‘পুঁজিবাজার বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক উদাসীন’
পুঁজিবাজার বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক অনেকটাই উদাসীন বলে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জকে (ডিএসই) অভিযোগ করেছে প্রতিষ্ঠানটির সদস্যভুক্ত একাধিক ব্রোকারেজ হাউজ।
হাউজগুলোর অভিযোগ, প্রতিদিন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বৈঠক করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কিন্তু স্টক এক্সচেঞ্জের সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংক বসতে নারাজ। গত দুই মাস ধরে বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে আলোচনার জন্য ডিএসই সময় চাইলেও বাংলাদেশ ব্যাংক তা দিচ্ছে না। এতে সুস্পষ্টভাবে বাংলাদেশ ব্যাংকের উদাসীনতার প্রমাণ পাওয়া যায়।
সোমবার বিকেলে ডিএসই ও প্রথম সারির ৩০টি ব্রোকারেজ হাউসের প্রতিনিধিদের সঙ্গে এক বৈঠকে এ অভিযোগ জানানো হয়। বৈঠকে ডিএসইর ব্যবস্থাপনা পরিচালক অধ্যাপক ড. স্বপন কুমার বালা, ডিএসইর সাবেক সভাপতি, সহ-সভাপতি, সিনিয়র ট্রেকহোল্ডারসহ ব্রোকারেজ হাউজের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকে হাউজগুলো জানায়, বাংলাদেশ ব্যাংক যে কোনো প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বৈঠকে বসলেও ডিএসইর সঙ্গে বৈঠকে আগ্রহ দেখাচ্ছে না। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে স্টক এক্সচেঞ্জের বৈঠক হয়। এক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংক স্টক এক্সচেঞ্জকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে থাকে। কিন্তু আমাদের দেশে তা একেবারে বিপরীত। পুঁজিবাজারের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে স্টক এক্সচেঞ্জ বৈঠকে বসতে চাইলেও বাংলাদেশ ব্যাংক এ বিষয়টিকে গুরুত্ব দিচ্ছে না। বাংলাদেশ ব্যাংকের এ ধরণের অসহযোগিতা স্টক এক্সচেঞ্জের সদস্যভুক্ত ব্রোকারদের মধ্যে ক্ষোভের জন্ম দিচ্ছে।
বৈঠকে ডিএসইর ব্রোকার্স এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আহসানুল ইসলাম টিটু বলেন, ‘বর্তমান বাজারের প্রেক্ষাপটে পুঁজিবাজার নিয়ে সরকারের কিছুই করার নেই। তাই নিজেদেরকে সক্রিয় হতে হবে। যেমন ২০১১ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে আমাদের ব্রোকারেজ হাউজের শাখা বাড়ানোর বিষয়টি বন্ধ করে রাখা হয়েছে। আসলে এটা ঠিক নয়। আমাদের আইটি বিভাগকে আরও প্রসারিত ও শক্তিশালী করতে হবে। ইন্টারনেট বেইড ট্রেডিংকে আরও উন্নত করতে হবে। এ ছাড়া পুঁজিবাজারে প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) অনুমোদন দেওয়ার আগে স্টক এক্সচেঞ্জের তালিকাভুক্তির অনুমোদন নেওয়ার বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘শিগগিরই পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের এ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে বৈঠক করবে ডিএসইর ব্রোকার এ্যাসোসিয়েশন। যাতে আগামী বাজেটে পুঁজিবাজারের উন্নয়নে কি কি প্রয়োজন সে বিষয়ে আলোচনা করা হবে। এ ছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংক, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) ও ইন্স্যুরেন্স ডেভেলপমেন্ট রেগুলেটরি অথরিটির (আইডিআরএ) সঙ্গে আলোচনা করে অর্থমন্ত্রণালয়ে সুস্পষ্ট প্রস্তাব পাঠানো হবে।’
