পুঁজি হারানোর শঙ্কায় চামড়া ব্যবসায়ীরা

নাটোরের চামড়া মোকামে এবার ট্যানারি মালিকদের বেঁধে দেয়া নির্ধারিত দামের চেয়ে গরু ৪০ থেকে ৫০ টাকা এবং খাসি ২০ থেকে ৩০ টাকা বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে। চামড়া ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, মওসুমি ব্যবসায়ীরা এবার চামড়ার বাজার দখল করে নিয়েছে। তারাই এবার সরকারের নির্ধারিত দরের চেয়ে বেশি দামে চামড়া কিনেছে। এছাড়া এবার চামড়া আমদানি কম হওয়ার কারণে বেশি দাম দিয়ে কিনতে হচ্ছে বলেও অনেকেই মনে করছেন। অবশ্য বেশি দামে চামড়া কিনে ফাঁদেও পড়েছেন কেউ কেউ।
অধিকাংশ আড়তদার বেশি দামে চামড়া না কেনায় পুঁজি হারানোর আশঙ্কা করছেন মওসুমি ব্যবসায়ীদের কেউ কেউ।
রাজধানী ঢাকার পর দেশের দ্বিতীয় বৃহৎ নাটোরের চকবৈদ্যনাথ চামাড়ার মোকমে ঈদুর আজহার দিন থেকে চামড়া আসতে শুরু করে। ঈদের দিন পাড়া মহল্লায় সিন্ডিকেটের মাধ্যমে কয়েকজন বন্ধু মিলে চামড়া সংগ্রহ করে নাটোর মোকামে বিক্রির জন্য ভিড় করছে। তবে ট্যানারি মালিকসহ স্থানীয় ব্যবসায়ীরা গরু প্রতি বর্গফুট ৬০ থেকে ৬৫ টাকা ও খাসি ৩০ থেকে ৩৫ টাকা দর বেঁধে দিলেও এবার সে দাম ঠিক থাকেনি। বেঁধে দেয়া দামের চেয়ে গরু প্রতি বর্গফুট ৪০ থেকে ৫০ টাকা এবং খাসি ২০ থেকে ৩০ টাকা বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে।
স্থানীয় ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, মওসুমি ব্যবসায়ীদের কারণে দর বৃদ্ধি পেয়েছে। মওসুমি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে তারা পাল্লা দিতে পারছেন না। ঈদে নাটোরে চামড়ার বাজার দখল করে নিয়েছে এসব ব্যবসায়ী। পাড়ায় পাড়ায় গড়ে ওঠা সিন্ডিকেটের কারণে ৭০ ভাগ চামড়াই কিনতে পারেননি প্রকৃত ব্যবসায়ীরা।
এদিকে অন্যান্য বছর ঈদের দিন থেকে নাটোরের আড়তগুলোতে চামড়াতে ভরে যায়। কিন্তু এবার আড়তগুলোতে তার উল্টো চিত্র। গতবছরের তুলনায় চামড়ার আমদানি হয়েছে একেবারেই কম। ব্যবসায়ীরা বলছে, চামড়ার দাম নিয়ে টালবাহানা আর কোরবানি কম হওয়ার কারণে চামড়ার আমদানি কম হয়েছে।
অভিযোগ রয়েছে, নাটোরের চামড়া ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি মওসুমি ব্যবসায়ীরাও সিন্ডিকেটের মাধ্যমে চামড়া কিনছে। তারা ভারতে পাচারের উদ্যেশ্যে বেঁধে দেয়া দরের চেয়ে বেশি দামে চামড়া কিনছে। তবে বেশি দামে চামড়া কিনে পুঁজি হারানোর আশঙ্কা করছেন অনেকেই।
পিপরুল গ্রামের ব্যবসায়ী হাসান আলী জানান, গত তিন বছর আগে ঈদ মওসুমে তিন চারটি গ্রাম থেকে চামড়া কিনে নাটোর মোকামে বিক্রি করেন। ব্যবসায়ীর সংখ্যা বেশি হওয়ায় এবার পাল্লা দিয়ে বেশি দামে চামড়া কিনেছেন। কিন্তু নাটোর মোকামের প্রকৃত ব্যবসায়ীরা এই চামড়া কিনতে আগ্রহ দেখাচ্ছে না। ফলে তিনি লোকসানের আশঙ্কা করছেন।
নাটোর মোকামের আড়তদার নাসিম খান জানান, প্রতিবছর যে দর বেঁধে দেয়া হয় তার চেয়ে বেশি দামেই চামড়া বেচা কেনা হয়। শেষ পর্যন্ত ট্যানারি মালিকরাই সব চামড়া কিনে নেয়। একারণে এবারও বেশি দামে চামড়া কিনেছে মওসুমি ব্যবসায়ীরা। তারা চামড়া কিনে লবণ দিয়ে প্রক্রিয়াজাত করে মজুদ করে রাখায় চামড়ার আমদানি কম হচ্ছে।
নাটোর চামড়া মোকমের ম্যানেজার আব্দুল জব্বার জানান, অধিকাংশ চামড়া মওসুমি ব্যবসায়ীদের হাতে চলে যাওয়ায় এবং দাম নিয়ে টালবাহানা করায় চামড়া ভারতে পাচার হয়ে যাচ্ছে। চামড়া যাতে ভারতে পাচার না হয়ে যায় সেদিকে প্রশাসনের নজর দেয়া দরকার বলে মনে করেন তিনি।
তবে নাটোর জেলা চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির সহ-সভাপতি বাবলু প্রামানিক চামড়ার আমদানি কম বলে মানতে নারাজ। তিনি বাংলামেইলকে জানান, ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে ইতোমধ্যে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের অনেকেই তাদের প্রয়োজনীয় চামড়া কিনে মজুদ করেছেন। এবারও নাটোর মোকাম থেকে রেকর্ড পরিমাণ চামড়া বেচা কেনা হবে বলে ধারনা করছেন তিনি।



মন্তব্য চালু নেই