পরিসংখ্যান বিকৃতির এমন রাষ্ট্রীয় চালবাজি বিপদ ডেকে আনতে পারে
লেখার শুরুতেই আজ মনে পড়ে গেল শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীনের আঁকা চুয়াত্তরের সর্বগ্রাসী দুর্ভিক্ষের সেই ছবিগুলোর কথা, মনে পড়ে লাখ লাখ বাঙালী বনী আদমের অনাহারে মৃত্যু আর অনাহার-ক্লিষ্ট-মুখ সেই বাসন্তিদের কথা। কেননা, তিন যুগ আগেও যে দেশের মানুষকে মরতে হয়েছে খাদ্যাভাবে, আজ সে দেশ থেকে খাদ্য রপ্তানি হচ্ছে, সত্যিই এটা আমাদের আত্মস্লাগার সংবাদ।
খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছি, বিশেষ করে চাল উৎপাদনে ঘাটতি পূরণের প্রচারণা চলছে কয়েক বছর ধরেই। সরকারিভাবে এই প্রচারণার সমর্থনে শ্রীলঙ্কার সাথে ৫০ হাজার টন চাল রপ্তানির চুক্তির পর সাড়ে ১২ হাজার টন চাল রপ্তানিও হয়েছে। নতুন প্রচারণা- ভারতের মতো রপ্তানিকারক দেশেও চাল রফতানির হবে ।এই সংবাদে দেশবাসী চরম উচ্ছ্বসিত। সেই জাতির সন্তান হিসেবে আমারও উচ্ছ্বসিত হবার কথা। কিন্তু এই উন্নতির বাহবাটার সঠিক হিসেব মিলাতে পারছি না বলে গর্ব অনুভব না করে বরং নীরবে কষ্টই অনুভব করছি। আর মনের ভিতরকার সেই কষ্টটুকু লাঘব করতেই আজকের এই লেখা।
সত্যিই কী আমরা খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছি? চাল উৎপাদনে এতটাই সফল হয়েছি যে দেশের চাহিদা পূরণ করে বিদেশেও রপ্তানি করার সক্ষমতা অর্জন করছি? বিভিন্নভাবে এই প্রশ্নগুলোর জবাব খোঁজার চেষ্টা করেছি, আর তাতে বাস্তবতা হলো গত ছয় মাসে বিদেশ থেকে আমদানি করা হয়েছে চার লাখ ৫৮ হাজার মেট্রিক টন চাল। কেবল গত নভেম্বর মাসেই আমদানি হয়েছে প্রায় সাড়ে ছয় কোটি ডলারের চাল। নতুন করে এলসি খোলা হয়েছে হাজার কোটি টাকার খাদ্যপণ্য আমদানির।
এই বিপুল পরিমাণ আমদানি করার পরও চাল রপ্তানির এমন প্রচারণায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দেশের কয়েক কোটি কৃষক। উৎপাদনের ভরা মওসুমেও বাজারে চালের দাম কমছে না। অথচ কৃষক পাচ্ছে না তার ন্যায্যমূল্য। বাজার অস্থিতিশীল করে কিছু সুবিধাবাদী গোষ্ঠীকে লাভবান করে দেয়ার এ ভয়ঙ্কর প্রচারণাকে চাল নিয়ে চালবাজি হিসেবেই দেখছেন বিশ্লেষকরা।
এবার আমরা খাদ্য উৎপাদন আর আমদানির পরিমাণ খতিয়ে দেখার চেষ্টা করি- গত কয়েক বছর ধরে চাল আমদানিতে নিম্নগতি পরিলক্ষিত হলেও চলতি অর্থবছরের শুরু থেকেই ঊর্ধ্বগতি লক্ষ্যণীয়। শুধু তাই নয়, গত কয়েক মাস ধরে সার্বিক মূল্যস্ফীতি নিম্নমুখী থাকলেও খাদ্যদ্রব্যের দাম, বিশেষ করে চালের দাম ঊর্ধ্বমুখী। সরকার চাল উৎপাদনে স্বনির্ভরতা অর্জনের দাবি করলেও এবং চলতি অর্থবছরে সরকারি খাতে চাল আমদানি না হলেও বেসরকারিভাবে চালের আমদানি দ্রুত বাড়ছে।
