ‘২৪ মে সহকারী রিটার্নিং অফিসার ও পর্যবেক্ষকদের বক্তব্য শোনা হবে। এ ছাড়া ২৮ মে ভুক্তভোগী সাংবাদিকের বক্তব্য শোনা হবে।’

শুনানির বিষয়ে অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মোহাম্মদ আনিছুর রহমানের কাছে জানতে চাইলে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘তদন্তের স্বার্থে এখন এ বিষয়ে কিছু বলা যাবে না। তদন্ত শেষ হলে আপনারা জানতে পারবেন।’ দ্য রিপোর্ট



মন্তব্য চালু নেই