পিয়েরোর দিনরাত কাটতো মানবসেবায়

তার পুরো নাম পিয়েরো পারোলারি সামিও। বয়স পেরিয়েছে ষাটের ঘর। ইতালীয় এ নাগরিক পেশায় চিকিৎসক। যক্ষ্ম রোগ বিশেষজ্ঞ। পাশাপাশি তিনি একটি ক্যাথলিক মিশন চার্চের ফাদার।

চিকিৎসা সেবার ব্রত নিয়ে প্রায় চারযুগ আগে বাংলাদেশে আসেন ফাদার ড. ফাদার পিয়ারো সামিও। সে সময় তিনি যোগ দেন উত্তরাঞ্চলের রাজশাহীতে এক যক্ষ্মা হাসপাতালে। সেখানে চিকিৎসা সেবায় কাটিয়ে দেন ১৫ বছর।

পরে ডা. পিয়েরো চলে আসেন উত্তরাঞ্চলের আরেক শহর দিনাজপুরে। ১৯৮৫ সালে তিনি দিনাজপুর হাসপাতালে যোগ দেন। সেখানে তিনি একটানা কাজ করেন ২৩ বছর।

২০০৮ সালে এসে পিয়েরো দিনাজপুর সেন্টভিসেন্ট হাসপাতালে যক্ষ্মা রোগ বিশেষজ্ঞ হিসেবে যোগ দেন। বর্তমান পর্যন্ত তিনি সেখানে কর্মরত আছেন।

চিকিৎসা সেবার পাশাপাশি ডা. পিয়েরো পাদ্রী হিসেবে সেবায় জড়িত ছিলেন। তিনি দিনাজপুর শহরের সুইহারী কাথলিক মিশন চার্চের ফাদার। দুই দফায় ১৫ বছর ধরে তিনি এ মিশনে কর্মরত আছেন।

মানবসেবাকেই জীবনের ব্রত হিসেবে নিয়েছেন ইতালীয় নাগরিক ডা. পিয়েরো। রাতদিন তিনি কাটিয়ে দিতেন মানুষের সেবায়। চিকিৎসা সেবার পাশাপাশি মানবসেবায় তিনি আনন্দ পেতেন।

খুব সাধারণ জীবন যাপন করতেন ডা. পিয়েরো। থাকতে পছন্দ করতে খুব নিরিবিলিতে। সাধারণ মানুষের সঙ্গে তার খুব একটা সখ্য ছিল না।

ডা. পিয়েরো থাকতেন দিনাজপুর সরকারি কলেজের পেছনে এনটিএস ভবনে। সেখানে তার সঙ্গে ছিলেন মিশনারির আরো কয়েকজন বিদেশি নাগরিকও। তিনি হাসপাতালে যাওয়া আসা করতেন সাইকেল চালিয়ে।

বুধবার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে তিনি প্রতিদিনের মতোই বাইসাইকেল নিয়ে কর্মস্থলে যাচ্ছিলেন। পথিমধ্যে শহরের মির্জাপুর বিআরটিসি বাস ডিপোর সামনের সড়কে হামলার শিকার হন। অজ্ঞাতনামা দুর্বৃত্তরা তাকে গুলি করে পালিয়ে যায়। তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন।

পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করান। ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেছে সেখানে বেশ রক্ত ও পিয়েরোর চশমাও পড়ে আছে। বিপুল সংখ্যক র‌্যাব ও পুলিশ সদস্য ঘিরে রেখেছে ঘটনাস্থল।

দিনাজপুর কোতোয়ালি থানার উপপরিদর্শক (এসআই) বিপ্লব সরদার জানান, ইতালীয় নাগরিক পিয়ারো দীর্ঘদিন ধরে দিনাজপুর মিশনের সেন্টভিনসেন্ট হাসপতালে কর্মরত আছেন। পাশাপাশি দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেও চিকিৎসা সেবাদান করেন।

ডা. পিয়েরোকে গুলি করে আহত করার ঘটনার প্রতিবাদে দিনাজপুরের মিশনারি স্কুল ও কলেজগুলোর শিক্ষক ও ছাত্ররা ক্লাস বর্জন করেছে। তারা ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানায়।

দিনাজপুর কসবা সেন্টফিলিপস হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ব্রাদার নির্মল ফান্সিস গমেজ সিএসসি ঘটনার সঠিক তদন্ত ও তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি জানান।

দিনাজপুর সেন্টভিনসেন্ট হাসপাতালের পরিচালক ডা. বেরুত্তি পিমে জানান, ডা. ফাদার পিয়ারো ১৯৮৫ সালে দিনাজপুর হাসপাতালে যোগ দেন। তার আগে তিনি ১৫ বছর রাজশাহীতে কর্মরত ছিলেন। ২০০৮ সালে যক্ষ্ম রোগ বিশেষজ্ঞ হিসেবে যোগ দেন দিনাজপুর সেন্টভিসেন্ট হাসপাতালে।

তার ওপর হামলার ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে ডা. বেরুত্তি বলেন, ‘আমরা এই শান্ত দিনাজপুরে ১১০ বছর ধরে কাজ করছি। কোনো দিন এরকম অপমান পায়নি কেউ। আমরা মানুষকে সেবা দিই।’ তিনি প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে বলেন, ‘কী কারণে আমাদের ওপর হামলা করা হয়েছে তা ভাবতে পারছি না।’



মন্তব্য চালু নেই