পিএসসি পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে ব্র্যাকের সাত দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী

আমাদের দেশের গ্রাম পর্যায়ের দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিশুরা তাদের পরিবারের কাছে অবহেলিত ,উপেক্ষিত এবং নিপিড়িত। সমাজের আর দশজন স্বাভাবিক শিশুদের মত তাদেরকে গ্রহণ করা হয় না। আমরা গ্রামের মানুষ এই প্রতিবন্ধী শিশুদের সৃষ্টি কর্তার অভিশাপ বলে মনে করি।

আর দেশের একমাত্র এনজিও সংস্থা ব্র্যাক গ্রামের এই সব দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিশুদের আর দশজন স্বাভাবিক শিশুদের মত লেখাপড়া শিখিয়ে শিক্ষিত করা ও ঝড়ে পড়া থেকে রক্ষা করার জন্য ব্রেইল পদ্ধতির মত ব্যয় বাহুল শিক্ষা পদ্ধতির পাইলট কার্যক্রম শুরু করেছে গত ২০১১ সন হতে।

গ্রাম পর্যায়ের দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিশুদের কথা চিন্তা করে এনজিও সংস্থা ব্র্যাক দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের ব্রেইল পদ্ধতির শিক্ষাদান বিভাগটি চালু করেছে। প্রাথমিক ভাবে এই ব্রেইল শিক্ষা পদ্ধতিটি দেশের দুটি এলাকা মৌলভীবাজারের সিদ্ধুর খানে ৬জন ও উত্তরবঙ্গের রাণীনগর, সান্তাহার ও নওগাঁর ৭জন প্রতিবন্ধী শিশুদের মাঝে একযোগে এই ব্রেইল পদ্ধতির মাধ্যমে শিক্ষা প্রদান করে আসছে।

সরজমিনে গিয়ে জানা যায়, তাদের এই বিভাগের দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী সাত শিশু এবারের পিএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করছে। তারা হার মানিয়েছে প্রতিবন্ধিতাকে।

নওগাঁর রাণীনগরের চন্ডিপুর গ্রামের দৃষ্টি প্রতিবন্ধি আকাশ ও শহিদুল ইসলাম (বৃত্ত)। বৃত্ত অত্যন্ত মেধাবী কিন্তু তার গরীব পরিবারের অবহেলার জন্য ব্র্যাকের পক্ষ থেকে তাকে একটি গাভী দেওয়া হয়েছে। যাতে তার পরিবার তাকে স্কুলে যেতে সহায়তা করে।

এছাড়াও নওগাঁর দুবলহাটির মা-বাবা হারা এতিম-অসহায় দৃষ্টিপ্রতিবন্ধি মুনিরা তার নানীর কাছে থেকে ব্র্যাক স্কুলে ব্রেইল পদ্ধতির মাধ্যমে পড়াশুনা করছে এবং পাহাড়পুরের বক্তারপুর গ্রামের দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী মেয়ে হাসি এবং সান্তাহারের আদমদুর্গাপুর গ্রামের দৃষ্টি প্রতিবন্ধী রহিমা এই পদ্ধতিতে ব্র্যাক স্কুলে পড়াশুনা করে এবার পিএসসি পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে।

সাস্তাহারের উথরাইল গ্রামের ব্র্যাক স্কুলে দুই মেধাবী দৃষ্টি প্রতিবন্ধী জয় ও জিসান ব্র্যাক স্কুলে ব্রেইল পদ্ধতিতে পড়াশুনা করেছে আর তাদের শিক্ষিকার নিরলস চেষ্টার কারণে তারা আজ সকল বাধাকে উপেক্ষা করে প্রতিবন্ধিতাকে জয় করতে চলেছে।

উথরাইল গ্রামের শিক্ষিকা তাছমেরী খানম বলেন জয় ও জিসান অত্যস্ত মেধাবী। তারা যে কোন বিষয় খুব সহজে আয়ত্ত করে নিতে পারে। তারা এবারের পিএসসি পরীক্ষায় নিশ্চয় ভালো ফলাফল করবে এবং সমাজকে দেখিয়ে দেবে যে তারা সমাজের বোঝা নয় ।

এছাড়াও নওগাঁর পাহাড়পুর ও রাণীনগরের চন্ডিপুর গ্রামের ব্র্যাক দৃষ্টি প্রতিবন্ধী স্কুলের শিক্ষিকা নিলুফার ইয়াসমিন ও তাপসী রাবেয়া জানান, তারা এই প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য নিরলস পরিশ্রম করেছেন। তাদের আশা তাদের শিশুরা অবশ্যই এই পিএসসি পরীক্ষায় ভালো করবে। তবে শুধু এই ক’জন শিশুদের জন্য নয় অতি দ্রুত সারা বাংলাদেশের সব প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য ব্র্যাক অবশ্যই আরও জড়ালো প্রদক্ষেপ গ্রহণ করবে বলে তাদের আশা।

ব্র্যাকের এই কার্যক্রমের এস.এস (সেক্টর সেপশালিষ্ট) মিন্টু আলী বলেন ,প্রতিবন্ধীদেরকে স্বভাবতই আমরা সমাজের বোঝা মনে করি। কিন্তু আমরা এইসব দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিশুদের আর দশজন স্বাভাবিক শিশুদের মত করে শিক্ষাদানে বড় করার প্রায়সেই ব্র্যাক প্রতিষ্ঠান এই ব্যয় বহুল শিক্ষা প্রকল্প চালু করেছে। প্রাথমিক পর্যায় শেষে এই সব দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের আমাদের প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থায় এই ব্রেইল পদ্ধতির মাধ্যমেই উচ্চ শিক্ষা প্রদান এবং সার্বিক সহযোগিতা অব্যাহত রাখা হবে।

এই প্রকল্পের সেক্টর ম্যানেজার লিমিয়া দেওয়ান বলেন ,আমরা যেখানেই দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের সন্ধান পাই সেখানেই ছুটে গিয়ে সেই পরিবারকে বুঝিয়ে সচেতন করে এবং সার্বিক সহযোগিতা প্রদান করে তাদের প্রতিবন্ধী সস্তানকে আমাদের স্কুলে ভর্তি করে ব্রেইল পদ্ধতির মাধ্যমে শিক্ষা প্রদান করে আসছি।

এইসব প্রতিবন্ধীদেরকে আমরা দেশের বোঝা নয় সম্পদে পরিনত করার প্রয়াস থেকেই একমাত্র এনজিও সংস্থা ব্র্র্যাকই দেশব্যাপী এই প্রকল্পটি হাতে নিয়েছে। আমাদের শিশুরা অবশ্যই এই পিএসসি পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করবে ।



মন্তব্য চালু নেই