নিজামীর সময় আবেদন খারিজ, শুনানি শুরু
মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াতে ইসলামীর আমীর মতিউর রহমান নিজামীর সময় আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন আপিল বিভাগ।
প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এসকে) সিনহার নেতৃত্বে চার সদস্যের একটি বেঞ্চ বুধবার সকালে এ আবেদন খারিজ করে দেন। রাষ্ট্রপক্ষে প্রথমে শুনানি করেন এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। বেঞ্চের অন্য সদস্যরা হচ্ছেন— বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ও বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী।
মামলাটির শুনানির জন্য সিরিয়ালে আসলে নিজামীর পক্ষের কোনো আইনজীবীকে আদালতে উপস্থিত দেখা যায়নি। কিছু সময় পর নিজামীর আইনজীবীদের আদালতে প্রবেশ করতে দেখা যায়।
এদিকে আসামি পক্ষের আইনজীবীরা আদালতে উপস্থিত না হওয়ায় রাষ্ট্রীয় প্রধান আইন কর্মকর্তা এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমকে এই মামলার আপিলের পেপার বুক পড়তে বলেন আদালত।
এ মামলায় আসামি পক্ষের প্রধান আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেনের ব্যক্তিগত অসুবিধার কথা উল্লেখ করে আবেদনটি করা হয়েছিল। এর আগে নিজামীর করা আপিলের সারসংক্ষেপ জমা দেওয়ার জন্য রাষ্ট্র এবং আসামি উভয়পক্ষকে নির্দেশ দেন আদালত। মামলার সারসংক্ষেপ জমা দেওয়ার পর নিয়মানুযায়ী আপিল শুনানি শুরু হওয়ার কথা।
মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে গত বছরের ২৯ অক্টোবর চেয়ারম্যান বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম, বিচারপতি আনোয়ারুল হক ও বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১ নিজামীকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন।
এ রায়ের বিরুদ্ধে ২০১৪ সালে ২৩ নভেম্বর আপিল করেন নিজামী। ৬ হাজার ২৫২ পৃষ্ঠার আপিলে ১৬৮টি কারণ দেখিয়ে ফাঁসির আদেশ বাতিল করে খালাস চেয়েছেন তিনি।
তবে আসামির সর্বোচ্চ সাজা হওয়ায় আপিল করেননি রাষ্ট্রপক্ষ।
আপিল শুনানিতে নিজামীর পক্ষে নেতৃত্ব দেবেন তার প্রধান আইনজীবী এ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন। আসামি পক্ষের এ্যাডভোকেট অন রেকর্ড হচ্ছেন জয়নুল আবেদিন তুহিন।
চলতি বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি নিজামীর আপিলের সার-সংক্ষেপ দুই সপ্তাহের মধ্যে দাখিলের জন্য রাষ্ট্র ও আসামি পক্ষকে নির্দেশ দিয়েছিলেন আপিল বিভাগ।
নিজামীর বিরুদ্ধে বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড এবং হত্যা-গণহত্যাসহ সুপিরিয়র রেসপন্সিবিলিটির (ঊর্ধ্বতন নেতৃত্বের দায়) ১৬টি মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়। এর মধ্যে ৮টি অর্থাৎ ১, ২, ৩, ৪, ৬, ৭, ৮ ও ১৬ নম্বর অভিযোগ প্রমাণিত হয় ট্রাইব্যুনালের রায়ে।
প্রমাণিত চারটি অর্থাৎ সাঁথিয়া উপজেলার বাউশগাড়িসহ দু’টি গ্রামে প্রায় সাড়ে চারশ’ মানুষকে গণহত্যা ও প্রায় ৩০-৪০ জন নারীকে ধর্ষণ (২ নম্বর অভিযোগ), করমজা গ্রামে ১০ জনকে গণহত্যা ও একজনকে ধর্ষণসহ বাড়ি-ঘরে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ (৪ নম্বর অভিযোগ), ধুলাউড়ি গ্রামে ৫২ জনকে গণহত্যা (৬ নম্বর অভিযোগ) এবং বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড ও সুপিরিয়র রেসপন্সিবিলিটির (১৬ নম্বর অভিযোগ) দায়ে নিজামীকে ফাঁসির আদেশ দেওয়া হয়। অন্য চারটি অর্থাৎ পাবনা জিলা স্কুলের প্রধান শিক্ষক মাওলানা কছিমুদ্দিন হত্যা (১ নম্বর অভিযোগ), মোহাম্মদপুরের ফিজিক্যাল ট্রেনিং ইনস্টিটিউটে পাকিস্তানী সেনা, রাজাকার ও আলবদর বাহিনীর ক্যাম্পে নিয়মিত যাতায়াত ও মানবতাবিরোধী অপরাধের ষড়যন্ত্র (৩ নম্বর অভিযোগ), বৃশালিখা গ্রামের সোহরাব আলী হত্যা (৭ নম্বর অভিযোগ) এবং রুমী, বদি ও জালালসহ সাত গেরিলা যোদ্ধা হত্যার প্ররোচনার (৮ নম্বর অভিযোগ) দায়ে তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল।
৫ এবং ৯ থেকে ১৫ নম্বর অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় এসব অভিযোগ থেকে খালাস পেয়েছেন তিনি। এগুলোও ছিল হত্যা-গণহত্যা, আটক, অপহরণ, নির্যাতন, বাড়ি-ঘরে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ এবং বক্তৃতা-বিবৃতির মাধ্যমে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনের উস্কানি ও প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগ।
মন্তব্য চালু নেই