সরকারি সূত্রে পাওয়া চাল আমদানির গত ৭ বছরের তথ্যাদি পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, ২০০৭-০৮ অর্থবছরে পরপর দুটি প্রলয়ংকরী বন্যা ও সাইক্লোন সিডরে লক্ষ্যমাত্রা ১ কোটি ৩০ লাখ টনের বিপরীতে উৎপাদিত হয়েছিল মাত্র ৯৬ লাখ টন। ওই অর্থবছরে মোট চাল আমদানির পরিমাণ ছিল ২০ লাখ ৫৫ হাজার টন (সরকারি খাতে ৬ লাখ ২৪ হাজার টন এবং বেসরকারি খাতে ১৪ লাখ ৩১ হাজার টন)। ২০০৮-০৯ অর্থবছরে বোরোর বাম্পার উৎপাদনে চাল আমদানির পরিমাণ ৬ লাখ ১৩ হাজার টনে নেমে আসে। ২০০৯-১০ অর্থবছরে চাল উৎপাদন সন্তোষজনক হওয়ায় ওই বছর চাল আমদানির পরিমাণ নেমে আসে ৯২ হাজার টনে (সরকারি খাতে ৫৫ হাজার টন এবং বেসরকারি খাতে ৩৭ হাজার টন)। ২০০৮-০৯ এবং ২০০৯-১০ অর্থবছরের তুলনায় ২০১০-১১ অর্থবছরে মোট চালের উৎপাদন যথাক্রমে ২২ লাখ ২৪ হাজার টন এবং ১২ লাখ ৮৪ হাজার টন বৃদ্ধি পেলেও (২০০৮-০৯ ও ২০০৯-১০ অর্থবছরে দেশে উৎপাদিত মোট চালের পরিমাণ ছিল যথাক্রমে ৩ কোটি ১৩ লাখ ১৭ হাজার টন এবং ৩ কোটি ২২ লাখ ৫৭ হাজার টন, যা ২০১০-১১ অর্থবছরে দাঁড়ায় ৩ কোটি ৩৫ লাখ ৪১ হাজার টনে) ২০১০-১১ অর্থবছরে চালের আমদানি আগের দু’বছরের তুলনায় অনেক গুণ বেড়ে যায়। ওই অর্থবছরে চালের আমদানি দাঁড়ায় ১৫ লাখ ৫৪ হাজার টনে (সরকারি খাতে ১২ লাখ ৬৪ হাজার টন এবং বেসরকারি খাতে ২ লাখ ৯০ হাজার টন)।আর ২০১১-১২ অর্থবছরে চালের মোট উৎপাদন আগের বছরের তুলনায় ৩ লাখ ৪৮ হাজার টন বেড়ে যায় এবং ওই বছরে চাল আমদানির পরিমাণ কমে দাঁড়ায় ৫ লাখ ১৪ হাজার টনে (সরকারি খাতে ৪ লাখ ৫৫ হাজার টন এবং বেসরকারি খাতে ৫৯ হাজার টন)। ২০১২-১৩ অর্থবছরে চালের মোট উৎপাদন আগের বছরের তুলনায় সামান্য পরিমাণে অর্থাৎ ৭৫ হাজার টন কমে যায় এবং ওই বছর সরকারি-বেসরকারি খাত মিলে চাল আমদানির পরিমাণ ছিল মাত্র ২৭ হাজার টন। গত অর্থবছরে (২০১৩-১৪) আগের বছরের তুলনায় মোট উৎপাদন বৃদ্ধি পায় সাড়ে ৪ লাখ টন এবং ওই বছর সরকারি-বেসরকারি খাতে চাল আমদানি হয় ৩ লাখ ৭৪ হাজার ৫৬০ টন।
উপরোল্লেখিত বর্ণনা থেকে লক্ষ্যনীয়, ২০১০-১১ অর্থবছর বাদ দিলে অন্য বছরগুলোয় চালের সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন আমদানি দাঁড়ায় যথাক্রমে ৬ লাখ ১৩ হাজার টন ও ২৭ হাজার টন। এদিকে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট থেকে জানা যায়, ২০১৪-১৫ অর্থবছরের ১ জুলাই-১২ ফেব্রুয়ারি সময়কালে বেসরকারি খাতে চাল আমদানি হয়েছে ৮ লাখ ২০ হাজার ৫৫০ টন, যা বিগত ৬টি অর্থবছরের মধ্যে কেবল ২০১০-১১ অর্থবছর বাদে অন্য যে কোনো অর্থবছরের পুরো সময়ে আমদানিকৃত মোট চালের চেয়ে পরিমাণে অনেক বেশি। বিশেষ করে ২০১২-১৩ অর্থবছরে আমদানিকৃত চালের তুলনায় তা ৩০ গুণ বেশি। চাল সরকারি নাকি বেসরকারি খাতে আমদানি হচ্ছে এটি মুখ্য বিষয় নয়; মুখ্য বিষয় হল চাল আমদানি হচ্ছে এবং তা দ্রুতগতিতে।
