সেনা কর্তৃপক্ষকে প্রধানমন্ত্রী

যোগ্যদের পদোন্নতি দিন

পদোন্নতির ক্ষেত্রে যোগ্যদের প্রাধান্য দিতে সেনা কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়ে যোগ্যতার কয়েকটি মাপকাঠিও তুলে ধরেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

রোববার সেনাসদর নির্বাচনী পর্ষদের বৈঠকে তিনি জেনারেলদের উদ্দেশে বলেন, “আমার দৃঢ় বিশ্বাস, সততা ও ন্যায়পরায়ণতার সঙ্গে এই পবিত্র দায়িত্ব আপনারা পালন করবেন। যোগ্য অফিসারদের পদোন্নতির জন্য নির্বাচিত করবেন।”

পদোন্নতির ক্ষেত্রে পেশাগত দক্ষতা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাস, নেতৃত্ব, শৃঙ্খলা, সততা ও জাতীয় পর্যায়ে অবদানের উপর গুরুত্ব দিতে নির্দেশ দেন সরকার প্রধান, যিনি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বেও রয়েছেন।

ঢাকা সেনানিবাসের সেনাসদর কনফারেন্স হলে ২০১৫ সালের সেনাসদর নির্বাচনী পর্ষদের বৈঠক উদ্বোধন করেন শেখ হাসিনা। সেনা কর্মকর্তাদের পদোন্নতির জন্য পাঁচ দিনের এই কার্যক্রম ৩০ জুলাই শেষ হবে।

এ পর্ষদের মাধ্যমে কর্নেল থেকে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এবং লেফটেন্যান্ট কর্নেল থেকে কর্নেল পদবিতে পদোন্নতির জন্য সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, পদোন্নতির ক্ষেত্রে উন্নত পেশাগত মান ও শিক্ষাগত যোগ্যতাসম্পন্ন কর্মকর্তাদের অবশ্যই অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত।

“আদর্শগতভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সামরিক বাহিনীর জন্য মৌলিক এবং মুখ্য বিষয়। এটি আপনাদের সবসময় লক্ষ্য রাখতে হবে, যাতে সেনাবাহিনীর নেতৃত্ব ন্যস্ত হয় তাদেরই হাতে যারা দেশপ্রেমিক ও মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী।”

যে সব কর্মকর্তা ইতোপূর্বে নেতৃত্বের ভূমিকায় সফলতা দেখিয়েছেন, পদোন্নতির ক্ষেত্রে তাদের বিবেচনায় রাখতে বলেছেন সরকার প্রধান।

সুশৃঙ্খল বাহিনীতে শৃঙ্খলার ওপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, “পদোন্নতির ক্ষেত্রে শৃঙ্খলার বিষয়টি অন্য কোনো গুণাবলির সঙ্গে তুলনীয় নয়। শৃঙ্খলার সঙ্গে কোনো প্রকার আপস অবশ্যই বর্জনীয়।”

নৈতিক মনোবল ও সৎ গুণাবলিসম্পন্ন কর্মকর্তা অবশ্যই উচ্চতর পদোন্নতির দাবিদার, বলেন শেখ হাসিনা। সামরিক বাহিনীর একজন নেতার জন্য সততা, বিশ্বস্ততা ও আনুগত্য অত্যন্ত আবশ্যকীয় গুণাবলি হিসেবে মন্তব্য করেন তিনি।

জাতীয় পর্যায়ে অবদানের কথা বলতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান এবং সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা রক্ষাসহ বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে যারা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন, তাদের মূল্যায়ন করা প্রয়োজন।

দেশ ও জাতির প্রয়োজনে সেনাবাহিনী যে কোনো ত্যাগ স্বীকারে সেনাবাহিনীতে প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “এ জন্য যোগ্য, দক্ষ, কর্মক্ষম এবং দেশপ্রেমিক অফিসারদের হাতে এর নেতৃত্ব ন্যস্ত করতে হবে।”

সেনাবাহিনীর অফিসারদের পদোন্নতির জন্য ছকীয় পদ্ধতিতে পেশাগত দক্ষতার ও জ্যেষ্ঠতার তুলনামূলক মূল্যায়নের প্রশংসা করে প্রধানমন্ত্রী জেনারেলদের উদ্দেশে বলেন, “আপনাদের প্রজ্ঞা ও বিচক্ষণ বিচার-বিশ্লেষণ রয়েছে। আমার প্রত্যাশা, এই নির্বাচনী পর্ষদ উপযুক্ত কর্মকর্তাদের পদোন্নতির জন্য সুপারিশ করবে।”

নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে বিচার বিশ্লেষণ করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী, দেশপ্রেমিক, যোগ্য নেতৃত্ব খুঁজে বের করতে তাদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

শেখ হাসিনা আশা করেন, শীর্ষ সেনা কর্মকর্তারা ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দের ঊর্ধ্বে উঠে, ন্যায়-নীতির ভিত্তিতে উপযুক্ত নেতৃত্ব নির্বাচনে সর্বতোভাবে সফল হবেন।

