নারী শিক্ষার মহাবিদ্যালয়টির জাতীয়করণ চায় এলাকাবাসী

হামিদা আক্তার, নিজস্ব প্রতিনিধি : শিক্ষাই জাতীর মেরুদন্ড। ” আমাকে একজন শিক্ষিত মা দাও, আমি তোমাদের একটা শিক্ষিত জাতি উপহার দেব।” ন্যাপলিয়নের এই বহুল প্রচলিত প্রবাদটি হৃদয়ে আঁকড়ে ধরে স্থানীয় প্রশাসন, রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ, জনপ্রতিনিধি এবং বিভিন্ন পেশাজীবী মানুষ স্বতঃস্ফূর্ত সহযোগিতার মাধ্যমে সে দিন ডিমলা উপজেলার প্রাণ কেন্দ্রে২.২৬ একর জমির উপরে মনোরম পরিবেশে গড়ে তুলেছেন ডিমলা মহিলা মহাবিদ্যালয়টি। একজন শিক্ষিত মা উপহার দিতে পারে একটি সুশিক্ষিত জাতি। এ লক্ষ্যকে সামনে রেখে এবং নারী শিক্ষার প্রসারের উদ্দেশ্যে ১৯৯৮ সালে পহেলা জুন প্রতিষ্ঠা করা হয় এই নারী শিক্ষার জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠিানটি।

বলা যায়, উত্তরাঞ্চলের একেবারেই সীমান্তবর্তী নীলফামারীর জেলার নারী শিক্ষায় পিছিয়ে পড়া একটি উপজেলার নাম ডিমলা। জেলা সদর থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এ উপজেলায় ইউনিয়ন রয়েছে ১০টি। এর মধ্যে ৫টি ইউনিয়নের অধিকাংশ মানুষ প্রতিবছর তিস্তা নদীর ভাঙ্গন ও বন্যায় অপূরণীয় ক্ষতির শিকার হয়।

এক সময় এ উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের বিশেষ করে তিস্তা নদী পাড় ও চরাঞ্চলের মেয়েদের মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের গন্ডি পার হতে না হতেই বিয়ে দেয়া হতো। কিন্তু নারী শিক্ষার এই প্রতিষ্ঠান মহিলা মহাবিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার পর থেকে আগের সে অবস্থার আমুল পরিবর্তন হয়েছে। শিক্ষিত হচ্ছে গ্রামাঞ্চল ও তিস্তা দ্বীপ চরের মেয়েরাও ছাত্রী নিবাসে থেকে উচ্চ শিক্ষা গ্রহনের সুযোগ পাচ্ছে।

মহাবিদ্যালয়টির প্রতিষ্ঠাতা লগ্নে অধ্যক্ষ ছিলেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ প্রফেসর মোহাম্মদ জাকারিয়া। নারী শিক্ষার এই প্রতিষ্ঠানটির সভাপতি ও প্রধান পৃষ্ঠপোষক ছিলেন তৎকালীণ সময়ের সৎ, কর্তব্য পরায়ন, ন্যায়নিষ্ঠাবান ও শিক্ষানুরাগী উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা মোঃ আলেফ উদ্দিন। প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষের মৃত্যুর কিছুদিন পরেই অধ্যক্ষ হিসেবে যোগদান করেন মোঃ মোখলেছুর রহমান। তিনিই বর্তমানে নারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটিকে নিবির পরিচালনায় এগিয়ে নিয়ে চলেছেন।

একান্ত আলাপকালে তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, প্রতিষ্ঠানটিতে বর্তমানে উচ্চ মাধ্যমিক ও ¯œাতক শ্রেণিতে ৮শ ৫০জন শিক্ষার্থী রয়েছে। ফলাফলে দিক থেকে অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের চেয়ে তুলনামুলক ভাবে বরাবরই অনেক ভালো করে এসেছে। প্রতিষ্ঠানটিতে এমপিও ভুক্ত ৩০ জনসহ শিক্ষক-কর্মচারী রয়েছে ৫২ জন।

