নোয়াখালী জেলা জজ আদালতে ২টি হত্যা মামলায় ৬ জনের যাবজ্জীবন

নোয়াখালী জেলা জজ আদালতে ২টি হত্যা মামলায় ৬ জনের যাবজ্জীবন। চাঞ্চল্যকর হকসাব অপহরণের ১৮ বছরেও উদ্ধার হয়নি । নোয়াখালীর বহুল আলোচিত চৌমুহনী বাজারের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও ‘হক লাইব্রেরির’ মালিক ফজলুল হক প্রকাশ হক সাহেব অপহরণ ও হত্যার ঘটনায় ২ আসামীর যাবজ্জীবন কারাদন্ড দিয়েছে আদালত। তবে, এ রায়ে সন্তুষ্ট নন নিহতের পরিবার।

বুধবার দুপুরে জেলা বিশেষ দায়রা জজ আদালতের বিচারক শিরিন কবিতা আক্তার এ রায় প্রদান করেন। যাবজ্জীবন দন্ড প্রাপ্তরা হচ্ছেন- নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার শরীফপুর ইউনিয়নের ছাদু মিয়ার ছেলে আবুল হাশেম (৬১) ও জামাল উদ্দিন (৫২)। আদালত ও নিহতের পরিবার সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯৭ সালের ৬ ফেব্র“য়ারি দন্ডপ্রাপ্ত আসামীরাসহ কয়েকজন টাকা ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্যে চৌমুহনী ষ্টেশন রোড থেকে মাইক্রোবাস যোগে চৌমুহনী পৌরসভার গণিপুর গ্রামের বাসিন্দা, বীর মুক্তিযোদ্ধা, সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত ক্যাপ্টেন (সম্মান) সামছুল হকের ছেলে ও চৌমুহনী বাজারের ব্যবসায়ী ফজলুল হককে অপহরণ করে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যায়। পরে পরিবারের লোকজন তাকে বিভিন্ন জায়গা খোজাখুজি করে কোন সন্ধান পায়নি। ঘটনায় ৯ ফেব্রুয়ারি ফজলুল হকের পিতা সামছুল হক বাদী হয়ে হাশেম ও জামালকে আসামী করে বেগমগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। পরবর্তীতে পুলিশ অভিযান চালিয়ে আবুল হাশেমকে গ্রেপ্তার করলেও অপর আসামী জামাল উদ্দিন এখনো পলাতক রয়েছে।

এদিকে, এখনো অপহৃত ব্যবসায়ীর লাশের কোন সন্ধান পায়নি পুলিশ ও তার পরিবার। তবে, মামলার তদন্ত শেষে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) হত্যার পর হত্যাকারীরা নিহতের মৃতদেহ গুম করেছে এমর্মে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। বুধবার দুপুরে আদালত উভয় পক্ষের আইনজীবীদের দীর্ঘ শুনানী, স্বাক্ষ্যপ্রমাণ ও যুক্তিতর্ক শেষে আসামীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ হওয়ায় আদালত তাদের যাবজ্জীন কারাদন্ড প্রদান করেন। রায় ঘোষণার সময় আসামী আবুল হাশেম আদালতে উপস্থিত ছিলেন। পলাতক অপর আসামী জামাল উদ্দিনকে গ্রেপ্তারের জন্য পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। নিহতের ছোট ভাই জিয়াউল হক জিয়া যাবজ্জীবন রায়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, অভিযুক্ত আসামীদের সর্বোচ্চ শাস্তির জন্য তারা উচ্চ আদালতে আপিল করবেন। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে মামলা পরিচালনা করেন, স্পেশাল (পিপি) এ্যডভোকেট কাজী এ বি এম শাহজাহান শাহীন, এ্যডভোকেট কাশেম। আদালতে আসামী পক্ষে মামলা পরিচালনা করেন, এ্যডভোকেট রফিক উল্ল্যাহ।

