বাদীপক্ষের আইনজীবীর দাবি
নূর হোসেনের পক্ষে সরকারদলীয় আইনজীবীরা
নারায়ণগঞ্জের আলোচিত সাত খুনের মামলায় প্রধান আসামি নূর হোসেনের পক্ষে সরকারদলীয় আইনজীবীরা কাজ করছে বলে অভিযোগ করেছেন ওই মামলার বাদী পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন।
সোমবার সকাল পৌনে ১০টায় সাত খুনের ঘটনার মধ্যে দুই হত্যা মামলায় নূর হোসেনকে আদালতে হাজির করার পর দুপুরে সাংবাদিকদের কাছে এমন মন্তব্য করেন বাদী পক্ষের ওই আইনজীবী।
শুধু তাই নয়, নাম প্রকাশে অনিচ্ছিুক একাধিক আইনজীবীও দাবি করেছেন, আদালতে নূর হোসেনের সঙ্গে আওয়ামীপন্থি কয়েকজন আইনজীবীকে তারা কথা বলতে দেখেছেন।
বাদী পক্ষের আইনজীবী সাখাওয়াত হোসেন আরো অভিযোগ করেন, নূর হোসেনের পক্ষে সরকার দলীয় আইনজীবীরা কাজ করছে। কোর্টে পিপিকে যেভাবে পরিচালনা করতে দেখা গেছে তাতে মনে হয়েছে তিনি ‘বায়াস্ট’ হয়ে গেছেন। নতুন পিপি হিসেবে নিয়োগ দেয়া অ্যাডভোকেট ওয়াজেদ আলী খোকনের বক্তব্য ও আচরণ আসামি পক্ষের আইনজীবীর মতো। উনি আদালতকে জানিয়েছেন জামিন আবেদন করা সাঈদ বাদে বাকি ১২ জন নাকি সাক্ষী।
সাখাওয়াত হোসেন অভিযোগ করেন, পিপি ওয়াজেদ আলী জামিনের বিরোধীতা করে জোরালো বক্তব্য দেন নাই। বর্তমান পিপি, এপিপিদের বেশিরভাগই নূর হোসেনের পক্ষে বায়াস্ট হয়ে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি করার চেষ্টা করেছেন। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাই।
তবে সাখাওয়াত হোসেনের বক্তব্য অমূলক হিসেবে উল্টো অভিযোগ করেছেন পিপি ওয়াজেদ আলী খোকন।
এদিকে, নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট খোকন সাহা আদালতে উপস্থিত থাকলেও তিনি জামিনের পক্ষে কিংবা নূর হোসেনের পক্ষে কথা বলেননি। তিনি প্রকাশ্যে বলেছেন, ‘আমি কারো পক্ষে আদালতে আসি নাই।’
এর আগে গত ১২ নভেম্বর নূর হোসেনকে ভারত থেকে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়। পরদিন ১৩ নভেম্বর তাকে আদালতে তোলার সময় আওয়ামী লীগের অনেক আইনজীবীকে আদালতপাড়ায় দেখা যায়। শুনানিতেও তাদের উপস্থিতি ছিল।
এরপর ১৬ নভেম্বর সাত খুনের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করে নারায়ণগঞ্জ আইনজীবী সমিতির নেতারা। সংবাদ সম্মেলনে জেলা আইনজীবী সমতির সভাপতি ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক এবং বর্তমান আহ্বায়ক কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট আনিসুর রহমান দিপু বলেছিলেন, ‘যদি কোনো আইনজীবী কোনো আসামির পক্ষে মামলা পরিচালনা করতে চান তাহলে আমরা বাধা দিব না।’
নারায়ণগঞ্জ আইনজীবী সমিতির ১৭ পদের মধ্যে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ ১৩ পদেই আওয়ামীলীগ।
এদিকে, নিহত কাউন্সিলর নজরুল ইসলামের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম বিউটি বলেন, ‘যেভাবে আওয়ামী লীগের শীর্ষ আইনজীবীরা একজোট হয়েছেন তাতে করে ন্যায় ও সুষ্ঠু বিচার প্রাপ্তি নিয়ে আমরা সন্দিহান।’
উল্লেখ্য, ২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংকরোড থেকে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনর কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম, আইনজীবী চন্দন সরকারসহ সাতজনকে অপহরণ করার পর হত্যা করা হয়। তিনদিন পর তাদের লাশ পাওয়া যায় শীতলক্ষ্যা নদী থেকে।
নজরুলের শ্বশুর শহীদুল ইসলাম সে সময় অভিযোগ করেন, র্যাবকে ছয় কোটি টাকা দিয়ে সিদ্ধিরগঞ্জের আওয়ামী লীগ নেতা নূর হোসেন ওই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন।
হত্যাকাণ্ডের পর নিজের সংশ্লিষ্টতা অস্বীকার করলেও একপর্যায়ে ভারতে পালিয়ে যান নূর হোসেন। এরপর ২০১৪ সালের ১৪ জুন কলকাতার দমদম বিমানবন্দরের কাছে কৈখালি এলাকার একটি বাড়ি থেকে দুই সহযোগীসহ তাকে গ্রেপ্তার করে পশ্চিমবঙ্গের পুলিশ। তাদের বিরুদ্ধে অবৈধ অনুপ্রবেশের অভিযোগে মামলা হয়।
২০১৪ সালের ১৮ আগস্ট নূর হোসেন ও তার দুই সহযোগী ওহাদুজ্জামান শামীম এবং খান সুমনের বিরুদ্ধে চব্বিশ পরগনার বারাসাত আদালতে অভিযোগপত্র দেয় বাগুইআটি থানা পুলিশ।
নূর হোসেনের বিরুদ্ধে ভারত সরকারের দায়ের করা অবৈধ অনুপ্রবেশের মামলা তুলে নেয়ার আবেদন মঞ্জুর করে উত্তর চব্বিশ পরগণার অতিরিক্ত মুখ্য বিচারিক হাকিম সন্দীপ চক্রবর্তী। গত ১৬ অক্টোরবর তাকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর পথ তৈরি করে দেন।
মন্তব্য চালু নেই