পরিবহন ধর্মঘটে বিপাকে সাধারণ মানুষ

খুলনা শিপইয়ার্ডে কর্মরত হুমায়ুন কবীর পাটোয়ারি। তিনি ঢাকা থেকে রোববার সকালে বিমানে যশোরে পৌঁছেছেন। বাস ধর্মঘট থাকায় বিকল্প যানবাহনে খুলনায় ফেরার চেষ্টা করেছেন কিন্তু পাননি। অবশেষে সকাল ৯টায় যশোর জংশনে এসে টিকিট কেটে বসে আছেন। তিনি জানালেন, ট্রেন যথাসময়ে আসেনি। অপেক্ষায় আছি। সকাল থেকে চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছি। তিনি ক্ষোভের সুরে বলেন, ‘আদালতের রায়ে বাস চালকের যাবজ্জীবন সাজা হয়েছে।

আইনি প্রক্রিয়া শেষে তার বিরুদ্ধে রায় দিয়েছেন আদালত। রায়ে সংক্ষুব্ধ হলে আইনি প্রক্রিয়ায় আপিলের সুযোগ আছে। সেটি না করে সাধারণ জনগণকে জিম্মি করে ধর্মঘট পালন অযৌক্তিক ও চরম অন্যায়।’

ঝিনাইদহ থেকে ভোরে ঢাকার একটি কোচে যশোরে এসে পৌঁছেছেন রেবেকা বেগম। রেল স্টেশনে সকাল থেকে বসে আছেন। যাবেন নওয়াপাড়ায়। তিনি বলেন, ‘খুব কষ্টে যশোর এসেছি। বাস বন্ধ থাকায় এখন ট্রেনই ভরসা। সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে এভাবে দুর্ভোগ সৃষ্টি করা ঠিক না। কেউ তো আইনের ঊর্ধ্বে না। হাজার মানুষ হয়রানির শিকার হচ্ছে।’

শুধু হুমায়ুন কবীর কিংবা রেবেকা বেগম নয় তাদের মত হাজারো মানুষকে জিম্মি করে রোববার সকাল ৬টা থেকে খুলনা বিভাগের ১০ জেলায় অনির্দিষ্টকালের পরিবহন ধর্মঘট শুরু হয়েছে।

মানিকগঞ্জে সড়ক দুর্ঘটনায় সাংবাদিক মিশুক মুনীর ও চলচ্চিত্রকার তারেক মাসুদ নিহত হওয়ার ঘটনায় সম্প্রতি বাসচালক জামির হোসেনকে আদালত যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন। এ ঘটনার প্রতিবাদে পরিবহন ধর্মঘট পালন করছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন আঞ্চলিক কমিটি।

শ্রমিকদের দাবি, বাসচালক জামির হোসেনের ৩০৪/খ ধারায় মামলা হওয়ার কথা। কিন্তু তা না করে বিচার হয়েছে ৩০৪/ক ধারায়। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ার পরও বিচারক ‘বিশেষ মহলের’ চাপে তাকে শাস্তি দিয়েছেন। তারা জানান, শ্রমিকরা যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের রায় মাথায় নিয়ে গাড়ি চালাবে না। তাই দাবি আদায়ে অনির্দিষ্টকালের পরিবহন ধর্মঘটের ডাক দেওয়া হয়েছে।

যশোরের স্পেশাল পাবলিক প্রসিকিউটর (স্পেশাল পিপি) এসএম বদরুজ্জামান পলাশ বলেন, ‘সবাইকে আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া উচিৎ। আদালতের রায়ে কেউ সংক্ষুব্ধ হলে আইনি প্রক্রিয়ায় আপিলের সুযোগ আছে। সেটি না করে সাধারণ মানুষকে জিম্মি করা দুঃখজনক ঘটনা।’
এদিকে, পরিবহন ধর্মঘটের কারণে বাস, মিনিবাস, ট্রাকসহ ইঞ্জিন চালিত সকল প্রকার যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। এতে চরম বিপাকে পড়েছে সাধারণ মানুষ। যাতায়াতের জন্যে বিকল্প পথ হিসেবে রেল ও বিমানে ঝুঁকছে মানুষ। সাধারণ মানুষের ভিড়ও রেল স্টেশনে।

রোববার বেলা ১২টার দিকে যশোর জংশনে গিয়ে মানুষের উপচে পড়া ভিড় দেখা গেছে। গন্তব্যে পৌঁছানোর জন্য মানুষ দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট কাটছেন। বরাদ্দ সিটের তিন গুণ বেশি যাত্রীর চাপ সামলাতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে রেলওয়ে কর্মীদের।

যশোর জংশনের স্টেশন মাস্টার পুষ্পল কুমার চক্রবর্তী জানান, বাস ধর্মঘটের কারণে ট্রেনে যাত্রীর চাপ বেড়েছে। এই স্টেশনে ১০০ আসন বরাদ্দ আছে। কিন্তু বরাদ্দ আসনের তিনগুণ যাত্রী যাতায়াত করছে। যাত্রীদের অনুরোধে আসন বিহীন টিকিট দেওয়া হচ্ছে। রেলে যাত্রীদের সর্বোচ্চ সেবা দেওয়ার জন্য আমরা প্রস্তুত আছি।



মন্তব্য চালু নেই