“পদ্ধতি”তে আটকা মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রপ্তানি

কয়েক দফা জোরালো ঘোষণার পরও মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রপ্তানি বাস্তবায়ন হচ্ছে না। রপ্তানির দরজাটি আটকে আছে সে দেশের একটি সিদ্ধান্তে, আর এ দেশের জনশক্তি রপ্তানিকারকদের আপত্তির কারণে। ফলে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার বাংলাদেশের জন্য কেবল কাগজে-কলমেই খোলা, বাস্তবে সেখানে শ্রমিক পাঠানো বন্ধই রয়েছে।

তবে প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, শিগগির মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে বাংলাদেশের শ্রমিকরা যেতে পারবে। এ নিয়ে দুই দেশের মধ্যে কাজ চলছে। গত রবিবার ঢাকায় প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকও করেছেন মালয়েশিয়ার হাইকমিশনার।

প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, দুই দেশের মধ্যে সর্বশেষ নেওয়া উদ্যোগ বাস্তবায়নে অন্তরায় হিসেবে কাজ করছে মালয়েশিয়ার একটি সিদ্ধান্ত। মালয়েশিয়া ‘সিনারফ্লক্স এসডিএন-বিএইচডি’ নামে সে দেশের একটি প্রতিষ্ঠানকে কর্মী পাঠানোর কাজ ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব দিয়েছে।

নতুন ওই পদ্ধতির বিষয়ে জনশক্তি রপ্তানিকারকদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিসের (বায়রা)।তাদের আশঙ্কা,এর মাধ্যমে মালয়েশিয়ার একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশের কয়েকটি জনশক্তি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগসাজশ করার সুযোগ পাবে।

তাদের অভিযোগ, মালয়েশিয়া সিনারফ্লক্স এসডিএন-বিএইচডি নামে যে প্রতিষ্ঠানকে কর্মী পাঠানোর ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব দিয়েছে, সেটি বিতর্কিত। এর ফলে একটি বিশেষ সিন্ডিকেটই কেবল লাভবান হবে।

এসব নিয়ে ১০ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে চিঠি দেয় বায়রা।

বাংলাদেশ জনশক্তি রপ্তানি ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) তথ্যানুযায়ী, ২০০৯ সাল থেকে বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক রপ্তানি বন্ধ থাকার পর এই মন্ত্রণালয়ের তৎকালীন মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেনের প্রচেষ্টায় ২০১২ সালের ২৬ নভেম্বর মালয়শিয়া সরকারের সঙ্গে সরকার-সরকার (জিটুজি) পদ্ধতিতে চুক্তি করে বাংলাদেশ। একই বছরের ৩০ ডিসেম্বর ১০ হাজার শ্রমিক নেওয়ার চাহিদাপত্র পাঠায় মালয়েশিয়া সরকার।তাদের চাহিদানুযায়ী সরকারিভাবে নিবন্ধন করে শ্রমিক পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু করে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়।

চাহিদাপত্র আসার চার মাস পর ২০১৩ সালের এপ্রিলে ১৯৮ জন শ্রমিককে মালয়েশিয়া পাঠানোর মাধ্যমে শুরু হয় দেশটিতে জনশক্তি রপ্তানি।

এরপর আসে বেসরকারিভাবে জনশক্তি রপ্তানির (বিটুবি) আলোচনা।সেটি চূড়ান্ত হতে না হতেই আসে ‘জিটুজি প্লাস’ পদ্ধতির আলোচনা (সরকার চাইলে বেসরকারি রপ্তানিকারকদেরও অন্তর্ভুক্ত করতে পারবে)। এটি নিয়েই এখন আলোচনা প্রক্রিয়াধীন।

মালয়েশিয়ায় শ্রমিক পাঠানোর ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে সে দেশের সিদ্ধান্তে আপত্তির বিষয়ে জানতে চাইলে বায়রার সভাপতি মোহাম্মদ আবুল বাসার বলেন, “জিটুজি প্লাস পদ্ধতিতে শ্রমিক পাঠানো হলে একটি সিন্ডিকেট ফায়দা লুটবে। এ কারণে আমরা এ নিয়মের বিরোধিতা করছি।”

