পদ্মাপাড়ে লাশের অপেক্ষায় স্বজনরা :
পদ্মায় যাত্রীবাহী লঞ্চডুবি ॥ ৪৮ লাশ উদ্ধার

পদ্মায় পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুটে শতাধিক যাত্রী নিয়ে ডুবে গেছে এমভি মোস্তফা নামের একটি লঞ্চ। সারবাহী একটি কার্গোর ধাক্কায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৪৮ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এ দুর্ঘটনায় এখনো বহু যাত্রী নিখোঁজ রয়েছে।
পুলিশের ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি নূরুজ্জামান এ খবর নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, ঢাকা থেকে নৌপরিবহণমন্ত্রী শাজাহান খান সন্ধ্যা পৌনে ছয়টার দিকে ঘটনাস্থলে পৌঁছেছেন।
ওই রুটের অপর এক লঞ্চের সারেং জানান, রোববার দুপুর ১২টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে। পাটুরিয়া ঘাট শাখার বিআইডব্লিউটিএর যুগ্ম পরিচালক মো. শাহজাহান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
দৌলতদিয়া শাখার বিআইডব্লিউটিসি কর্তৃপক্ষ জানায়, পাটুরিয়া থেকে দৌলতদিয়ার উদ্দেশে ছেড়ে আসা এমভি মোস্তফা নামের একটি যাত্রীবাহী লঞ্চকে দুপুর ১২টার দিকে ধাক্কা দেয় বিপরীত দিক থেকে আসা একটি সারবাহী কার্গো। এতে লঞ্চটি ডুবে যায়।
তবে লঞ্চে কত জন যাত্রী ছিল, তা এখনো নিশ্চিত করতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, এতে দুই শতাধিক যাত্রী ছিল।
দুর্ঘটনার পরপরই স্থানীয় জনগণ আশপাশের লঞ্চ নিয়ে ডুবে যাওয়া যাত্রীদের উদ্ধারের জোর চেষ্টা চালায়। তারা ৭০-৮০ জন যাত্রীকে উদ্ধারে সমর্থ হয়।
পরে ডুবুরি ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা গিয়ে ডুবে যাওয়া লঞ্চের যাত্রীদের উদ্ধাদের চেষ্টা চালাচ্ছে।
লঞ্চডুবির ঘটনায় দৌলতদিয়া ও পাটুরিয়া ঘাটে স্ব স্ব জেলা প্রশাসকের উদ্যোগে দুটি নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়েছে।
ডুবে যাওয়া লঞ্চের যাত্রী গোয়ালন্দ কৃষি অফিসের হেড ক্লার্ক তফসির জানান, লঞ্চটি ডুবে যাওয়ার সময় তিনিসহ কেবিনের বাইরে থাকা যাত্রীদের অনেকে সাঁতরে অন্য লঞ্চ ও ট্রলারে উঠতে সক্ষম হন। তবে লঞ্চের ভেতরে থাকা শতাধিক যাত্রী বের হতে পারেনি। এদের মধ্যে অনেকের মৃত্যুর আশঙ্কা করছেন তিনি।
তফসির আরো জানান, মানিকগঞ্জের হরিরামপুর এলাকা থেকে আসা একটি কার্গো লঞ্চটির মাঝখানে ধাক্কা দেয়। এতে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে লঞ্চটি উল্টে ডুবে গেছে। খবর পেয়ে তাৎক্ষণিকভাবে বিআইডব্লিউটিএর কর্মীরা উদ্ধারকাজ শুরু করে।
সাইদুল ইসলাম জানান, তার ভগ্নীপতি রমজান ওই লঞ্চে ফল বিক্রি করেন। তার কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। রমজানের বাড়ি রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দ উপজেলার অন্তার মোড়ে।
পদ্মাপাড়ে লাশের অপেক্ষায় স্বজনরা
লঞ্চ এমভি মোস্তফার ডুবে যাওয়া যাত্রীদের লাশের উদ্ধারের জন্য নদী পাড়ে বসে অপেক্ষার প্রহর গুনছেন স্বজনরা। স্বজনদের কান্নায় ভারী হয়ে উঠেছে পদ্মা পাড়ের উভয় তীর।
দৌলতদিয়া নৌরুট এবং পাটুরিয়া নৌঘাট উভয় ঘাটেই অপেক্ষা করছে লঞ্চে নিখোঁজ হওয়া যাত্রীদের স্বজনরা। স্বজনদের এখন একটাই চাওয়া অন্তত তারা যেন লাশটি পায়।
স্বজনদের লাশের অপেক্ষায় থাকা রাজবাড়ী জেলার বালিয়াকান্দি থানার রাজু মিয়া বলেন, ‘আমার পরিবারের পাঁচজন সদস্য ঢাকা থেকে এই লঞ্চে বাড়ি ফিরছিল। তাদের মধ্যে এক জনকে জীবিত পাওয়া গেছে। বাকীদের এখনও পাওয়া যায়নি। আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি, জীবীত না থাকলেও অন্তত তাদের লাশ যেন পাই।’
এরই মধ্যে ৪৮ জনের লাশ উদ্ধার করেছে কর্তৃপক্ষ। এদের মধ্যে ছয়জন পুরুষ, চার জন নারী এবং দুইটি শিশুর লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।
নৌপুলিশ ফাড়ির ডিআইজি মো. মনিরুজ্জামান ও পুলিশের ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি নুরুজ্জামান ঘটনাস্থলে আছেন। লাশ সনাক্তের জন্য পাটুরিয়াতে দুটি কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে।
প্রসঙ্গত আজ রোববার বেলা ১২টার দিকে পাটুরিয়া থেকে ছেড়ে আসা এমভি মোস্তফা নামে একটি লঞ্চ দুর্ঘটনায় পড়ে। পদ্মা নদীতে সার বাহী একটি কার্গোর সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে ডুবে যায় লঞ্চটি। এতে এই প্রাণহানি হয়েছে। তা ছাড়া লাশের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
মন্তব্য চালু নেই