এদিকে একই আদালতে নোয়াখালীতে হত্যা মামলায় ৪ জনের যাবজ্জীবন নোয়াখালীর সেনবাগে সিএনজি অটোরিকসা ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্যে কুমিল্লার নাঙ্গলকোর্ট থানার মেরকোর্ট গ্রামের বাসিন্দা ও সিএনজি অটোরিকসা চালক ইয়াকুবকে ছুরিকাঘাতে হত্যার ঘটনায় ৪ জনকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দিয়েছে নোয়াখালী দায়রা জজ আদালত। বুধবার দুপুরে নোয়াখালী জেলা জজ আদালতের বিজ্ঞ দায়রা জজ মো. আবদুল কুদ্দুস মিয়া এ রায় প্রদান করেন।

যাবজ্জীবন কারাদন্ডপ্রাপ্ত আসামীরা হলেন, নোয়াখালীর সোনাইমুড়ি উপজেলার দৌলতপুর গ্রামের আবদুল মোতালেবের ছেলে মো. বেলায়েত হোসেন প্রকাশ সাহাবউদ্দিন, একই গ্রামের আলমগীর হোসেন মাষ্টারের ছেলে মো. শাহজাহান মিরাজ প্রকাশ হিরণ, মৃত বসু সিকদারের ছেলে পলাতক আসামী জাহাঙ্গীর আলম, আবদুল ওয়াদুদ অদু মিয়ার ছেলে পলাতক আসামী নুরুল ইসলাম প্রকাশ নুরনবী।

মামলা ও আদালত সূত্র জানায়, নোয়াখালীর সোনাইমুড়ি উপজেলার পাশ্ববর্তী কুমিল্লা জেলার নাঙ্গলকোর্ট উপজেলার বাসিন্দা ও গাড়ির পার্টস ব্যবসায়ী মো. হুমায়ূন কবিরের একটি সিএনজিচালিত অটোরিকসা ভাড়ায় চালাইত হত্যার শিকার চালক ইয়াকুব। ২০১১ সালের ১৮ এপ্রিল সেনবাগ উপজেলার ছাতারপাইয়া ইউনিয়নের বসন্তপুর গ্রামের তেমুহনী সংলগ্ন মোমিন মাষ্টারের বাড়ীর পশ্চিম পাশে দন্ডপ্রাপ্ত আসামীরা পূর্বপরিকল্পিতভাবে যাত্রীবেশে সিএনজি অটোরিকসাটি ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্যে চালক ইয়াকুবকে ছুরিকাঘাতে গুরুতর জখম করে রাস্তার পাশে ফেলে দেয়। এরপর সিএনজি অটোরিকসাটি নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় পথিমধ্যে ছাতারপাইয়া বাজারের উত্তর পাশে স্থানীয় লোকজন রাস্তায় ব্যারিকেড দিয়ে অটোরিকসাটি সহ সাহাব উদ্দিন ও হিরনকে আটক করে। নুরুল ইসলাম ও জাহাঙ্গীর আলম নামের অপর দুইজন পালিয়ে যায়। স্থানীয় লোকজন গুরুতর আহত অবস্থায় চালক ইয়াকুবকে উদ্ধার করে স্থানীয় ইনসাফ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কতর্ব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

ঘটনার পর দিন ২০১১ সালের ১৯ এপ্রিল সিএনজি অটোরিকসাটির মালিক মো. হুমায়ূন কবির বাদী হয়ে চার জনকে আসামী করে সেনবাগ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। বুধবার ২৫ ফেব্রয়ারি দুপুরে আদালত উভয়পক্ষের আইনজীবীদের দীর্ঘ শুনানী, স্বাক্ষ্য প্রমাণ ও যুক্তিতর্ক শেষে আসামীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় আদালত তাদের যাবজ্জীন কারাদন্ড প্রদান করেন। রায়ের সময় আদালতে মো. বেলায়েত হোসেন প্রকাশ সাহাবউদ্দিন, মো. শাহজাহান মিরাজ প্রকাশ হিরণ উপস্থিত ছিলেন। অপর দুই আসামী জাহাঙ্গীর আলম ও নুরুল ইসলাম প্রকাশ নুরনবী পলাতক রয়েছে। তাদেরকে গ্রেফারের জন্য পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে মামলা পরিচালনা করেন, এডভোকেট এটিএম মহিব উল্লাহ (পিপি)। আসামীপক্ষে মামলা পরিচালনা করেন, এডভোকেট রফিকুল ইসলাম।



মন্তব্য চালু নেই