বৈঠকে ডিএসইর সাবেক সহ-সভাপতি মিনহাজ মান্নান ইমন বলেন, ‘আমাদের দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে বাজার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসছে না। এ অস্থিরতা অতীতে ছিল, বর্তমানে চলবে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে। এ অস্থিরতার কারণে নিজেরাও অস্থির হলে চলবে না। বিষয়টিকে খুব বেশি গুরুত্ব না দিয়ে অন্যান্য উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের উপর গুরুত্ব দেওয়াই ভাল। কারণ আমরা নিজেরাই যদি রাজনৈতিক অস্থিরতা নিয়ে খুব বেশি মাথা ঘামাই তাহলে বিদেশি ইনেভেস্টর প্রভাবিত হতে পারে। এতে তারা ভয়ে শেয়ার বিক্রি করে দিতে পারেন। এটা হলে বাজারের অবস্থা আরও খারাপ হয়ে যাবে। আর বাংলাদেশ ব্যাংক পুঁজিবাজারের বিষয়ে অনেকটা উদাসীন। কারণ পুঁজিবাজার সংক্রান্ত বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে বৈঠকের চেষ্টা একাধিকবার করা হলেও তা সাড়া পাওয়া যায়নি। যা বিনিয়োগকারীসহ সংশ্লিষ্টদের মাঝে নেতিবাচক প্রভাব সৃষ্টি করছে।’
তিনি বলেন, ‘যেসব নতুন কোম্পানি আইপিওতে বাজারে আসে তাদের উপর নজরদারী বেশ শিতিল থাকে। ফলে ১০ টাকা অভিহিত মূল্যের প্রত্যেকটি নতুন কোম্পানির শেয়ার সেকেন্ডারি মার্কেটে আসার পর ৬০ থেকে ৭০ টাকায় চলে যায়। কিন্তু ছয় মাস পরে তা ২০ টাকায় লেনদেন হয়। এতে বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাই আইপিও’র ক্ষেত্রে নজরদারি আরও বাড়ানো উচিত। আর আমাদের নেটিং সুবিধা চালু রয়েছে কিন্তু তা কার্যকর নয়। তাই নেটিং সুবিধাকে কার্যকর করতে হবে। এতে লেনদেনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। আর সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেডকে (সিডিবিএল) আরও শক্তিশালী ও আপগ্রেড করতে হবে। তা না হলে সিডিবিএলের সার্বিক কার্যক্রম ভেঙ্গে পড়তে পারে। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকবার লেনদেন নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে সমস্যা দেখা দিয়েছে।’
বৈঠকে ফিনিক্স সিকিউরিটিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কাদির চৌধুরী বলেন, ‘বর্তমান প্রেক্ষাপটে পুঁজিবাজারকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে সরকার সহায়তা করতে পারে। ২০১০ সালের পুঁজিবাজার ধস পরবর্তী বাজারকে স্থিতিশীল করতে যে ৯০০ কোটি টাকার সহায়তা তহবিল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল, ঠিক তারই আদলে একটি নতুন রিফাইন্যানসিং ফান্ড গঠন করা যেতে পারে। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের সম্মতি থাকলে বিভিন্ন ব্যাংকের সমন্বয়ে এ ধরনের ফান্ড গঠন করা যেতে পারে। এ ছাড়া ব্রোকারেজ হাউজগুলোর নতুন ব্র্যাঞ্চ খোলার অনুমোদন দেওয়া উচিত। পাশাপাশি স্টক এক্সচেঞ্জকে আরও সক্রিয় হতে হবে। বিশেষ করে সরকারের সঙ্গে লেয়াজো রক্ষার্থ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলোর মতো সক্রিয় হতে হবে। মিডিয়াতে প্রচার প্রচারণা বাড়াতে হবে। আইপিও ইস্যুর ক্ষেত্রে ডিএসইর মতামতকে প্রাধান্য দিতে হবে। ডিএসইর আইটি বিভাগ ওসিডিবিএলকে শক্তিশালী করতে হবে। আর সর্বশেষ বাংলাদেশ ব্যাংকের আচরণ পরিবর্তন আনার জন্য বিএসইসর সহায়তা নেওয়া যেতে পারে। প্রয়োজনে অর্থমন্ত্রণালয়ের সহায়তা নিতে হবে।’
মন্তব্য চালু নেই