বায়রার সভাপতি বলেন, বায়রার সদস্য প্রায় ১ হাজার ২০০, কিন্তু মালয়েশিয়ার ওই প্রতিষ্ঠান জনশক্তি ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব পেলে বাংলাদেশের ১০-১২টি প্রতিষ্ঠান একচেটিয়া সুবিধা পাবে।

আবুল বাসার বলেন, “বর্তমান স্থানীয় সরকারমন্ত্রী যখন প্রবাসীকল্যাণের দায়িত্বে ছিলেন, তখন তিনি যে পদ্ধতিতে শ্রমিক পাঠানোর ব্যবস্থা করেছিলেন, সেই প্রক্রিয়াই সবচেয়ে ভালো। সেটা কেন পরিবর্তন করা হচ্ছে, আমাদের বোধগম্য নয়।” নতুন পদ্ধতিতে অভিবাসন ব্যয় বাড়বে বলেও জানান তিনি।

মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, সরকারি পর্যায়ে মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রপ্তানি কার্যকর না হওয়ায় বেসরকারি পর্যায়ে জনশক্তি রপ্তানির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সেই সিদ্ধান্তও পরিবর্তন হয়েছে। এখন জিটুজি প্লাস পদ্ধতিতে জনশক্তি রপ্তানির সিদ্ধান্ত হয়েছে।

এ লক্ষ্যে মালয়েশিয়া সরকার গত মাসে কর্মী পাঠানোর কাজটি ব্যবস্থাপনার জন্য ‘সিনারফ্লক্স এসডিএন-বিএইচডি’ নামে সেখানকার একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব দেয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে আগের সিদ্ধান্ত সংশোধন করে নতুনভাবে সমঝোতা স্মারক সইয়ের আলোচনা চলছে।

গত জুনে বাংলাদেশ থেকে বেসরকারিভাবে জনশক্তি নেওয়ার প্রস্তাব দেয় মালয়েশিয়া। প্রাথমিক পর্যায়ে কর্মী পাঠানোর কাজটি বেসরকারি পর্যায়ে (বিজনেস টু বিজনেস পদ্ধতি) হওয়ার কথা নিয়ে আলোচনা হয়। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যে সরকারের অধীনে বেসরকারি রপ্তানিকারকদের যুক্ত করে (জিটুজি প্লাস) কর্মী নেওয়ার প্রস্তাব দেয় মালয়েশিয়া। গত মাসে এই প্রস্তাব নিয়ে মালয়েশিয়ার একটি প্রতিনিধিদল বাংলাদেশে এলে নতুন প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী নুরুল ইসলামও এই প্রস্তাবে রাজি হন।

এ রকম পরিস্থিতিতে গত ২১ সেপ্টেম্বর মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সেখানকার বাংলাদেশ হাইকমিশনকে চিঠি দিয়ে জানায়, বাংলাদেশ থেকে কর্মী নেওয়ার ক্ষেত্রে ব্যবস্থাপনার (বিডব্লিউএমএস) কাজটি বাস্তবায়ন করবে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ‘সিনারফ্লক্স এসডিএন-বিএইচডি’।

ব্যবস্থাপনার কাজটির জন্য তারা বাংলাদেশে ও মালয়েশিয়ায় সেবাকেন্দ্র চালু করবে। তারাই কর্মীদের মেডিকেল ও নিবন্ধনের কাজ তদারক করবে। বাংলাদেশি নাগরিক কর্মীদের ভিসা প্রক্রিয়ার কাজটিও করবে তারা। প্রতিষ্ঠানটি কর্মীদের পাসপোর্ট সংগ্রহ করে ভিসা স্টিকার অনুমোদনের জন্য মালয়েশিয়া হাইকমিশনে পাঠাবে এবং তা ফেরতও দেবে।

বায়রার সভাপতি বলেন, বাংলাদেশ থেকে ১৪২টি দেশে জনশক্তি রপ্তানি হয়। কিন্তু কোথাও ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব কোনো বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে দেওয়া হয়নি। তাহলে বাংলাদেশের বেলায় কেন এমনটি করা হবে। এতে সমস্যা কেবল বাড়বে।

এসব বিষয়ে জানতে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব খন্দকার ইফতেখার হায়দারকে একাধিকবার ফোন করেও তাকে পাওয়া যায়নি।ঢাকাটাইমস



মন্তব্য চালু নেই