চাল আমদানি খাদ্য উৎপাদনে স্বনির্ভরতা অর্জনের দাবির সঙ্গে সাংঘর্ষিক হওয়ায় গত অর্থবছরের শেষদিক থেকে বিষয়টি নিয়ে সরকার কিছুটা লুকোচুরির আশ্রয় নেয়। গত অর্থবছরে চাল আমদানি প্রসঙ্গে ২৫ জুন খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম বলেন, বেসরকারি খাতে ভারত থেকে আমদানি করা নিম্নমানের চাল গোখাদ্য হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। দেশ এখন খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। তবে চাল আমদানিকারকরা মন্ত্রীর বক্তব্যের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেন। গণমাধ্যমে প্রকাশিত তাদের বক্তব্যে তারা গোখাদ্য হিসেবে চাল আমদানির কথা অস্বীকার করে বলেন, এত উচ্চমূল্যে আমদানি করা চাল গোখাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা হয় না। তারা আরও বলেন, বাজারে চালের ঘাটতি রয়েছে এবং তারা মানুষের খাওয়ার জন্যই চাল আমদানি করেন।
এছাড়া সাম্প্রতিক বছরগুলোয় সার্বিক কৃষি খাতে, বিশেষ করে শস্য উপখাতে প্রবৃদ্ধির হার সন্তোষজনক নয়। সরকারি সূত্রে প্রাপ্ত তথ্য মোতাবেক ২০১২-১৩ ও ২০১৩-১৪ অর্থবছরে শস্য উপখাতে প্রবৃদ্ধির হার দাঁড়ায় যথাক্রমে ০.৫৯ ও ১.৯১ শতাংশ। এর প্রভাব পড়েছে চাল উৎপাদনের ওপর। ২০১০-১১, ২০১১-১২, ২০১২-১৩ ও ২০১৩-১৪ অর্থবছরে দেশে চাল উৎপাদনে প্রবৃদ্ধির হার যথাক্রমে ৩.৯৮, ১.০৩, ০.০০ ও ১.৩৩ শতাংশ। এতে দেখা যায়, গত তিন বছর আমাদের চাল উৎপাদন বৃদ্ধির হার জনসংখ্যা বৃদ্ধির হারের (১.৩৭ শতাংশ) চেয়ে কম।
কয়েক মাস আগেই দেয়া যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি বিভাগের (ইউএসডিএ) পূর্বাভাস মোতাবেক চলতি অর্থবছরে দেশে মোট চালের উৎপাদন প্রাক্কলিত পরিমাণের (৩ কোটি ৪৮ লাখ টন) চেয়ে কিছুটা কম হবে, কারণ চাল উৎপাদনে খরচের পরিমাণ বেশি হওয়ায় চাষিরা অন্য শস্যের দিকে ঝুঁকছেন। ইউএসডিএ আরও বলেছে, চলতি অর্থবছরে মানুষের খাওয়ার জন্য ৩ কোটি ৫২ লাখ টন চালের প্রয়োজন হবে, যা গত বছরের চেয়ে ৩ লাখ টন বেশি।
এদিকে চলমান অবরোধ-হরতাল কর্মসূচি অব্যাহত থাকলে দেশে চাল উৎপাদনের প্রধান উৎস বোরোর আবাদ যে ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এর ফলে চাল আমদানি আরও বেড়ে যাবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই ।
এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, গত ২০১৪-২০১৫ অর্থবছরে দেশে তিন লাখ ৭৪ হাজার টন চাল আমদানি হয়। আর চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসেই আমদানি হয়েছে সাড়ে চার লাখ টনের বেশি। অর্থবছরের প্রথম চার মাসে আমদানি হয় আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ৮২ শতাংশ বেশি চাল। ২০১৪-২০১৫ অর্থবছরের প্রথম চার মাসে যেখানে সাত কোটি ১৫ লাখ ৩০ হাজার ডলারের চাল আমদানি হয়েছিল সেখানে চলতি অর্থবছরের একই সময় আমদানি হয় ১৩ কোটি টাকার চাল। আগের বছরের নভেম্বরে যেখানে এক কোটি ৬০ লাখ ৭০ হাজার ডলারের চাল আমদানি হয়েছিল সেখানে গত নভেম্বরে আমদানি হয়েছে ছয় কোটি ৩৫ লাখ ৯০ হাজার ডলারের চাল। আমদানি বৃদ্ধির এ হার আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় চার গুণেরও বেশি।
লাখ লাখ টন চাল আমদানির মধ্যেই ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে বাংলাদেশ থেকে প্রতি টন ৪৫০ ডলার হিসেবে ১২ হাজার ৫০০ টন চাল শ্রীলঙ্কার কাছে রপ্তানি করে সরকার। তবে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সাথে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্রে পাওয়া তথ্যে, চাল রপ্তানি নিয়ে সরকারের কৌশল অনেকটাই চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে । সূত্র মতে, প্রথম দফায় রপ্তানিকৃত চাল মানসম্মত না হওয়ায় সরকারি উদ্যোগে শ্রীলঙ্কায় ৫০ হাজার মেট্রিক টন চাল রপ্তানি অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে। অপর একটি সূত্র মতে, ভারত থেকে আরো কম দামে চাল সরবরাহের প্রস্তাব পাওয়ায় বাংলাদেশ থেকে টনপ্রতি ৪৫০ ডলার মূল্যে চাল কিনতে নারাজ শ্রীলঙ্কা। এজন্য তারা বাংলাদেশ থেকে নেয়া চালের মান নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে। তাদের দাবি, সরবরাহকৃত চালে ৫ শতাংশের বেশি বড় ভাঙা দানা থাকতে পারবে না। ছোট ভাঙা দানা দেয়া যাবে না এক শতাংশের বেশি। তা ছাড়া কোনো মিশ্রণ ও ধান থাকতে পারবে না এ চালে। অথচ বাংলাদেশ থেকে রফতানি করা চালে রয়েছে ৮ শতাংশ বড় ভাঙা দানা এবং ৪ শতাংশ ছোট ভাঙা দানা। আর বিভিন্ন জাতের চালের মিশ্রণ রয়েছে ৮ শতাংশ। গড়ে প্রতি কেজি চালে একটি করে ধান রয়েছে বলেও জানায় বাংলাদেশ সরকার।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সাথে সংশ্লিষ্ট অপর একটি সূত্র থেকে পাওয়া তথ্যে, শ্রীলঙ্কায় চাল রপ্তানি বাধাগ্রস্ত হওয়ার প্রেক্ষাপটে সরকার এবার ভারতে চাল রপ্তানির প্রচারণায় নেমেছে। গত ২৯ ডিসেম্বর এক সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী বলেন, সরকার চাল রপ্তানি করার জন্য ভারতীয় প্রস্তাবও বিবেচনা করছে। ভারতে ৩০ হাজার টন চাল রপ্তানি করা হবে বলেও ঘোষণা দেন তিনি। তিনি বলেন, এত দিন বাংলাদেশই ভারত থেকে চাল এনে নিজেদের চাহিদা পূরণ করত, এবার চালের উৎপাদন বেশি হওয়ায় বাংলাদেশ থেকে ভারতে চাল যাবে। অথচ বাস্তবতা হলো বিদায়ী বছরে বাংলাদেশ যে ১২ লাখ মেট্রিক টন চাল আমদানি করেছে তার প্রায় পুরোটাই এসেছে ভারত থেকে।