সেনাবাহিনীতে নেতৃত্ব পর্যায়ে যারা রয়েছেন, অধীনস্তদের প্রতি তারা যত্নবান হবেন বলে প্রত্যাশা রাখেন তিনি।

সৈনিকদের সঙ্গে কর্মকর্তাদের সম্পর্কের ধরন তুলে ধরতে গিয়ে ১৯৭৫ সালের ১১ জানুয়ারি সামরিক একাডেমিতে প্রথম ব্যাচের অফিসারদের উদ্দেশে দেওয়া বঙ্গবন্ধুর ভাষণ থেকে খানিকটা উদ্ধৃত করেন শেখ হাসিনা।

বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, “মনে রেখ, শাসন করা তারেই সাজে, সোহাগ করে যে। তোমরা শাসন করবে, তাই সোহাগ করতেও শিখবে। তাদের দুঃখের দিনে পাশে দাঁড়িয়ো, তাদের ভালবেসো। কারণ, তোমাদের হুকুমেই তারা জীবন দেবে। তোমাদের শ্রদ্ধাও অর্জন করতে হবে। আর, সে-শ্রদ্ধা অর্জন করতে হলে শৃঙ্খলা শিখতে হবে, নিজেদের সৎ হতে হবে। নিজেদের দেশকে ভালবাসতে হবে, মানুষকে ভালবাসতে হবে এবং চরিত্র ঠিক রাখতে হবে। অন্যথায় কোনো ভালো কাজ করা যাবে না।”

সেনাবাহিনীর উন্নয়নে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান থেকে শুরু করে আওয়ামী লীগ সরকারের নেওয়া বিভিন্ন উন্নয়নের চিত্রও তুলে ধরেন শেখ হাসিনা।

pm-news_

তিনি বলেন, “স্বাধীনতার পর জাতির পিতা একটি আধুনিক ও যুগোপযোগী সেনাবাহিনী গড়ে তোলার কাজে হাত দেন। অতি অল্প সময়ের মধ্যেই জাতির পিতা বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমিসহ সেনাবাহিনীর জন্য বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেন। বিদেশ থেকে অস্ত্র, গোলাবারুদ ও সাজ-সরঞ্জাম সংগ্রহ করেন।”

আওয়ামী লীগের ১৯৯৬-২০০১ মেয়াদকালে ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজ, মিলিটারি ইনস্টিটিউট অফ সাইন্স অ্যান্ড টেকনোলজি, আর্মড ফোর্সেস মেডিকেল কলেজ, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অফ পিস সাপোর্ট অপারেশন ট্রেনিং, বাংলাদেশ ইনফ্যান্টি রেজিমেন্টাল সেন্টার এবং এনসিও’স একাডেমি প্রতিষ্ঠার কথা বলেন শেখ হাসিনা।

সেনাবাহিনীর আবাসন সমস্যা সমাধানে আওয়ামী লীগ সরকারের নেওয়া বিভিন্ন উদ্যোগের কথাও বলেন তিনি।

ঢাকা সেনানিবাসের নির্ঝর এলাকায় সব পদবির সদস্যদের জন্য আবাসিক ভবন, স্কুল ও কলেজ, প্যাসেন্ট অ্যাটেনডেন্ট রেস্ট হাউজ, ছাত্রাবাস এবং সেনাসদরে আর্মি মাল্টিপারপাস কমপ্লেক্স ও সেনাসদর কনফারেন্স হল (হেলমেট) নির্মাণের কথাও বলেন শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, “গত সাড়ে ছয় বছরে সেনাবাহিনীর অবকাঠামো, জনবল, অপারেশনাল ক্যাপাসিটি বৃদ্ধির পাশাপাশি স্বাস্থ্য, শিক্ষাসহ প্রতিটি খাতে আমরা ব্যাপক উন্নয়ন করেছি। আমি সেসকল উন্নয়নের বিষদ বর্ণনা দিতে চাই না। শুধু এটুকু বলব, ইতোপূর্বে কোনো সরকার সেনাবাহিনীর জন্য এত উন্নয়ন কাজ বাস্তবায়ন করেনি। সেনাবাহিনীর সামর্থ্যকে বহুগুণে বৃদ্ধি করেছি। জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনসহ দেশ-বিদেশের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী আজ আস্থা ও শৃঙ্খলার প্রতীক।”

অনুষ্ঠানে সেনা প্রধান জেনারেল আবু বেলাল মোহাম্মদ শফিউল হক, প্রতিরক্ষা সচিব কাজী হাবিবুল আউয়াল, প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের সচিব সুরাইয়া বেগম, প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম এবং সেনাবাহিনীর লেফটেন্যান্ট জেনারেল ও মেজর জেনারেলরা উপস্থিত ছিলেন।



মন্তব্য চালু নেই