নেমে পড়ছি পুরুষাঙ্গ কর্তনে

গারো তরুণীকে মাইক্রোবাসে তুলে দেড় ঘণ্টা ধরে ধর্ষণ করে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। রাতভর তিন তিনটে থানা ঘুরে, সর্বশেষটিতে ওসির জন্য ঘণ্টা চারেক অপেক্ষা করে, আরো তিন ঘণ্টা বসে থেকে তারপর মামলা করতে পেরেছে মেয়েটি।

কনগ্র্যাচুলেশনস মেয়ে! মামলা করতে পারার জন্য অন্ততপক্ষে। পুলিশেরও ধর্ষণের ইচ্ছে জাগে। সুযোগ পেলে তারাও ধর্ষণ করে।
তুমি পাঁচ পুরুষের বিরুদ্ধে মামলা করতে গিয়েছো থানায়, সেখানে আরো দশটি পুরুষাঙ্গওয়ালার কাছে গিয়ে বিচার চাওয়ার সুযোগ চেয়েছো। এতো সহজে তুমি পার পেয়ে যাচ্ছো ক্যামনে?

১৪ই এপ্রিল থেকে ২২শে মে। মাস খানেকের মধ্যে ধর্ষণ করে করে সাড়া ফেলে দিলেন আমাদের পুরুষরা। পারফরমেন্স ভালোই! ধর্ষণ তো প্রতিনিয়তই হয়। পাটক্ষেতে, জঙ্গলে, পাকা বাড়িতে, অফিসে, হোটেলে, রান্নাঘরে, বাথরুমে, পাহাড়ে, বাগানে।

কোথায় নয়? বাদ ছিল এই মাইক্রোবাস। প্রতিবেশি দেশকে দুবেলা গালি দিয়ে আজ আমাদের বীর পুরুষরাই লুঙ্গি তুলে নেমে পড়লেন। এবার ধর্ষণ হবে বাসে, সিএনজি অটোরিক্সায়, টেম্পুতে, ট্রেনে, ফেরিতে।

এই ধর্ষকদের চিনতে পেরেছে মেয়েটি। পাহাড়ের কর্মঠ সাহসী মেয়ে বলেই হয়তো সে এতটা দৃঢ়চেতা আছে এখনও। সে তো কাজ করে খায়। সারাদিন পরিশ্রম করে। সন্ধ্যায় ক্লান্তশ্রান্ত বাড়ি ফিরে বাসে। নিম্ন আয়ের মেয়ে। দোকানে বিক্রয়কর্মী।

আগে থেকে তার ওপরে নজর রাখা পুরুষ, সঙ্গীসাথী নিয়ে তাকে মাইক্রোবাসে তুলেছে। একই এলাকায় ধীরে গাড়ি চালিয়েছে দেড় ঘণ্টা। আর পুরো সময়টা পাঁচজনে মিলে মেয়েটিকে ধর্ষণ করেছে।

এ ব্যাপারে আমাদের চেনামুখ পুলিশ কর্মকর্তারা কী বলবেন এবার? ব্যস্ত নগরী, রাজধানীর বুকে ভর সন্ধ্যায় একটা মেয়েকে তুলে নিয়ে ব্যস্ত সড়ক জুড়ে ঘুরে ঘুরে এই যে ধর্ষণ করা সম্ভব, এটা তো প্রমাণ করে দিলেন আপনাদের জাতভাইরা।

তো এ নিয়ে কী ভাবছেন? যাই ভাবছেন বলে দিন। টিভি ক্যামেরা রেডি আছে। রাতের বেলায় বউবাচ্চা সঙ্গে নিয়ে মুরগীর হাড় চিবাতে চিবাতে মন দিয়ে দেখবেন টিভিতে নিজের চেহারা।

বউ বলবে, ‘এ্যাই, কালও কিন্তু এই একই হলুদ শার্টটা পরে ইন্টারভিউ দিয়েছো। ভাল্লাগে না ছাই! উমম!!’ আপনি মধুর হেসে প্রতিশ্রুতি দেবেন যে কাল ঠিক নীল শার্টটা পরে যাবেন অফিসে। কালও তো ধর্ষণ হবে, যৌন নিপীড়ন হবে। তো ইন্টারভিউ নেয়া তো চলছেই। আপনি এখন টিভি স্টার।

তো আপনাদের ইন্টারভিউ চলতে থাকুক। আপনাদের কাছ থেকে আর কিছু পাওয়ার নেই আমাদের। তদন্ত, গ্রেফতার, চার্জশিট, বিচার, শাস্তি, ফাঁসি, যাবজ্জীবন… নাহ, আর কিছুই দিতে পারেন না আপনারা।

শুধু অপেক্ষায় আছি কবে হিজাব পরার, সংযমী হয়ে চলার, ‘মেয়েমানুষ মেয়ে মানুষ হয়ে’ থাকার উপদেশ আসবে আপনাদের কাছ থেকে।

আমি নিশ্চিত, এই উপদেশ আসবে শিগগিরই। যাই হোক, বসে থাকবো না আর। মেয়েকে স্কুলে পাঠাবো, নিজে অফিসে যাবো, রাস্তায় চলবো, পথে ঘুরবো, দোকানে-বাজারে-বাসে-ট্রেনে পুরুষাঙ্গধারীরা ধর্ষণ করতে এগোলে সঙ্গে রাখা ছুরি-কাচি-ব্লেড দিয়ে পুরুষাঙ্গ কেটে নেবো। মেয়েকে স্কুলে পাঠাবো অস্ত্রশস্ত্র দিয়ে সাজিয়ে গুছিয়ে।

আমাদের পিঠ ঠেকে গেছে। যদি জন্মেছিই এই দেশে, যেখানে নারীর প্রতি রাষ্ট্রেরও ন্যুনতম মর্যাদাবোধ, সম্মানবোধ নাই, সেখানে আর কী-ইবা করার আছে আমার? আমাদের?

এবার তবে নেমে পড়ছি পুরুষাঙ্গ কর্তনে। আর কোন বিকল্প নেই। আর হ্যাঁ, চোখ দিয়ে ধর্ষণ করবে যারা, সেই সব পুরুষকে বলছি, সাবধান হোন, খুঁচিয়ে চোখ তুলে উপড়ে নেবো এইবার!

( লেখক ও সাংবাদিক )



মন্তব্য চালু নেই