পরীক্ষার ফাঁকে ‘৫ দিন’ খুঁজছে ইসি

আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি অনুকূলে থাকলে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার সূচিতে সামান্য পরিবর্তন এনে এপ্রিলের শেষ বা মে মাসের শুরুতে ঢাকা ও চট্টগ্রামের তিন সিটি করপোরেশনে ভোটের তারিখ রাখার ইঙ্গিত দিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ।

বিএনপি জোটের টানা অবরোধ ও হরতালের মধ্যেও আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির ‘উন্নতি’ হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেছেন, মার্চের শেষ দিকে ৩৭ থেকে ৪০ দিন সময় রেখে ভোটের তফসিল ঘোষণা করা হবে।

ভোটের জন্য পরীক্ষার ফাঁকে অন্তত পাঁচ দিন সময় প্রয়োজন হবে। আর শিক্ষা মন্ত্রণালয় উচ্চ মাধ্যমিকের পরীক্ষাসূচিতে সমন্বয় করে সেই সময়ের ব্যবস্থা করার আশ্বাস দিয়েছে বলে জানান সিইসি।

ভোটের তারিখ ঠিক করার আগে আইন-শৃঙ্খলা ও দেশের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে বৃহস্পতিবার প্রাক-নির্বাচনী সমন্বয় সভায় বসে কমিশন। সেই সভা শেষেই ‘আশ্বাস পাওয়ার’ বিষয়টি সাংবাদিকদের জানান কাজী রকিব।

ইসি কর্মকর্তারা জানান, কমিশন ভোট আয়োজনে ২৫ এপ্রিল থেকে ৭ মের মধ্যে উপযুক্ত সময় খুঁজছে। ২৬, ২৮ ও ৩০ এপ্রিল এবং ৪, ৭, ১০ ও ১২ মে এইচএসসি পরীক্ষা রয়েছে। এর মধ্যে যে কোনো একটি পরীক্ষার সূচি বদলে দিলে ৫ দিনের বেশি সময় পেয়ে যাবে ইসি।

সিইসি বলেন, “মার্চের মধ্যে তফসিল দিতে হবে। সেক্ষেত্রে ৩৭ থেকে ৪০ দিন সময় রেখে তারিখ ঠিক করা হবে।”

সর্বশেষ নির্বাচনে চট্টগ্রামে তফসিলের পর ভোটের জন্য ৩৭ দিন ও ঢাকায় ৪৪ দিন সময় রেখেছিল কমিশন।

ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এবং চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের নির্বাচন রোজার আগেই শেষ করতে হলে পরীক্ষার মধ্যেই ভোট করতে হবে। আর এক্ষেত্রে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ‘পরিস্থিতি অনুকূল’ জানানোয় পরীক্ষার ফাঁকে ভোট করতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মতামতকে গুরুত্ব দিচ্ছে কমিশন।

সমন্বয় সভায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আসা মতামত জানিয়ে সিইসি বলেন, “অবরোধ-হরতাল অব্যাহত থাকায় চলমান এসএসসি পরীক্ষা শুক্র ও শনিবার নেওয়া হচ্ছে। যদি এটা অব্যাহত থাকে, তাহলে শুক্র ও শনিবার ভোট অ্যাভয়েড করার জন্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে।”

এইচএসসি পরীক্ষা শুধু বড় কলেজগুলোতে হওয়ায় কেন্দ্র নিয়ে সমস্যা হবে না বলেও বৈঠকে মতামত দেওয়া হয়।

সিইসি বলেন, “আমরা একটা ‘গ্যাপ’ খুঁজছি। হরতালের ঝুঁকি বিবেচনায় নিয়েই শুক্র ও শনিবার অ্যাভয়েড করব। কেন্দ্রগুলোতেও কোনো প্রভাব পড়বে না।”

কিছু প্রতিষ্ঠানে কেন্দ্র সাজানোর জন্যে ‘৪-৫ দিন সময় পেলেই যথেষ্ট’ বলে মত দেন সিইসি।

তবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আবারও বৈঠকের প্রয়োজন রয়েছে উল্লেখ করে কাজী রকিব বলেন, “শিক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে-পরিস্থিতি বিবেচনায় ‘গ্যাপের’ ব্যবস্থা করে দেবে। আমরাও সুইটেবল টাইমে তারিখ এটাচ করে নেব। সেজন্যে রুটিন নিয়ে একটু এক্সারসাইজ করতে হবে।”

এপ্রিল থেকে ১৫ জুনের মধ্যে তিন সিটি নির্বাচন করার পরিকল্পনার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, “তফসিল এপ্রিলের আগেই করতে হবে। সেক্ষেত্রে এ মাসেই তফসিল ঘোষণা করতে হবে আমাদের। ভোটের জন্য অন্তত ৩৭ দিন থেকে ৪০ দিনের কমফোর্টেবল টাইম রেখে তা ঠিক করা হবে।”

কমিশনের পরবর্তী বৈঠকে অপর চার নির্বাচন কমিশনারের মত নিয়ে চূড়ান্ত তারিখ নির্ধারণ করা হবে বলে জানান তিনি।

“তিনটি নির্বাচন একসঙ্গে করব কিনা এবং কোন সময়টি উপযুক্ত তা আমরা বসে দেখে-শুনে ঠিক করব।”

একজন নির্বাচন কমিশনার  বলেন, মার্চের শেষ সপ্তাহে তফসিল দেওয়া গেলে মে মাসের প্রথম সপ্তাহে ভোট করা যায়। আর তফসিল আরও আগে হলে এপ্রিলের শেষ দিকে ভোট হতে পারে।

“শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরামর্শ পেলে সুবিধাজনক সময়ই ভোটের জন্য বেছে নেব আমরা।তবে সবকিছু বিদ্যমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করছে।”

সমন্বয় সভায় জানানো হয়, ঢাকা উত্তরে ৩৬টি সাধারণ ও ১২টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড নিয়ে ভোটার রয়েছে ২৩ লাখ ৪৯ হাজার ৩১৩ জন। আর দক্ষিণে ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে ভোটার সংখ্যা ১৮ লাখ ৭০ হাজার ৩৬৩ জন।

এছাড়া চট্টগ্রামে ৪১টি সাধারণ ও ১৪টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে ১৮ লাখ ২২ হাজার ৮৯২ জন ভোটার রয়েছে।

সিইসি সভায় বলেন, “ঢাকা ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে নির্বাচনের জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি গুছিয়ে রেখেছি। এখন সুবিধা মতো সময়ে তফসিল দিতে পারব।”

আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী সংশ্লিষ্টরা সভায় বলেন, বিএনপি-জামায়াত ভোটে প্রার্থী সমর্থন না দিলে নাশকতার শঙ্কা বাড়বে। সে বিবেচনায় ঢাকা ও চট্টগ্রামে আলাদা দিনে নির্বাচন করার পরামর্শ আসে বৈঠকে।

একজন নির্বাচন কমিশনার এ বিষয়ে  বলেন, “এক দিনে ভোট করতে পারলেই সবচেয়ে ভালো। কিন্তু মহানগরের বাইরে থেকে পুলিশ ফোর্স আনতে গেলে সংশ্লিষ্ট এলাকায় ঝুঁকি থাকে কিনা তাও ভাবতে হবে।”

বৈঠকের পর সিইসি বলেন, “আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী জানিয়েছে, পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। তাদের আশা ভবিষ্যতেও এ ধারা থাকবে। তারা আশ্বস্ত করেছে, নির্বাচনে কোনো বাধা থাকবে না। ওই সময়ে নির্বাচন করে দিতে পারবে তারা।”

প্রয়োজন ছাড়া সেনাবাহিনীকে না ডাকার ইচ্ছার কথাও তুলে ধরেন তিনি। তবে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে তফসিল ঘোষণার পর আইন-শৃঙ্খলা নিয়ে বৈঠকের পর।



মন্তব্য চালু নেই