পুলিশি হেফাজতে শিবির নেতার মৃত্যু বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড : ইমরান

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক রেজাউল করিম হত্যায় গ্রেপ্তার শিবির নেতা হাফিজুর রহমানের (২৩) পুলিশ হেফাজতে মৃত্যুকে ‘বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড’ বলে অভিহিত করেছেন ড. ইমরান এইচ সরকার।

বৃহস্পতিবার নিজের ফেসবুক পাতায় লেখা স্ট্যাটাসে তিনি বলেন, ‘একজন শিবির নেতাকে হত্যা(?) করা হয়েছে বলে আমি জানি আপনারা অনেকেই হয়তো খুশী হয়েছেন। আমি এও জানি এই হত্যার নিশানা হয়তো আপনার/আমার দিকেও তাক করা আছে। আপনাকে কিংবা আমাকে হত্যার পরও খুনীরা কাউকে না কাউকে ঠিকই খুঁজে নেবে, যারা বৈধতা দেবে আমাদের হত্যার। আমি গভীরভাবে শংকিত, তাই সকল অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধেই উচ্চকিত।’

তিনি এও বলেন, আমি জানি, আমি যা বলছি তার জন্য এই সমাজ এখনো প্রস্তুত নয়। তারপরও বলছি, কারণ ন্যায়ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার স্বার্থে কাউকে না কাউকে তো ঝুঁকি নিতেই হবে। আমি ঝুকি নিতে পছন্দ করি।

গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকারের স্ট্যাটাসটি আওয়ার নিউজ বিডি’র পাঠকদের জন্য হুবহু তুলে ধরা হলো:

এদেশে কোনো বিচার না হলেও অবিচার চলছে সমান তালে। বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড আইনের শাসনের প্রতি চপেটাঘাত ছাড়া কিছুই নয়।

‘অবিচার দিয়ে কোনোদিনই সমাজে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়’ – এই সত্যটুকু বুঝতে আমাদের যতো দেরী হবে আমরা ততো পেছনের দিকেই যেতে থাকবো। ‘আইনের শাসন’ থেকেও আরো দূরে যেতে থাকবো।

হ্যাঁ, একজন শিবির নেতাকে হত্যা(?) করা হয়েছে বলে আমি জানি আপনারা অনেকেই হয়তো খুশী হয়েছেন। আমি এও জানি এই হত্যার নিশানা হয়তো আপনার/আমার দিকেও তাক করা আছে। আপনাকে কিংবা আমাকে হত্যার পরও খুনীরা কাউকে না কাউকে ঠিকই খুঁজে নেবে, যারা বৈধতা দেবে আমাদের হত্যার। আমি গভীরভাবে শংকিত, তাই সকল অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধেই উচ্চকিত।

সংগঠন হিসেবে জামায়াতের যুদ্ধাপরাধের বিচারের দাবীতে সম্ভবত সবচেয়ে সোচ্চারদের আমি একজন। বিচারের দাবী মানে যদি কেউ অবিচারের দাবী মনে করে থাকেন, আমার প্রতি খুব অন্যায় করা হবে। বিচার মানে আইন প্রয়োগের মাধ্যমে ন্যায়বিচার। আমি জামায়াত শিবিরের আদর্শিক বিরোধী, কিন্তু তাদের বিচারবহির্ভূতভাবে হত্যার সমর্থক নই। অপরাধীর অপরাধের বিচার হবে দেশের আইন অনুসারে, তার যদি সর্বোচ্চ শাস্তি প্রাপ্য হয় তবে সে তাই পাবে। কিন্তু বিচার না করে বিচারবহির্ভূতভাবে তাকে হত্যা করা হলে এটা তার প্রতি যেমন অবিচার, বিচার প্রত্যাশীদের প্রতিও অবিচার।

কেউ কেউ বলবেন তারা তো দেশবিরোধী, দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে, তাদের আবার বিচার কিসের? দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রকারীদের শাস্তিও কিন্তু দেশের আইনে সম্ভব। তাকে সেই আইন অনুসারে শাস্তি দেয়ার বদলে গুম বা খুন করা হলে সেটা দেশের আইনের প্রতিও অসম্মান। আমি মানবতাবিরোধী অপরাধী ও খুনী-ধর্ষকদের বিচার চাই। এই জঘন্য অপরাধীদের ক্ষেত্রেও কখনো অবিচার চাইনি। কেননা আমি বিশ্বাস করি, অবিচারকে প্রশ্রয়ই ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার প্রধান অন্তরায়। অবিচার দিয়ে কোনোদিনই সমাজে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়।

সকল হত্যা-গুম-খুন-ধর্ষণের বিচার চাই। এমনকি যদি বিচারবহির্ভূতভাবেও কাউকে হত্যা করা হয় তার বিচার চাই।
(আমি জানি, আমি যা বলছি তার জন্য এই সমাজ এখনো প্রস্তুত নয়। তারপরও বলছি, কারণ ন্যায়ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার স্বার্থে কাউকে না কাউকে তো ঝুঁকি নিতেই হবে। আমি ঝুকি নিতে পছন্দ করি।)

উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার ভোর ৪টার দিকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের প্রিজন সেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান ওই শিবির নেতা।

রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগার সূত্র জানায়, হাফিজুর রহমান অসুস্থ ছিল। সে রক্ত স্বল্পতায় ভুগছিল। মঙ্গলবার রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে অসুস্থ হয়ে পড়লে হাফিজুর রহমানকে রামেক হাসপাতালের প্রিজন সেলে ভর্তি করা হয়। সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় হাফিজুর রহমান বৃহস্পতিবার ভোরে সে মারা যায়।

গত ২৩ এপ্রিল নগরীর শালবাগান এলাকায় নিজ বাড়ির সামনে শিক্ষক এএফ এম রেজাউল করিম সিদ্দিকীকে গলা কেটে খুনের ঘটনায় পরদিন শিবির নেতা হাফিজুর রহমানকে আটক করে পুলিশ। পরে আদালতের আদেশে ২৮ এপ্রিল তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৪ দিনের রিমাণ্ডে নেয় পুলিশ।

হাফিজুর রহমান নগরীর ১৯ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র।



মন্তব্য চালু নেই