নোয়াখালী ভাষাভাষি অঞ্চল নিয়ে নোয়াখালী বিভাগ ঘোষণার দাবি

চট্টগ্রাম বিভাগের ১১টি জেলার মধ্যে জনসংখ্যা ও আয়তনের দিক দিয়ে অন্যতম বৃহত্তর নোয়াখালী জেলা। নোয়াখালী এখন অত্যধিক জনসংখ্যা ও রাজনৈতিক সচেতন জেলায় পরিণত হয়েছে। প্রশাসনিক অবকাঠামো, অত্যধিক জনসংখ্যা, ভৌগোলিক সীমারেখা, যাতায়াত-যোগাযোগ সমস্যা প্রভৃতি কারণে বৃহত্তর নোয়াখালীর ৩ জেলা, চাদপুর, কুমিল্লা জেলার লাকসাম, চৌদ্দগ্রাম ও লাঙ্গলকোট এবং চট্টগ্রাম জেলার মিরসরাই ও সন্দীপ উপজেলা নিয়ে নোয়াখালী অঞ্চলের ভাষাভাষি মানুষের এক অঞ্চল নোয়াখালী বিভাগ বাস্তবায়ন করা আজ জরুরি।

এ অঞ্চলকে নিয়ে একটি আলাদা নোয়াখালী বিভাগ ঘোষণার দাবি দিনদিন জোরদার হচ্ছে। প্রাচীন জেলা নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুর মহকুমা শহর ফেনীসহ চাদপুর, কুমিল্লার আংশিক এবং চট্টগ্রামের আংশিক নোয়াখালী ভাষাভাষি মানুষদের একটি আলাদা বিভাগ প্রশাসনিক ভাবে জরুরি হয়ে পড়েছে। নিয়ে বৃহত্তর নোয়াখালী একটি আলাদা বিভাগ এখন সময়ের দাবী। নোয়াখালীর দক্ষিনে বিশাল চরাঞ্চল জেগে উঠায় দক্ষিণে দেশের আয়তন বেড়ে যাওয়ায় বেগমগঞ্জ চৌরাস্তাকে বিভাগীয় সদর দপ্তর করে আলাদা নোয়াখালী বিভাগ ঘোষণার দাবি দীর্ঘদিনের।

বৃহত্তর নোয়াখালীকে বিভাগ হিসেবে দাবি করে আলাদা আন্দোলনও পিছিয়ে নেই। সদর দপ্তর যেখানেই হোক না কেন, বৃহত্তর নোয়াখালীর দক্ষিণ চরাঞ্চলের শেষ প্রান্ত পর্যন্ত এলাকা আলাদা নিয়ন্ত্রন করার কথা মাথায় রেখে নোয়াখালী বিভাগ ঘোষণার দাবি এখন এ অঞ্চলের মানুষের গণদাবিতে রুপ নিতে যাচ্ছে।

অনুসন্ধ্যানে জানা যায়, চট্টগ্রাম বিভাগের মিরসরাই ও সন্ধীপ উপজেলা, নোয়াখালী, ফেনী ও লক্ষীপুর, চাঁদপুর জেলা এবং কুমিল্লার লাকসাম চৌদ্দগ্রাম ও লাঙ্গলকোর্ট নিয়ে নোয়াখালী বিভাগ হতে পারে। ১৯৯১ সালের আদম শুমারি অনুযায়ী চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী, লক্ষীপুর, কুমিল্লার আংশিক অঞ্চলের লোকসংখ্যা চট্টগ্রামের ৫টি জেলার লোকসংখ্যার চেয়ে বেশি। আয়তনের দিক থেকেও বিভাগ দাবীকৃত অঞ্চল দেশের অন্যান্য বিভাগ থেকে অনেক বড়। শুধু হাতিয়াই এখন একটি বিভাগের আয়তন রয়েছে।

পরিসংখ্যান অনুসারে দেখা যায়, দেশের অনেক অনেক বিভাগের চেয়ে আয়তন, জনসংখ্যা, প্রশাসনিক কাঠামো, যোগাযোগ, যাতায়াত, ভৌগোলিক অবস্থান, কৃষি, ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্প সম্ভাবনা সবদিক দিয়েই চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী, লক্ষীপুর, আংশিক কুমিল্লাকে নিয়ে আলাদা নোয়াখালী বিভাগ ঘোষণার যথার্থ দাবি রাখে।