প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালে মহাবিদ্যালয়টি উপজেলার শ্রেষ্ঠ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মর্যাদা অর্জন করে। প্রতিষ্ঠানটিতে দূর-দূরান্তের শিক্ষার্থীদের থাকার জন্য আবাসিক ক্যাম্পাসের ভিতরে শিক্ষার মনোরম পরিবেশে রয়েছে ৬০ আসন বিশিষ্ঠ পাকা (টিনসেট) ছাত্রীনিবাস।

প্রতিষ্ঠানটির ছাত্রীেিদর নিরাত্তার চাদরে ঢাকতে পুরো প্রতিষ্ঠানের চারিদিকে উচু পাকা প্রাচীরে ঘেরা রয়েছে মহাবিদ্যালয়টি, শিক্ষার্থীদের মানস্মমত শিক্ষার পরিবেশে শ্রেণিকক্ষ, খেলার মাঠ, পুকুর, ছাত্রী ও শিক্ষকদের পৃথক বিশ্রামাগার, কম্পিউটার ল্যাব, বিজ্ঞানাগার, পাঠাগার, ছাীত্রদের স্বতন্ত্র নামাজ আদায়ের মসজিদ ও চারতলা বিশিষ্ট একাডেমিক ভবনসহ ফুল বাগান,সারিবদ্ধ সবুজ বৃক্ষ।

এছারাও রয়েছে প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব তহবিলে নির্মাণাধিন বড় একটি অডিটরিয়াম। যেখানেই প্রতিষ্ঠানের সকল শিক্ষার্থীদের নিয়ে এক সাথে নানা অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। ডিমলা মহিলা মহাবিদ্যালয়টি ওই সময় গড়ে তোলা না হলে এ উপজেলার নারীদের উচ্চ শিক্ষার হার অনেক পিছনে পড়তো বলেও অনেকে ধারনা করছেন।

মহাবিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ পর্যন্ত একাধিক দেশ বরেণ্য ব্যক্তিবর্গের আগমন ঘটেছে প্রতিষ্ঠানটিতে। এসব বরেণ্য মানুষের মধ্যে বর্তমান সরকারের বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, সাবেক যোগাযোগপ্রতিমন্ত্রী আনিছুল হক চৌধুরী, তত্তাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা আবদুল মুহিত চৌধুরী, দিনাজপুর শিক্ষাবোর্ড চেয়ারম্যান প্রফেসর আহমেদ হোসেনসহ সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের উচ্চ পদ মর্যাদার কর্মকর্তা রয়েছেন এবং একাধিক গুনিজন। তাঁরা প্রত্যেকেই মহাবিদ্যালয়টি পরিবেশ, পড়া-লেখার গুনগতমান ও শিক্ষার্থীদের সংখ্যা নিয়ে ভূয়সী প্রশংসার পাশাপাশি এর উন্নতি কামনা করেছেন।

সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ডিমলা মহিলা মহাবিদ্যালয়কে জাতীয়করণের ঘোষণা দিয়েছেন। উপজেলার বিভিন্ন স্তরের মানুষের সাথে কথা বলে জানাগেছে, প্রধানমন্ত্রীর এ ঘোষণায় এলাকার নারী নেত্রী, আবাল,বৃদ্ধ,বনিতা থেকে শুরু করে সর্বস্তরের পেশাজীবী শ্রমজীবী, জনপ্রতিনিধি, রাজনীতিক, বিশেষ করে নারীরা মহা-আনন্দিত। এ কারনে প্রধানমন্ত্রীকে গভীির শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় ধন্যবাদ জানানোর পাশাপশি তাঁর এ ঘোষণার দ্রুত বাস্তবায়ন দাবী করেছেন এলাকাবাসী।



মন্তব্য চালু নেই