নির্বাচনী নতুন জোট গঠনের ঘোষণা দিয়ে বিপাকে এরশাদ

নির্বাচনী নতুন জোট গঠনের ঘোষণা দিয়ে বিপাকে পড়েছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান সাবেক স্বৈরশাসক হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। তার এই ঘোষণার পর জোট গঠনতো দূরের কথা নিজ দলের মধ্যেই শক্তিশালী বিরোধিতা দেখা দিয়েছে। অন্যদিকে অপেক্ষাকৃত পরিচিত ‘ব্যক্তিনির্ভর’ যেসব দলকে জোটে টানার ব্যাপারে আশা করেছিলো জাতীয় পার্টি তারাও ঠিকমতো সাড়া দিচ্ছে না। এর চেয়ে নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধন নেই, অফিস নেই, কর্মী নেই- এমন অপরিচিত দলগুলো জাতীয় পার্টির নেতৃত্বে সম্ভাব্য জোটে ভিড়তে মরিয়া হয়ে উঠেছে বলে জানা গেছে।খবর পরিবর্তনের।

গত ২০ ফেব্রুয়ারি এরশাদ রংপুরে তার ভাই ও দলের কো-চেয়ারম্যান জিএম কাদেরকে পাশে রেখেই ঘোষণা দিয়েছিলেন যে তিনি আগামী নির্বাচন সামনে রেখে নতুন রাজনৈতিক জোট করবেন। এরশাদের ঘোষণার পর তার দলের মহাসচিব রুহুল আমীন হাওলাদারও জানিয়েছেন. তারা আগামী মার্চের মধ্যে একটি রাজনৈতিক জোট করতে চান।

কিন্তু এরশাদের ঘোষণার এক সপ্তাহ যেতে না যেতেই অনেকটাই বেঁকে বসেছেন জিএম কাদের। তিনি শনিবার বলেন, জোট হওয়ার মতো কিছুই এগুচ্ছে না। তেমন কোন দলও আসছে না। কিছু আসছে যেগুলোর কোনও অস্তিত্ব নেই। দু-একজন এসে বলছে, তাদের দল আছে; কিন্তু বাস্তবে এর কোনও ভিত্তি নেই।

তিনি বলেন, এখন এভাবে জোট গঠনের কোনও মানে নেই। এগুলো টিকবে না।

নিজের এ অবস্থান দলীয় ফোরামে জানিয়ে দিয়েছেন বলেও জানান জিএম কাদের।

জিএম কাদের আরও বলেন, যেসব দলের নির্বাচন কমিশনে রেজিস্ট্রেশন আছে এমন কোনও দল এখনও যোগাযোগ করেনি। যারা যোগাযোগ করছে তাদের কারও কোনও রেজিস্ট্রেশন নেই।

জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে যেসব রাজনৈতিক দলের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করে হচ্ছে সেগুলোর মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য হলো- এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন বিকল্পধারা, ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন গণফোরামের একাংশ, কাদের সিদ্দিকীর কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ, আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর নেতৃত্বাধীন জেপি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ-রব), চরমানাইয়ের পীরের নেতৃত্বাধীন ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনসহ বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)। এই সাথে আরও কিছু ছোট ছোট ইসলামী দল নিয়ে ১৫ দলীয় জোট গঠনের চেষ্টা চালাচ্ছে জাতীয় পার্টি।

আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর জাতীয় পার্টির (জেপি) সাথে জোটে আসা প্রসঙ্গে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান জিএম কাদের বলেন, তিনি আসলে আসতে পারেন। তার দলের রেজিস্ট্রেশন যদিও আছে তবে সারা দেশে ওভাবে অফিস-টফিস নেই। উনি ব্যক্তিগতভাবে আসলে ভিন্ন কথা।

জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক সম্পাদক মনিরুল ইসলাম মিলন বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী, উদার গণতান্ত্রিক, ইসলামী মূল্যবোধে বিশ্বাসী, সামাজিক ও রাজনৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য বিভিন্ন রাজনৈতিক দল নিয়েই আমাদের নেতা এই নির্বাচনী জোট গঠন করবেন। কোনো প্যাড-সর্বস্ব, অস্তিত্বহীন রাজনৈতিক দল এই জোটে থাকবে না।

জাতীয় পার্টির মহাসচিব এবিএম রুহুল আমীন হাওলাদার এ বিষয়ে বলেন, আমরা ১৪ দলীয় মহাজোট নিয়ে এখন আর কিছু ভাবছি না। মার্চে আমরা নতুন জোটের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেব।

এই মুহূর্ত তারা ছোট ছোট রাজনৈতিক দলের সাথে যোগাযোগ করছেন- জানিয়ে রুহুল আমীন হাওলাদার বলেন বিকল্পধারা, সিপিবি, গণফোরামের মতো দলের সাথে যোগাযোগের জন্য তারা নিজেদের প্রস্তুত করছেন। আগে তারা নিজেদের ভীত শক্ত করতে চান বলেও উল্লেখ করেন রুহুল আমীন হাওলাদার।

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বলেন, আমরা এ বিষয়ে এখনও চিন্তা করিনি। তিনি বলেন, আমারতো স্বচ্ছ রাজনীতি করি, তবে যেতুটু ভূমিকা রাখার রাখবো। এরশাদের জোটে যোগ দেওয়ার সম্ভবনা আছে কিনা- জানতে চাইলে তিনি বলেন, আপাতত আমি যা বলার বললাম। সেক্ষেত্রে প্রস্তাব আসলে নাকচ করছেন না? এমন প্রশ্নেও এড়িয়ে যান কাদের সিদ্দিকী।

এরশাদের জোট গঠনের বিষয়ে মন্তব্য চাইলে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, ‘আমরা কি আওয়ামী লীগ বা বিএনপি নাকি? ওদের সাথে যোগ দেবো কিনা- এটা আমাদের কেউ জিজ্ঞাসা করলেই লজ্জা পাই। সে তো একটা বিশ্ব বেহায়া।’

এদিকে গত ১৯ ফেব্রুয়ারি আলমগীর মজুমদারের নেতৃত্বে ‘ডেমোক্র্যাটিক অ্যালায়েন্স’ নামে একটি রাজনৈতিক মোর্চা আত্মপ্রকাশ করেছে। জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে গঠিত এ জোটের শরীক দল ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি, জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক দল, বাংলাদেশ ইসলামিক পার্টি, ন্যাশনাল কংগ্রেস, বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক আন্দোলন, ন্যাশনাল লেবার পার্টি, আম জনতা পার্টি ও স্বাধীনতা পাটি। পর্দার আড়াল থেকে এসব দলকেও এরশাদের নেতৃত্বের দিকে আনার চেষ্টা চলছে বলে জাতীয় পার্টি সূত্রে জানা গেছে। এসব দলের একাধিক নেতা আগে ২০-দলীয় জোটে ছিলেন।



মন্তব্য চালু নেই