এছাড়াও চট্টগ্রাম বিভাগ ও জেলার প্রায় সব অফিস-আদালত, গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা চট্টগ্রাম শহরে অবস্থিত হবার কারণে প্রতিদিন শহরমুখী জনস্রোত বাড়ছে ভয়াবহ ভাবে। পরিবহন, রাস্তাঘাট, সংশ্লিষ্ট অফিস সবকিছুই এ বিশাল জনচাপে ন্যুয়ে পড়ছে। চট্টগ্রাম মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলার অজস্র প্রতিষ্ঠানের কাজ সামাল দিতে গিয়ে প্রতিনিয়ত হিমশিম খাচ্ছে জেলা অফিসগুলো। চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী, লক্ষীপুর ও কুমিল্লাসহ এতদ অঞ্চলের মানুষ বিভাগীয় কাজে চট্টগ্রামের অফিসে যাতায়াতের কারণে মফস্বলের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গের নষ্ট হচ্ছে মূল্যবান কর্মঘণ্টা, অর্থেরও অপচয় হচ্ছে বেশুমার।

তাছাড়া কর্মমূখর মহানগরে কর্মজীবি-পেশাজীবীদের আধিক্যের কারণে আবাসন সমস্যাও দিন দিন বাড়ছে মারাত্মকভাবে। ক্রমবর্ধমান এসব চাপ মোকাবেলায় চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী, লক্ষীপুর, কুমিল্লা, ও আংশিক চট্টগ্রামকে নিয়ে নোয়াখালী বিভাগ ঘোষিত হওয়া জরুরী। বেগমগঞ্জ চৌরাস্তাকে বিভাগীয় সদর দপ্তর করে আলাদা একটি নোয়াখালী বিভাগ বাস্তবায়নের দাবি এখন সর্বমহল থেকেই উঠছে। নোয়াখালী বিভাগ প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয় সব সম্ভাবনাই বিদ্যমান। বিভাগীয় সদর দপ্তর করার মতো এখানে প্রচুর সরকারী ভূমিও রয়েছে যা নোয়াখালী সদর দপ্তর করার জন্য নেয়া হয়েছিলো। অন্যথায় ৬ জেলার মধ্যভাগ বিবেচনায় নিয়ে যে কোন স্থানে করা যেতে পারে।

এ অঞ্চলের সড়ক ও নদীপথ, প্রচুর বাণিজ্যিক কেন্দ্র, বিভিন্ন সরকারি অফিসের প্রধান বা উপ-কার্যালয়, প্রচুর সরকারি জায়গা, বিপুল অর্থনৈতিক সম্ভাবনা, শিল্প কারখানা গড়ে তোলার অবারিত হাতছানি, নিঝুমদ্বীপের অবারিত পর্যটন আকর্ষণের পাশাপাশি একাধিক পর্যটন শিল্পবিকাশের অবারিত সুযোগ, বিশাল কৃষি সম্ভার, দ্রুত বর্ধমান জনসংখ্যার পাশাপাশি শিক্ষা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বৃদ্ধির হার প্রভৃতিই নতুন জেলা প্রতিষ্ঠার প্রবল দাবিকে আরো বেশি বলিষ্ঠ করে তুলছে।

নোয়াখালীতে বিভিন্ন এলাকায় গ্যাসকূপের হাতছানি, অবারিত পলি, নদীবিধৌত অঞ্চলে বিধাতার উর্বর দান, সোনার মতই দামি গাছে ভরা বিস্তীর্ণ বনাঞ্চল, ঢাকা-চট্টগ্রাম ও নোয়াখালী কুমিল্লা মহাসড়ক, প্রস্তাবিত এশিয়ান হাইওয়ে ও জোরালগঞ্জ সড়ক, নিঝুমদ্বীপের দীর্ঘ সমুদ্র সৈকত ও মায়াময় পর্যটন অঞ্চলে যাতায়াতের মাধ্যম হিসেবে খ্যাত নোয়াখালীকে স্বতন্ত্র বিভাগ প্রতিষ্ঠিত হলে দেশমাতৃকারই লাভ হবে বলে অভিমত প্রকাশ করেছেন এ অঞ্চলের জনপ্রতিনিধি, পেশাজীবী, শিক্ষক, শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শ্রেণীপেশার মানুষ।

তারা বলেছেন, আর ক’বছর পর সরকারকে এমনিতেই বাঁধ্য হয়ে জনসংখ্যার চাপে এ অঞ্চলে আলাদা বিভাগ ঘোষণা করতে হবে। তবে তা করতে দীর্ঘ সময় নিলে সবকিছু হ-য-ব-র-ল হয়ে যাবে। কারণ এ অঞ্চলের সরু-সংকীর্ণ রাস্তাঘাটের আশপাশের সরকারি-বেসরকারি জমিগুলোতে দ্রুত অপরিকল্পিত স্থাপনা গড়ে উঠছে। দখল বা ভরাট হয়ে যাচ্ছে পুকুর, ডোবা, জলাশয়, খাল, বিল, নালা প্রভৃতি। একসময় তা ভয়াবহ জলাবদ্ধতার সৃষ্টি করবে। তাছাড়া নতুন পরিকল্পনা নিয়ে একটি যুৎসই জনপদ গড়ার সুযোগ ততদিনে হাতছাড়া হয়ে যাবে।



মন্তব্য চালু নেই