পালাটানা থেকে আসছে ১০০ মেগা বিদ্যুৎ

খুব শিগগিরই ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের আগরতলার পালাটানা বিদ্যুতকেন্দ্র থেকে কুমিল্লা হয়ে ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ বাংলাদেশে সরবরাহ করা হবে বলে জানিয়েছেন ত্রিপুরা রাজ্য সরকারের মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার।

বৃহস্পতিবার রাতে ভারতের আগরতলার সিটি সেন্টার আর্ট গ্যালারিতে চট্টগ্রাম ফটো জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের আন্তর্জাতিক আলোকচিত্র প্রদর্শনী মাই সয়েল মাই সোলের ২য় পর্বের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মানিক সরকার একথা জানান।

উদ্বোধকের বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘আগরতলা থেকে ৬৫ কিলোমিটার দূরে পালাটানায় আমরা একটা বিদ্যুত উৎপাদন কেন্দ্র স্থাপন করেছি। এই বিদ্যুত কেন্দ্র স্থাপনে মালামাল পরিবহনে বাংলাদেশ যথেষ্ট সাহায্য করেছে। এই ক্ষেত্রে বাংলাদেশের একটা দাবি ছিল, এই পালাটানা বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে কিছুটা বিদ্যুৎ যেন তারা পায়। আমরা ত্রিপুরা সরকার বলেছি, এখানে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে এক হাজার একশো ছিয়নব্বই মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাবো, আমি চোখ-কান বন্ধ করে বলছি আমি বাংলাদেশের মাটিতে যায়নি কিন্তু আমরা একশ মেগোওয়াট বিদ্যুৎ দিয়ে দেব। কিন্তু আমরা বললে তো হবে না ভারত সরকার যতক্ষণ সিদ্ধান্ত না নেবে।’

মানিক সরকার বলেন, ‘বাংলাদেশে বিদ্যুতের সমস্যা আছে। আমরা একশো মেগাওয়াট বিদ্যুৎ দিতে চাই। দেরিতে হলেও ভারত সরকার সিন্ধান্ত নিয়েছে পালাটানা বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে কমপক্ষে ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ বাংলাদেশে দেবে। পালাটানা বিদ্যুতকেন্দ্র থেকে সূর্যমুনি নগর হয়ে বাংলাদেশের কুমিল্লা দিয়ে এই বিদ্যুৎ সরবরাহ লাইন টানা হবে। এর একটি প্রজেক্টও তৈরি করা হয়েছে। আমার ধারণা আগামী অল্প কিছুদিনের মধ্যে নতুন লাইন টানা হবে এবং বিদ্যুত পৌঁছানো সম্ভব হবে।’

মুখ্যমন্ত্রী আরো বলেন, ‘শুধু আলোকচিত্র প্রদশর্নী নয়, আমাদের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে কানেকটিভিটি বাড়াতে হবে। এই জন্য আপনারা যারা সাংবাদিক বন্ধুরা আসছেন আপনারা আপনাদের প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকষর্ণ করুন যাতে আমরা চট্টগ্রাম বন্দর ও আশুগঞ্জ নদী বন্দর ঠিক ঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারি।’

ট্রানজিট ও ট্রান্সশিপমেন্ট বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা চাইবো খুব দ্রুত আমাদের দেশের সরকার জল বণ্টন, ভূমি ও ছিটমহলের সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ গ্রহণ করবেন। পাশাপাশি বাংলাদেশ সরকারও চট্টগ্রাম বন্দর ও আশুগঞ্জ বন্দর ট্রান্সশিপমেন্টের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখবে। আমরা ট্রানজিটের কথা এখন বলছি না, ট্রান্সশিপমেন্টের সুযোগ আমরা অন্তত পেতে পারি। এই ক্ষেত্রে ভারত সরকার দেরি করলেও বাংলাদেশ সরকার এক কদম এগিয়ে এসে আগাম সিদ্ধান্ত নিয়ে ভারত সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে, যাতে ভারত সরকার আর পিছিয়ে যেতে না পারে।’

আলোকচিত্র প্রদশর্নী প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আপনাদের এই প্রদর্শনীতে আগরতলার যারা আলোকচিত্রপ্রেমী আছেন তারা দল বেঁধে আসবেন এবং উপভোগ করবেন। এই সুন্দর অনুষ্ঠানকে নন্দিত করতে যারা চট্টগ্রাম থেকে এসেছেন তাদের অভিনন্দন জানাচ্ছি। বাংলাদেশের সঙ্গে ত্রিপুরার সর্ম্পক নিয়ে নতুন করে বলার খুব বেশি কিছু আছে বলে আমি মনে করি না। আমাদের সর্ম্পক হৃদ্যতার, বন্ধুত্ব ও আত্মীয়তার। ঐতিহাসিক কারণে এই সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। দিনে দিনে এই সম্পর্ক সুসংহত ও সমৃদ্ধ থেকে সমতৃদ্ধতর হচ্ছে। এটাকে আরো প্রসারিত করতে এই আলোকচিত্র প্রদশর্নী নিঃসন্দেহে সাহায্য করবে।’

ইন্ধিরা গান্ধী কালচারাল সেন্টার ঢাকা, বাংলাদেশ ও আগরতলা প্রেসক্লাবের সহযোগিতায় এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। আগরতলা প্রেসক্লাবের সভাপতি সত্যব্রত চক্রবর্তীর সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন- রাজ্য সরকারের তথ্য ও সংস্কৃতিমন্ত্রী ভানু লাল সাহা। বিশেষ অতিথি ছিলেন আগরতলা পৌর মেয়র ড. প্রফুল্লজিৎ সিনহা, চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি এজাজ ইউসুফি, সিপিজেএর সভাপতি দিদারুল আলম। অনুষ্ঠানের শুরুতে অতিথিদের উত্তরীয় পরিয়ে দেন এবং ক্রেষ্ট ও স্যূভেনিয়র তুলে দেন সিপিজেএর সাধারণ সম্পাদক রাশেদ মাহমুদ।

প্রদর্শনীতে চট্টগ্রামের ফটোজার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের ২২ জন আলোকচিত্রীর ৪৪টি ছবি স্থান পেয়েছে। ছবিতে চট্টগ্রামের কৃষ্টি, সংস্কৃতি ঐতিহ্য, পর্যটন ও ব্যবসায়িক গুরুত্ব তুলে ধরা হয়েছে। এ উপলক্ষে সিপিজেএর ১৮ জনের একটি প্রতিনিধি দল গত ২১ জানুযারি চট্টগ্রাম থেকে ভারতের আগরতলায় আসেন। ২২ জানুয়ারি থেকে শুরু হওয়া প্রদর্শনীটি ২৪ জানুয়ারী পর্যন্ত চলবে। প্রদর্শনী দেখতে উদ্বোধনের পর থেকে সিটি সেন্টার আর্ট গ্যালারিতে প্রচুর দর্শক সমাগম ঘটে। এর আগে মঙ্গল প্রদীপ জ্বালিয়ে ও ফিতা কেটে প্রদর্শর্নী উদ্বোধন করেন মানিক সরকার।



মন্তব্য চালু নেই