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা(নাম প্রকাশ না করার শর্তে) জানিয়েছেন, চাল নিয়ে প্রতি বছরই যে ধূম্রজাল সৃষ্টি হচ্ছে তার প্রধান কারণ জনসংখ্যার সঠিক শুমারি না হওয়া। তিনি জানান, দেশে প্রতি বছর তিন লাখ টনের মতো চাল উৎপন্ন হয়। জনসংখ্যা ১৬ কোটি ধরে হিসাব করায় দেশের মোট চাহিদাও প্রায় সমান। অথচ গত কয়েক বছরে দেশে জনসংখ্যা অনেক বেড়েছে। বাড়তি জনসংখ্যা হিসাবে না এলেও কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ প্রতি বছরই উৎপাদন বৃদ্ধির খবর দিয়ে যাচ্ছে। ফলে সৃষ্টি হচ্ছে বিভ্রান্তির। সরকারিভাবে উদ্বৃত্ত খাদ্য উৎপাদনের কথা বলা হলেও বাস্তবে এখনো প্রতি বছর ২০ থেকে ২৫ লাখ টন ঘাটতি থেকে যাচ্ছে বলে উল্লেখ করেন তিনি। দেশে বর্তমানে ১৩ লাখ টনের মতো খাদ্যশস্য মজুদ আছে বলেও জানান এই কর্মকর্তা।
এদিকে চাল রপ্তানি নিয়ে সরকারের এমন প্রচারণায় দেশের বাজারে অস্থিতিশীলতা দেখা দেয়ার আশঙ্কা রয়েছে জানিয়ে গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম জানান, সরকারের প্রচারণায় আকৃষ্ট হয়ে এক শ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী দ্বিগুণ উৎসাহ নিয়ে চাল আমদানি শুরু করেছেন। তা ছাড়া দাম নিয়ে বাজারে যারা বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালান তারাও সক্রিয় হয়ে উঠেছেন। ফলস্বরূপ আমরা দেখছি, একটা মওসুম পেরিয়ে গেলেও বাজারে চালের দাম কমেনি। অথচ মধ্য স্বত্বভোগীরা কৃষকদের চালের ন্যায্যমূল্য দিচ্ছেন না। কৃষকের ন্যায্যমূল্যপ্রাপ্তি নিশ্চিত করার পাশাপাশি চালের বাজার স্থিতিশীল রাখতে সরকারের পক্ষ থেকে সঠিক চিত্রটিই জনসমক্ষে তুলে ধরা দরকার বলে মন্তব্য করেন এই অর্থনৈতিক গবেষক।
সবশেষে বলবো- পরিসংখ্যান নিয়ে প্রচারণা চালানো হলেও প্রকৃত চিত্র কোনোভাবেই আড়াল করা যায় না। পরিসংখ্যানের প্রকৃত সত্য এক দিকে চেপে রাখা হলে তা আরেক দিকে প্রকাশ হয়ে পড়ে। চাল রপ্তাতানিকারক হওয়ার প্রচারণার ক্ষেত্রেও যেন সেটি দেখা যাচ্ছে। বাস্তবতা হলো পরিসংখ্যান নিয়ে নয়ছয় করা হলে রাষ্ট্র সঠিক পরিকল্পনা নিতে পারে না। এ কারণে সরকারের গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধিতে যারা পরিসংখ্যান নিয়ে প্রচারণা চালানোর পরামর্শ দিচ্ছেন, দেশ-জাতির স্বার্থেই তাদের এ কাজ থেকে নিবৃত থাকা উচিত।এতে যেমনি দেশের সার্বিক কল্যাণ হবে, তেমনি খাদ্য নিরাপত্তাও নিশ্চিত হবে। অন্যথা চাল নিয়ে রাষ্ট্রীয় এই চালবাজি আর পরিসংখ্যান বিকৃতি জাতির জন্য যে কোনো সময় ভয়াবহ বিপদ ডেকে আনতে পারে। তাই আশা করি, সরকারের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা এ ক্ষেত্রে দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিবেন।
লেখক : শিক্ষা ও সমাজ বিষয়ক গবেষক
মন্তব্য চালু নেই